Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যা যা খেতেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:২৭ পিএম

৯৬ বছর বয়সেও তিনি এতোটাই সুস্থ ছিলেন যে, দক্ষ হাতে সামলেছেন ইংল্যান্ডের সিংহাসন। আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিডে, সে ধাক্কা সামলে ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে। জানতে ইচ্ছা করে না, প্রায় শতবর্ষী বয়সেও কীভাবে এতোটা ফিট ছিলেন তিনি?

দীর্ঘদিন রানির রাঁধুনি ছিলেন ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারির শেফ ছিলেন। বর্তমানে তিনি টেক্সাসের ডালাসে দ্য রয়্যাল শেফ পরিচালনা করেন।
দীর্ঘদিন রানির খাবার প্রস্তুত করা এই শেফ ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি সম্প্রতি জানিয়েছেন রানি কী কী খাবার পছন্দ করতেন। দিনে কয়বেলা খেতেন এসব তথ্য।
চলুন তাহলে প্রথমেই সংক্ষিপ্ত পরিসরে জেনে নেওয়া যাক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর খাদ্যাভাস সম্পর্কে।
ম্যাকগ্রেডি জানান, দীর্ঘায়ু সুস্থ জীবন-যাপনের রহস্য লুকিয়ে ছিলো রানির খাদ্যাভ্যাসেই। তিনি আরও জানান ছেলেবেলা থেকে চিরদিন প্রায় একই ধরনের খাবার খেতেন তিনি।
রানি এলিজাবেথ প্রতিদিন সকালে প্রথমে চিনি ছাড়া এক কাপ আর্ল গ্রে চান পান করতেন। সঙ্গে থাকতো ভিন্ন স্বাদের কুকিজ। বেলা খানিকটা বাড়তেই বিশেষ ধরনের কর্ন ফ্লেক্স এবং টোস্ট দিয়ে জলখাবার সারতেন তিনি। ফল খেতে ভালোবাসতেন। বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফল পছন্দ করতেন। আর সকালের খাবারের কখনও কখনও তা-ও থাকতো।
দুপুরে থাকতো প্রোটিন-যুক্ত খাবার। কার্বোহাইড্রেট আছে এমন খাবার রানিকে দেওয়া হতো না। দুপুরে রানির খুব প্রিয় ছিলো পালং শাক দিয়ে স্যামন মাছের একটি পদ। এছাড়া মাঝেমধ্যে গ্রিলড চিকেন এবং সালাদও খেতেন।
বিকেলের দিকে অবশ্যই এক কাপ চা পান করতেন রানি এলিজাবেথ। কোনোদিন সঙ্গে থাকতো শসার স্যান্ডউইচ, স্ট্রবেরি জ্যাম।
রাতে সাধারণত শর্করামুক্ত খাবার খেতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। নৈশভোজে অধিকাংশ দিন থাকে গ্রিলড ফিশ এবং সালাদ।

রানির পছন্দের আর্ল গ্রে চা কি?
আর্ল গ্রে চা হলো একটি চায়ের মিশ্রণ যা বার্গামট তেল দিয়ে স্বাদযুক্ত করা হয়। আর্ল গ্রে’কে এর অনন্য স্বাদ দিতে কালো চায়ে রিন্ডের সুগন্ধি তেল যোগ করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, আর্ল গ্রে চীনা কিমুনের মতো কালো চা থেকে তৈরি করা হয় এবং তাই দুধ ছাড়াই পরিবেশন করা হয়।

রানিকে কার্বোহাড্রেটযুক্ত খাবার কেন দেওয়া হতো না?
আমাদের শরীর ঠিকঠাক কাজ করার জন্য তিন ধরনের উপাদান খুব বেশি পরিমাণে প্রয়োজন। উপাদানগুলো যথাক্রমে ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট। তবে রানিকে কেন কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার দেওয়া হতো না; সেটা চিকিৎসাবিজ্ঞান সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন।

এবার রাঁধুনি ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি’র রান্না এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর খাবার-দাবার নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা :
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর ব্যক্তিগত পাচক হিসেবে ১৫ বছর বাকিংহাম প্যালেসে কাজ করেন ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি। শেফ হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় দুবার রানির ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন। এমনকি ফোর্ড, রিগ্যান, বুশ সিনিয়র, ক্লিনটন ও বুশ জুনিয়র- এই পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় তাদের জন্য রান্নাও করেছিলেন ম্যাকগ্রেডি।
ইংল্যান্ডের রয়্যাল পরিবারের সদস্যরাও ম্যাকগ্রেডির রান্না খেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রিন্সেস ডায়ানা, এবং তার দুই পুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ডায়ানার মৃত্যুর দিনও তার জন্য রান্না করেছিলেন শেফ ড্যারেন। সেদিন প্রিন্সেসের জন্য রান্না সেরে খাবার প্রস্তুত করে বসেছিলেন তিনি; কিন্তু সে খাবার খেতে আর কখনও ফেরেননি প্রিন্সেস ডায়ানা।
ড্যারেন ম্যাগ্রেডি নিজের লেখা বই ‘ইটিং রয়্যালি: রেসিপিস অ্যান্ড রিমেমব্রেন্সেস ফ্রম আ প্যালেস কিচেন’-এ তিনি রানির খাদ্যাভাস, পছন্দ-অপছন্দের খাবার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

