Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চেলসির গ্রাহাম কি পারবেন ‘হ্যারি পটার’ হতে?

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউরোপিয়ান ফুটবলে ক্লাব ম্যানেজারদের ব্যাগ সব সময় গুছিয়ে রাখতে হয়। এই বাক্যটিকে চিরন্তন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ক্লাব চেলসি। রাশান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ ২০০৩ সালের জুনে সেই সময়ের অখ্যাত চেলসির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে এই ধারার জন্ম। রাশান ধনকুবের এই বছরের মে মাসে রাজনৈতিক মারপ্যাচে পড়ে ক্লাব বিক্রি করেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী টড বয়েলির কাছে। তবে চেলসি রয়ে গিয়েছে সেই পুরোনো দর্শনে। উরুগুয়ান সাংবাদিক এদোয়ার্দো গালেয়ানো লিখেছিলেন, ‘আজ যে কোচকে নিয়ে সমর্থকেরা উল্লাস করে তাকে অমরত্ব দিতে চাইছে, পরের রোববারে সেই কোচকেই তারা মরতে বলবে।’ গালেয়ানোর এই মতামতটা যেন চেলসির কোচদের উদ্দ্যেশেই করা। স্টামফোর্ড ব্রিজে কোচদের পরিণতি যেন যখন তখন ছাঁটাই হওয়া। যার সর্বশেষ উদাহরণ কোচ টমাস টুখেল। এই জার্মান কোচের স্থালাভিষিক্ত হয়েছেন গ্রাহাম পটার। ইংলিশ ম্যানেজার পটার জে. কে. রাউলিংয়ের উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র হ্যারি পটারের ন্যায় কোন জাদুর ছড়ি নিয়ে স্টামফোর্ড ব্রিজে এসেছেন কি না সেটা সময়ই বলবে।

