পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের কাছ থেকে আমরা কিছু না পেলেও আমাদের কাছে ভারতের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। ইতোমধ্যে ভারত আমাদের কাছ থেকে তার প্রায় সব চাওয়া আদায় করে নিয়েছে। আমরাও অকাতরে তা দিয়ে দিয়েছি। বিনিময়ে আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে থাকা পানির ন্যায্য হিস্যাটুকু পাইনি। এক তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত নানাভাবে টালবাহানা করছে। নানা ছলে চুক্তিটি ঝুলিয়ে রেখেছে। তার ভাবটা এমন, চাহিবা মাত্র তাকে সব দিয়ে দিতে হবে। আমাদের সরকারের মধ্যেও এমন প্রবণতা বিদ্যমান, ভারত বন্ধুরাষ্ট্র, বন্ধুত্বের নির্দশন স্বরূপ তার চাহিদা পূরণ করা উচিত। ভারত আমাদের কী চোখে দেখে, বন্ধু ভাবে কিনা, তা সরকার একবারও ভাবে বলে মনে হয় না। সরকার যদি দশবার বলে ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব স্বর্ণশিখরে, অন্যন্য উচ্চতায়, এর বিপরীতে ভারত সৌজন্যবশত শুধু বলে, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। দেশটি যে তার প্রভুত্ব মেনে নেয়ার জন্য আমাদের নানাভাবে বুঝিয়ে দেয়, তা তার নেতাদের কথা থেকে বুঝতে বাকি থাকে না। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ অন্যান্য নেতা বছরের পর বছর ধরে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর ও হুমকিমূলক কথা বলে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করা হয় না। এই প্রতিবাদ না করাকে আমাদের প্রতি ভারতের প্রভুত্ববাদী মনোভাবকে প্রকারন্তরে মেনে নেয়ার শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের সফরে ভারত যান, তার শেষ দিন গত ৮ সেপ্টেম্বর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন, তা দেশটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মন্তব্যের ধারাবাহিকতা। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশকে একীভূত করে নেয়ার কথা বলেছেন। এ ধরনের বক্তব্য বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকরা করে আসছেন। ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সাবেক নেতা তোগাড়িয়া বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের একাংশ দখল করে নিয়ে সেখানে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ থাকার বন্দোবস্ত করা। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এক কোটি বাংলাদেশিকে বিতাড়ন করা হবে। ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রানাওয়াত বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবেই পাকিস্তান উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে মদদ দিচ্ছে। আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতকে পাকিস্তান দখলে নিতে চায়। তাই বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের নিয়ে আসামের জেলাগুলো ভরে দিচ্ছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। দুঃখের বিষয়, এসব বক্তব্যের কোনো ধরনের প্রতিবাদ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
দুই.
২০১৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেন যেকোনো সমস্যা দ্রæত ভারতকে জানায়। তার কথার অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা হলে সে দ্রæত এসে সমাধান করে দেবে। অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করবে না। অভিজিৎ মুখার্জির বক্তব্যে সে সময় সচেতন ব্যক্তিদের অনেকে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘জানানোর কি আছে দাদা! আমাদের আগেতো আপনারাই জানেন আমাদের সমস্যা। আপনাদের জানার জন্য তো আমরা সব খুলে বসে আছি। আপনার আর কিছু লাগবে কিনা বলেন, আমরা গিয়ে দিয়ে আসবো, আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। ঋণ শোধ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।’ অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদেরকে তো ঋণে ঋণে জর্জরিত করে ফেলেছেন দাদা ভাইরা। এই ঋণ শোধ করতে করতে আমরা শুকিয়ে যাচ্ছি।’ দেশের মানুষের এমন মনোভাব সরকারের না বোঝার কারণ নেই। তারপরও প্রতিবাদ করে না, ভারতের কাছ থেকে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি পাওয়ার জন্য। এই গ্যারান্টির নমুনা আমরা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখেছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসে কীভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার গ্যারান্টি দিয়ে গিয়েছিল, তা দেশের জনগণ দেখেছে। জাতি হিসেবে এ ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। অন্যদিকে ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণ এবং তার প্রতি সরকারের অতি কৃতজ্ঞ আচরণে দেশের মানুষ ক্ষুদ্ধ হলেও তাতে তার কিছুই যায় আসে না। বাস্তবতা হচ্ছে, বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে প্রভুত্বমূলক আচরণ, তা সরকার কৃতজ্ঞচিত্তে মেনে নিলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কিছু করার থাকছে না। মানুষের মনের এই তীব্র যন্ত্রণা ধারণ ও প্রকাশ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তিও যেন বাংলাদেশে নেই। ভারত যে তার স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে যেমন খুশি তেমন এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে তাচ্ছিল্যের আচরণ করছে, এমন নজির বিশ্বের আর কোনো স্বাধীন দেশের ক্ষেত্রে হয় কিনা জানা নেই। কোনো দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে এ ধরনের আধিপত্য, আগ্রাসী মনোভাব ও খবরদারি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। অথচ, ভারতের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আমাদের সরকার নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছে। উল্টো ভারতের স্তুতি ও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকে। ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’, ‘রক্তের সম্পর্ক’, ‘রাখি বন্ধনের সম্পর্ক’, ‘বন্ধুত্বের রোল মডেল’ ইত্যাদি বলে ভারতকে সন্তুষ্ট করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন তেলবাজি বিশ্বে আর কোথাও দেখা যায় না। এসব প্রশংসা এমনই যে পৃথিবীতে ভারতের চেয়ে এমন বন্ধু আমাদের আর দ্বিতীয়টি নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, জগতে যে দেয় তার চেয়ে উত্তম আর কেউ হতে পারে না। আর দুর্বলের কাছে যদি সবলের কোনো স্বার্থ থাকে, তখন সে নানাভাবে ছলচাতুরি এবং মাথায় হাত বুলিয়ে তা আদায় করে নেয়। আদায় করার পর সবল তার স্বরূপে দুর্বলের সামনে দাঁড়ায়। তখন দুর্বলেরও কিছু করার থাকে না। দুর্বলের এই মহা ভুলের খেসারত তাকে সারাজীবন দিয়ে যেতে হয়। সবলের ধমকের নিচেই তাকে থাকতে হয়। আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। সবল তাকে নিয়ে যেমন খুশি তেমন খেলায় মেতে উঠে। যা খুশি তা বলে। দুর্বলকে অনেকটা খেলার বস্তুতে পরিণত করে। বাংলাদেশের কাছে ভারতের চাওয়ার আর কিছু বাকি না থাকায় সে ঐ সবলের মতোই আচরণ করা শুরু করেছে। তার বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের মুখ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিমূলক কথাবার্তা বলা অব্যাহত রয়েছে। তাদের বক্তব্যে এমন মনোভাবই প্রকাশিত হয়, যেন আমরা তাদের কোনো অঙ্গরাজ্য। আবার সরকারের মনোভাব এমন যে, একটু বেকায়দায় পড়লে যেন ভারতই তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে। সরকারকে টিকিয়ে রাখার একমাত্র দায়িত্ব যেন ভারতেরই এবং সে ছাড়া পৃথিবীতে তাকে রক্ষার আর কেউ নেই। ভারতের আচরণ দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, তার উদ্বেগ সরকারকে নিয়ে। বাংলাদেশের আলাদা সত্ত¡া ও এর সত্ত¡াধিকারী জনগণকে নিয়ে নয়। তার নেতারা যে বাংলাদেশকে তার সাথে একীভূত করার কথা বলছে, তা তার সমর্থনে সরকার টিকে থাকার কারণেই। বলা বাহুল্য, ভারত আমাদের সাথে যে আচরণ করে চলেছে, তা অন্য কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশের সাথে করলে সহজে ছাড় পেতো না। কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরের চেয়েও ছোট্ট মালদ্বীপ তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেন নাক না গলায়, এ ব্যাপারে সতর্ক করে ভারতকে যে ধমক দিয়েছে, তাতে ভারত চুপসে গিয়েছিল। নেপাল, ভুটানের মতো রাষ্ট্রও ভারতকে এখন তোয়াক্কা করছে না। অথচ, ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেন, তখন আমাদের সরকার নিশ্চুপ থাকে। এই নিশ্চুপ থাকা মানে তাদের কথা মেনে নেয়া। তবে সরকারের এই অবনত পররাষ্ট্রনীতি সব দেশের ক্ষেত্রে সমান নয়। অন্য কোনো দেশ কিছু বললেই তার রাষ্ট্রদূতকে কালবিলম্ব না করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশকেও কথা বলতে ছাড়ে না। অবশ্য আমাদের নিজস্ব ব্যাপারে যেই নাক গলাতে আসুক না কেন, তার সাথে হুজুর হুজুর করার মতো আচরণ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ব্যতিক্রম দেখা যায় কেবল ভারতের ক্ষেত্রে। ভারত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিমূলক কথা বললে তার প্রতিবাদ দূরে থাক, তার মেরুদÐ যেন মোমের মতো গলে যায়। ভারতের অন্যায় আচরণে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে পারে না।
তিন.
