গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, দেশ এবং সমাজে ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, মাদকসহ নানা ধরণের অপরাধ বাড়ছে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ, আমলা, বড় বড় ব্যবসায়ী এবং শিক্ষকরা এর সাথে জড়িত। নারীরাও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তারা তাদের সন্তানকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই সময়ে সমাজে আলোকবর্তিকা হিসেবে আলেমদেরই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে আলেম-ওলামাদের সুদিন আসছে, সঙ্কটে নিপতিত ও পঁচে যাওয়া এই সমাজ পুনর্গঠনে আগামী দিনে তাদেরকেই ঘর থেকে ডেকে ডেকে দায়িত্ব দেয়া হবে। সেই সময়ের জন্য এখন থেকেই সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, নিজেদের তৈরি করতে হবে।
বুধবার (০৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরতে গিয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, আজকে মাদরাসার প্রশাসনিক কাজে একজনও আলেম নেই। এই দর্শনটা আগে থেকেই ছিল, এখন এটিকে আরও মজবুত করা হয়েছে। কিন্তু যারা এটা করছেন তারা আগামীতে থাকবেন না। মাদরাসা থাকবে, ইসলামী শিক্ষা থাকবে, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আরও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, যারা এখন এসব করছে তারাই সামনের দিনে আলেমদের ডেকে ডেকে দায়িত্ব দিবে। সেই সময়ের জন্য আমরা তৈরি কিনা সেটা এখন ভাবতে হবে। এজন্য আলেমদের প্রস্তুত করতে হবে, মাদরাসায় ছাত্রছাত্রী বাড়াতে হবে। সমস্ত শিক্ষককে সাথে নিয়ে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র কিভাবে ঠিক থাকবে সেটা নিয়ে কিভাবে কাজ করতে পারি ভাবতে হবে। দরবারগুলোর সাথে সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে। সামনে সুদিন আসছে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র যারা করার তারা তাদের কাজ করুক আমরা আমাদের কাজ করি। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে অতীতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে জমিয়াত এগিয়ে গেছে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আলেম-ওলামাদের এখন ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, সময়ের কারণে এখন তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি বলেন, এই আলেম-ওলামাগণই সমাজ গঠনে বিনা স্বীকৃতিতে কাজ করছেন। তারা নৈতিকতা সম্পন্ন এমন মানুষ তৈরি করছেন যারা সরকারি-বেসরকারি ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রীরা যোগ্য মা হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্তদের গুরুত্ব ও ভূমিকার কথা তুলে ধরে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান যখন পারমানবিক বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তখন তারা অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, বিজ্ঞানী, শিক্ষকদের নিযুক্ত করেছিল। আজকে জাপানের যে উত্থান সেটার পেছনে সেই অবসরপ্রাপ্তদের অবদান ছিল। তাদের সেই কৌশল ৭০’র দশকে অনুসরণ করে চীন। চীন আবার জাপানের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এনে তাদেরকে কাজে লাগিয়ে টেকনোলজিতে সমৃদ্ধ হয়ে এখন জাপানের চেয়ে এগিয়ে গেছে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনেও অভিজ্ঞদের সমাজ ও ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জমিয়তে অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছেন, যারা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতায় সমৃদ্ধ। তাদের কাজে লাগাতে হবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধু বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য বার্গেনিং এজেন্ট না। এটা আলেম-ওলামাদের তাহজিব, তামাদ্দুন, ইসলামী শিক্ষা, ভাবধারা, মূল ধারা ঠিক রাখার জন্য একটি সংগঠন।
বিশ্বব্যাপীই ক্ষমতার পুনর্গঠন হচ্ছে এবং মুসলমানরা শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে জমিয়াত সভাপতি বলেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের সম্পদ ও ক্ষমতা পুননির্ধারণ হচ্ছে। আগামী দিনের অর্থনীতি চলবে সেটি নতুন ধারা চালু হচ্ছে। কয়েকজন ব্যক্তিই এটি করছে। আমেরিকান-ইউরোপিয়ানরা চীন-রাশিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন না, তারা উদ্বিগ্ন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে।
