পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং মিয়ানমারের জঙ্গিবিমান ও হেলিকপ্টারের বার বার সীমান্ত লঙ্ঘন, মর্টার সেল ও গুলি নিক্ষেপে বাংলাদেশ অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এমনকি বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার মত ঘটনার পরও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষিরা পাল্টা হামলা করেনি। বরং সীমান্ত এলাকা থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রসহ লোকজন সরিয়ে নিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রæতি থেকে সরে গিয়ে সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের নামে বাংলাদেশের সাথে উস্কানিমূলক আচরণ করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এখন বাংলাদেশের কাছে হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিশেষ অভিযান এবং উগ্রবাদী বৌদ্ধদের জাতিগত নিপীড়ণ ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহŸানে এবং মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদেয় আশ্রয় দেয়ার পর থেকেই তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও চীনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করে সরকার। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের কয়েক মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি করলেও মিয়ানমার তা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো গত এক মাস ধরে সীমান্তে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাÐের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে। মূলত চীনের মধ্যস্থতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টির একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিল বাংলাদেশ।
আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে মিয়ানমার বাহিনী বার বার বাংলাদেশ সীমান্ত লঙ্ঘন করে চলেছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে এক ডজনের বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশের সীমানায় আরাকান আর্মি, আরসা বা অন্যকোনো সশস্ত্র গ্রæপের কোনো তৎপরতা বা অবস্থানের তথ্য প্রমান কারো কাছেই নেই। এহেন বাস্তবতায় মিয়ানমার বাহিনীর সীমান্ত লঙ্ঘন ও গোলাগুলিতে সন্ত্রস্ত অবস্থা সৃষ্টিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সব সময়ই শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নিরসনের পক্ষপাতি। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের কাছে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের ব্রিফিংয়ে চীনের কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও গত সোমবার চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সাথে দেখা করেন। মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবেন এবং মিয়ানমারের সাথে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য জোর সুপারিশ করবেন বলে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে আশ্বস্ত করেছেন।
করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়নের শুরুতেই ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে একটি জটিল আবর্তে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিয়মান হচ্ছে, বড় ধরণের ভূরাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ, সাদা চামড়ার খ্রীষ্টান না হলে পশ্চিমা বিশ্বকে কোনো মানবিক ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। রোহিঙ্গা ইস্যু তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে তারা শুধু লিপ সার্ভিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এ সমস্যার সমাধান চায় না। দুঃখের বিষয়, ওআইসির মত মুসলিম উম্মাহর আন্তর্জাতিক সংস্থারও উদ্যোগী ভূমিকা দেখা যায় না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও তার কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। আমরা বরাবরই বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি উদ্যোগী হলে এ সমস্যা সহজে সমাধান হওয়া সম্ভব। মিয়ানমারে যেমন চীনের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশও চীনের অন্যতম বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে স্থিতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য। মিয়ানমারের কারণে অস্থিতিশীলতা বিনষ্ট হলে, তা তার জন্যই সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সর্বোপরি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বিঘœ ঘটবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। চীন বাংলাদেশের পরিক্ষিত বন্ধু। তবে রোহিঙ্গা প্রশ্নে তার কার্যকর ভূমিকা ও আন্তরিকতা দৃশ্যমান নয়। এ প্রেক্ষিতে, চীনের উচিৎ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সত্যিকারের উদ্যোগ নেয়া। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনÑএই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে কিভাবে দ্রæত সমস্যার সমাধান করা যায়, এ ব্যাপারে রোডম্যাপ তৈরি করা। আমরা আশা করব, আঞ্চলিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ অগ্রযাত্রার স্বার্থে মিয়ানমারের সীমান্ত সংঘাত, বাংলাদেশের সীমান্ত লঙ্ঘন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে স্থায়ী ও টেকসই সমাধানে চীন সরকার তার যথযথ ভূমিকা পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।