আব্রামোভিচ দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত বলার মতো কোনো সাফল্যই ছিল না পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটির। প্রথম শ্রেণির লিগ জেতার স্মৃতিতেও তত দিনে ৫০ বছরের পুরোনো ধুলা জমে গেছে। রাশান মালিকের অর্থের ঝনঝনানিতে চেলসি সর্মমোট ১৯টি ট্রফি জিতেছে। যার মাঝে আছে ৫টি প্রিমিয়ার লিগ, ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি ইউরোপা লিগ ও ৫টি এফ এ কাপ শিরোপা। তবে একই সঙ্গে এই মাথামোটা রাশান সর্বমোট ১৫ বার ম্যানেজার পরিবর্তন করেছেন তার ১৮ বছরের মালিকানায়। প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পরের মৌসমেই কোচদের ছাঁটাই করার দৃষ্টান্ত রেখেছেন তিনি। এই সময় ক্লদিও রানিয়ারি, জোসে মোরিনহো, আব্রাহাম গ্র্যান্ট, লুইস স্কলারি, গাস হিডিঙ্ক, কার্লো আনচেলত্তি, ভিলাস বোয়াস, রোবার্তো মাত্তেও, রাফায়েল বেনিতেজ, স্টিভ হোল্যান্ড, অ্যান্তেনিও কন্তে, মারেজিও সারি ও ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের মত কোচদের চেয়ারচ্যুত করেন এই রাশান মালিক। এর মাঝে মোরিনহো ও হিডিঙ্ক দুই ধাপে কাজ করেন লন্ডনির ক্লাবটিতে। মোরিনহো প্রথম দফায় ক্লাবের সঙ্গে সমঝতার ভিত্তিতে চাকরি ছাড়েন। অন্যদিকে বেনিতেজ, হোল্যান্ড ও হিডিঙ্করা তত্তাবধায়ক ম্যানেজার হিসেবে স্বল্প মেয়াদে কাজ করেন। মেয়াদ পূর্ণ হবার পর তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিবেচনা করা হয়নি। যদিও বেনিতেজ ইউরোপা লিগ (২০১২/১৩ মৌসুমে) জেতান। হিডিঙ্ক এনে দেন এফ এ কাপ ২০০৮/০৯ মৌসুমে, একই সঙ্গে দলকে নেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে। সেখানে রেফারির বিতর্কিত সিধান্তের জেরে বাদ পড়তে হয় বার্সালোনার বিপক্ষে। এই সময় কোচদের নির্ধারিত সময়ের পুর্বে বরখাস্ত করতে গিয়ে এই আব্রামোভিচ গুণেছেন মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড। নতুন মালিক টড বয়লি সেই জুতোয় পা গলালেন। দায়িত্ব নেওয়ার ৫৯০ দিনের মাথায় টুখেলকে বলে দিলেন বিদায়। অথচ এক মৌসুম পূর্বেই এই জার্মান জিতিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তাই নতুন কোচ পটার দায়িত্বের সঙ্গে পেয়েছেন খড়গের নিচে পড়ার দুশ্চিন্তাও।
পটার ব্রাইটনকে ৩-৪-২-১ বা ৩-৪-৩ ফরমেশনে খেলিয়ে সফলতা পেয়েছিলেন। কন্তে ও সারির কল্যাণে এই ফর্মেশনে অভ্যস্ত চেলসি। তবে পটার পাসিং ও প্রেসিংয়ে বেশি মনোযগী। তার দর্শনে প্রোয়জন হয় দুইজন সলিড ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। যারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। গত মৌসুমে ব্রাইটনের কাইসিদো ও বিসুইমা এই দ্বায়িত্ব পালন করেন। চেলসিতে এই ভ‚মিকা রাখার যোগ্যতা আছে কান্তে ও জরগিনহোর। গত মৌসুম থেকে ফ্রেঞ্চ প্লেয়ার জর্জরিত চোট সমস্যায় ও ইতালিয়ান মিডফিল্ডার আছে ফর্মহীনতায়। এই মৌসুমে চেলসি অনেক অর্থ ব্যয় করা স্বত্তেও এই জায়গায় পাকাপাকিভাবে কোন প্লেয়ার কিনেনি। দলবদলের শেষ সময়ে তরিঘড়ি করে ধারে এনেছে ডেনিস জারিয়াকে। সেন্ট্রাল মিড কোভোচিচ ও লুফটাস চেকের সঙ্গে জাকারিয়া ও ফর্মহীন জরগিনহোকে দিয়ে কাজ করতে হবে।পটার এই সমস্যার সমাধান কোন সমন্বয়ের মাধ্যমে করবেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় চেলসি সমর্থকরা। তবে ডিফেন্স লাইনে তার হাতে আছে এস্পিলিকুয়েইটা, থিয়াগো ও নতুন দুই সাইনিং কুলিবালি ও ফফানা। অন্যদিকে এই ইংলিশ কোচের কৌশলে দুই উইং-ব্যাককে আক্রমণে খুবই পারদর্শী হতে হয়। ব্রাইটনে গত মৌসুমে খেলা কুকুরেয়াকে চেলসি এবার তাদের ডেরায় টানাতে বাম দিকের সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে রিচ জেমস ডান পাশে কতখানি ভ‚মিকা পালন করতে পারেন তা বলা মুশকিল। দুই উইং-ব্যাক আক্রমণে বল হারালে তখন দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকেই ব্যাকআপ দিতে হয় হাইলাইনে থাকা ডিফেন্সকে।
পটারের দর্শনে দল ফলাফলের সঙ্গে সুদর্শন ও ছন্দময় ফুটবলও খেলে। তবে মালিকের ছটফটে মানসিকতা, এই বৃটিশ কোচকে নিজের দর্শনে দল পরিচালনার জন্য যথেষ্ট সময় দিবে না। তাই দ্রæত গতিতে ফলাফল আনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে চেলসির নব্য কোচকে। আক্রমণে এই ৪৭ বছর বয়সী কোচ পাচ্ছেন অনেক অপশন। হাবার্টজ, মাউন্ট, পুলেসিক, জিয়েসের সঙ্গে আছে নতুন দুই সাইনিং স্টার্লিং ও আবামিয়াং। পটার কিছুটা অধুনিকায়ন করে টোটাল ফুটবলের কৌশলেই খেলান। তার ক্যারিয়ারে দুই স্প্যানিশ কোচ গার্দিওলা ও রবার্তো মার্তিনেজের অনেক প্রভাব আছে। বল দখলে রাখতে চাওয়া তার দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তার কৌশল প্রমাণিত তবে পুর্বে তাকে ইউরোপের মঞ্চে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হয়নি। সামলাতে হয়নি এমন কোন বড় ক্লাব, যাদের মালিক ও সমর্থকদের একমাত্র চাওয়া ভালো ফলাফল। এতো প্রতিক‚লতার মাঝে তিনি কিভাবে চেলসিকে নতুন রূপে সাজাবেন তা দেখার জন্যই অপেক্ষায় ফুতবল প্রেমীরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চেলসি

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