পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল(আইএমএফ)’র কাছে চাওয়া ঋণ নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে। অবশেষে ৫টি শর্তে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়ে হয়েছে আইএমএফ। আগামী ৪২ মাসের মধ্যে ৭টি কিস্তিতে ২.২ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। দেশের অর্থনীবিদরা কঠিন শর্তে ঋণ নেয়ার বিপক্ষে মত দিলেও বিদ্যমান শর্তগুলো কঠিন কিংবা অবাস্তব কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে এ খাতে ভতুর্কি কমানোর মত শর্ত সরকার আগেই মেনে নিয়ে ৫১ শতাংশের বেশি জ্বালানির মূল্য বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নতুন ভ্যাট আইন, রাজস্ববৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক মূদ্রানীতি চালুর মত শর্তগুলো কোনো নতুন প্রস্তাব নয়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রস্তাব ও তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অর্থাৎ আইএমএফ’র বেশিরভাগ শর্ত সরকার আগেই নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে। তবে ব্যাসেল-৩ এর আওতায় আইএমএফ’র শর্তানুসারে দেশের ব্যাংকিং খাতের উপর কঠোর বিধি বিধান চাপিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি গণ্য করার শর্ত নিয়ে ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় অনেক দেশই সংকটে রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি ও ডলার সংকটের কারণে জরুরি আমদানি ব্যয় মেটাতে দেশে মাত্র সাড়ে তিন মাসের রিজার্ভ রয়েছে। এদিকে রফতানি বাণিজ্যের বিপরীতে অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানা যাচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের রফতানিখাতে উৎপাদনশীলতা মার খাচ্ছে এবং বড় ধরণের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রেমিটেন্স আয়ের অন্যতম প্রধান খাত বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। করোনাত্তোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতার পাশাপাশি নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্ধিত মূল্যে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির জন্য অতিরিক্ত অর্থের সংস্থানসহ জরুরি নির্বাহ করতেই সরকারকে আইএমএফ-এর শরনাপন্ন হতে হয়েছে। একটি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির পথ অবারিত করতে আইএমএফ প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে সরকারের প্রতিনিধি, দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনদের মত বিনিময়ের পর তুলনামূলক সহজ শর্তে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে আগামী বছরের ফেব্রæয়ারিতে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৬ কোটি ডলার ছাড়ের কথা রয়েছে। আইএমএফ ’র ঋণ জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তিদায়ক ঘটনা। অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা এ জন্য ধন্যবাদার্হ।
এবার একটি কঠিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে আইএমএফ থেকে এই ঋণ পাওয়া গেল। এটি বাংলাদেশের জন্য এককালীন আইএমএফ’র সর্বোচ্চ ঋণ। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে একটি চরম অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের মুখে প্রথম আইএমএফ’র ঋণ সহায়তা গ্রহণ করেছিল। অর্ধশতাব্দী পরেও বাংলাদেশকে আইএমএফ’র ঋণ সহায়তা নেয়ার বাস্তবতা সুখকর না হলেও প্রস্তাবিত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় আইএমএফ রাজি হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। দেশের অর্থনীতিবিদরা আইএমএফ ঋণের হাত ধরে আসা সংস্কারের শর্তগুলোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। সরকারের নিজস্ব সংস্কার পরিকল্পনায় এসব প্রস্তাব থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও আর্থিক খাতে নানাবিধ অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ও অস্বচ্ছতা বিরাজ করছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এসব অস্বচ্ছতার দায় অনেক বেশি। আর্থিক খাতের প্রত্যাশিত সংস্কার ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, এবার আর্থিক খাতের সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। বিশেষ সময়ে প্রাপ্ত আইএমএফ’র ঋণ সহায়তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু আইএমএফ’র ঋণে তা সম্ভব নয়। পাইপলাইনে থাকা বিভিন্ন সংস্থার ও ঋণ ও সহায়তা তহবিল ছাড় করিয়ে বিনিয়োগে কাজে লাগাতে হবে। দেশের শিল্প ও কৃষিখাতের উৎপাদনশীলতা, রফতানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের রেমিটেন্স আয় বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বান্ধব বিনিয়োগে বেশি জোর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।