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ সরকার তো করছেই না, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও তেমন কোনো প্রতিবাদ করছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আগামী নির্বাচনে ভারতের সুদৃষ্টি সরকারসহ অন্য দলগুলোরও প্রয়োজন। দেশের মানুষ আশা করে, বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতীয়দের হুমকিমূলক বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ করুক। কারণ, তাদের প্রতিবাদ করার কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। তারা মনে করে, বিএনপির উচিত, তাদের হয়ে ভারতীয়দের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ করা। কারণ, এসব বক্তব্য আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি। দুঃখের বিষয়, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। তাদেরও বদ্ধমূল ধারণা, ভারত পাশে থাকলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথটি মসৃণ হয়ে যাবে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে হয়তো তারা ভারতের অন্যায্য আচরণের শক্ত প্রতিবাদ করেন না কিংবা করতে চান না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। অথচ, জনগণের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করলে বিশ্বের কোনো শক্তি নেই, ক্ষমতাকামী দলগুলোকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে। একটা সময় প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ভারতের সাথে বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপন চুক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বেশ জোর গলায়ই ভারতের অন্যায্য আচরণ ও সরকার ভারতের সাথে গুপ্ত চুক্তি এবং একতরফা ট্রানজিট দেয়ার বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আছে কিনা, এখন তা ভেবে দেখতে হবে। এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা দেশপ্রেমিক জনগণ ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। তখন দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রতিবেশী ভারতের ‘অব্যাহত আগ্রাসী’ মনোভাবের কাছে বর্তমান সরকার ‘নতজানু’। বিশ দলীয় জোটের কোনো কোনো নেতা বলেছিলেন, স্বাধীনতার বুক চিরে ট্রানজিট-করিডোর চলবে না। এসব কথায় তখন মানুষের মধ্যে বেশ আশার সঞ্চার হয়েছিল। এখন ভারতের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা যখন বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন তার প্রতিবাদ তাদের করতে দেখা যায় না। অথচ, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণকে সাথে নিয়ে এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ করা। অন্যদিকে, সরকার যে ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করছে, তা দেশের সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে। এই নীরব ও নিশ্চুপ থাকার কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিমূলক আরও বক্তব্য আসে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
চার.
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে জনগণের মধ্যে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে জনগণ আশা করে। একটা সময় ভারতবিরোধী রাজনীতিকে ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ বা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হিসেবে ধরা হতো। তবে তার ভিত্তি ছিল। আমাদের প্রতি তার চরম বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ দেখে দেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব দানা বাঁধে। এজন্য ভারত নিজেই দায়ী। এখন যদি বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতা নিয়ে জরিপ করা হয়, তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, এই হার অতীতের যেকোনো হারের তুলনায় অনেক বেশি হবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকতে পছন্দ করে, অন্যের খবরদারির মধ্যে থাকতে চায় না। যুগে যুগে এর প্রমাণ এ দেশের মানুষ দিয়েছে। পরোক্ষ হোক আর প্রত্যক্ষ হোক, বাংলাদেশের মানুষ কারো কাছে দায়বদ্ধ ও নতজানু হয়ে থাকতে চায় না। তারা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চায়। এখন সময় বদলেছে, বিশ্বরাজনীতির ধরনও বদলেছে। রাজনীতিটা হচ্ছে, সরাসরি দখল করে নয়, পরোক্ষভাবে কোনো দেশকে নতজানু করে রাখা। ভারতের কাছে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার যে কোনো মূল্য নেই, তা আমরা ৫ জানুয়ারির বহুল বতর্কিত নির্বাচনে তার ভূমিকা দেখে বুঝেছি। এর মধ্য দিয়ে সে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরা যা বলব বা করব, তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান ও অসহায়ত্ব আর কিছু হতে পারে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।