তিনি বলেন, মুসলমানরা এখন সম্পদে ক্ষমতায় শক্তিশালী হচ্ছে। গত ৬-৭ মাসে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার রিজার্ভ হয়েছে। আগামী ২ বছর পর আরও সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার তাদের অতিরিক্ত আসবে। গত কয়েকবছর ধরে বলা হচ্ছিল তুরস্কের অর্থনীতি ভেঙে চুরে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে ডলারের বিরুদ্ধে সমস্ত দেশের এমনকি যুক্তরাজ্যের মুদ্রাও যখন পড়ে গেছে তখন কিন্তু লিরার দাম বেড়ে গেছে। এরদোগান আরও শক্তিশালী হয়েছে সম্পদে, ক্ষমতায় এবং পলিসিতে। বিশ্বব্যাপী আল্লাহ তা’আলা সম্পদ মুসলমানদের হাতে দিয়ে দিয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রাকৃতিক এতো সম্পদ দিয়ে দিয়েছে। এখন এগুলো কাজে লাগছে।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বিশ্বে এখন যারা শক্তিশালী হচ্ছে তারা সকলেই সুন্নী ধারার। বাংলাদেশেও সুন্নীদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ২০০৫ সালে বলেছিলাম জামায়াতে ইসলামীর সাইনবোর্ড বাংলাদেশে থাকবে না। ওই ধারা আর এখানে আসবে না। পাকিস্তানে ইমরান খান, আফগানিস্তানে তালিবানরা হানাফি, মধ্য এশিয়াতে সবগুলো রাষ্ট্রই হানাফি, চেচেন ও তাজিকিস্তানের মুসলমানরা সুন্নি, পুরো আফ্রিকান সুন্নী, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো সুন্নী ধারার। পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ এই অঞ্চলে যারা উগ্রতার ধারা সৃষ্টি করেছিল তারা এখন আর নেই। সিরিয়াতে আসাদকে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে এরদোগানের সাথে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, মাদরাসা শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের যেসকল দাবি-দাওয়া ছিল তার সবই জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃত্বে পূরণ হয়েছে। এখন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে না, সংযুক্ত মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে না। এগুলোও সামনের দিনে পূরণ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই সংগঠন ওলিদের সংগঠন। এর নেতারা পরীক্ষিত। তাই অনেকে জমিয়াতের নেতাদের নানারকম প্রলোভন দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। দেশের সকল পর্যায়ের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ আমাদের সাথে আছেন। সকলে মিলে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবো।
ঢাকা মহানগর জমিয়াতের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় জমিয়াতের দপ্তর সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা ইজহারুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- মহানগর জমিয়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো. ছাদেক হাসান।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় জমিয়াতের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি মাওলানা রুহুল আমীন খান, ঢাকা মহানগর জমিয়াতের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা মো. তাজুল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. ইদ্রিস খান, ঢাকা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মোঃ ছালেহ্, ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম আল-মারুফ, শাহ্ মো. মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, অধ্যক্ষ মাওলানা রেজাউল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা শরিফ মো. আবু হানিফ, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো. হেলাল উদ্দীন, নরসিংদী জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু রায়হান চৌধুরী, গাজীপুরের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল হক, ভোলা জেলার সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা জাহাঙ্গির আলম মজুমদার, উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল বাতেন, ঢাকা নেছারীয়া কামিল মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা এ কে এম আব্দুল ওয়াদুদ, সবুজবাগ থানার সভাপতি মাওলানা মো. ওয়ালীউল্লাহ হেলালী।
অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ আ খ ম আবু বকর সিদ্দিককে সভাপতি, অধ্যক্ষ আবু জাফর মো. ছাদেক হাসনকে সেক্রেটারী ও অধ্যক্ষ ইজহারুল হককে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১০৭ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহাগনরী কমিটি গঠন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।