দিনে কয়বার খেতেন রানি?
ম্যাকগ্রেডি জানান, দিনে চারবেল খাবার খেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রতিবেলাতেই খুবই অল্প পরিমাণে খেতেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সালে তিনি যখন রানির ব্যক্তিগত শেফ ছিলেন, তখন রানি সকালে হালকা নাশতা, দুপুরে খাবার, বিকেলে চা আর রাতে খাবার খেতেন।
সকালের নাস্তায় খেতেন- চা, বিস্কিট আর এক-বাটি সিরিয়াল। দুপুরে- গ্রিলড ফিশ, অল্প রান্না করা স্পিনিচ শাক বা কুরজেট; মাঝেমধ্যে গ্রিলড চিকেনও খেতেন। এরপর বিকেলে- আবারও চা; চায়ের সঙ্গে জ্যাম আর স্কোন উপভোগ করতেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকতেন বিকেলের চা না হলে রানির চলতো না।
ম্যাকগ্রেডি যখন প্রাসাদে রান্না করতেন, তখন সেখানে ২০ জন রাঁধুনি ছিলেন। রাজপ্রাসাদের নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান রাঁধুনি সপ্তাহে দুবার রানিকে খাবারের তালিকা দিতেন। সেখান থেকে রানি পছন্দের খাবার বলে দিতেন।
খাওয়ার পরে কোনোটা ভালো না লাগলেও শেফদের মুখের ওপর কখনো বলতেন না। এরকম ক্ষেত্রে একটি নোটবুকে ছোট করে নোট লিখে রাখতেন রানি। খাতাটিতে হয়তো লেখা থাকতো- এ খাবার আর খেতে চাই না।

রানির প্রিয় খাবারের তালিকা:
ড্যারেন লিখেছেন, রানি মোরকেম বে পটেড শ্রিম্প (চিংড়ি) আর টোস্ট খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন। চিংড়িগুলোকে মসলাদার মাখন দিয়ে রান্না করা হতো। গরম গরম টোস্টের সাথে এগুলো খেতেন তিনি।
মসলাদার খাবার কম খেলেও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে রানি বাছবিচার করতেন না। শারবোনেল এট ওয়াকার, বেনডিক্স, প্রেস্টাট- ইত্যাদি চকোলেট রানির দারুণ পছন্দের ছিলো। রানির আরেকটি প্রিয় খাবার ছিলো ক্রোক মঁসিয়ে স্যান্ডউইচ; গ্রুইয়ের পনির, হ্যাম ও ডিম সহযোগে এই স্যান্ডউইচ খেতে পছন্দ করতেন তিনি।
দিনে চারবেলা অল্প খাবারের পাশাপাশি সামান্য পরিমাণে হলেও ড্রিঙ্কস করতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তুতো বোন মার্গারেট রোডস-এর তথ্যমতে- রানির পছন্দের পানীয় ছিলো জিন ও ডাবনেট বা শ্যাম্পেন।

রাজপ্রাসাদের প্রধান খাবার:
তার সময়ে সপ্তাহের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার ছিলো শুক্রবারের মাছ ও চিপ। বাকিংহামে তিন শতাধিক কর্মীর সবাই শুক্রবারে লাঞ্চে মাছ ও চিপ খেতো।
হ্যালো! ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকগ্রেডি জানান,রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন আমাকে রানির কুকুরদের জন্য কলিজা, মুরগি এসব কাটতে হতো। পরে জেনেছিলাম, রানির কাছে এটা দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবারের আয়োজন ছিলো। এছাড়া চাকরিজীবনের প্রথমদিকে বালমোরাল দুর্গে কাজ করার সময় ঘোড়াদের জন্য গাজরও কেটেছিলেন শেফ ম্যাকগ্রেডি।

রানির অপছন্দের খাবার:
রানি রসুন বা পেঁয়াজ পছন্দ করতেন না। বাকিংহাম প্যালেসে কখনো রসুন এর ব্যবহার হয়নি। ব্যক্তিগত শেফ-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি কেবল একজনের জন্য রান্না করছেন। তাই সে ব্যক্তির স্বাদটাই মুখ্য।
রানি পছন্দ না করলেও প্রিন্স ফিলিপ প্রচুর রসুন ও মসলাসমৃদ্ধ খাবার খেতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি। খাবারের ব্যাপারে বেশ রসিক প্রিন্স। ভ্রমণের সময় কেউ যেন ফুড পয়জনিং-এর স্বীকার না হন, এজন্য কোথাও ভ্রমণে গেলে রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য শেলফিশ বা রেয়ার মিট নিষিদ্ধ ছিলো।
রান্না ও খাবার নিয়ে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরীণ কিছু অজানা তথ্য :
ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি জানান, রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রিন্স ফিলিপ দারুণ রান্না করতে পারেন। এছাড়া উইলিয়াম, কেট, মেগান ও হ্যারি সবাই-ই রান্না করতে পছন্দ করেন। তবে রান্নাঘরের দিকে একেবারেই যেতেন না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
রানি কখনও ফাস্ট ফুড অর্ডার করেননি। যৌক্তিক কারণ হিসেবে ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি উল্লেখ করেন- ২০ জন রাঁধুনি থাকলে কেনইবা ফাস্ট ফুড বাইরে থেকে আনতে হবে!
একমাত্র ক্রিসমাসে রাজপ্রাসাদের সবচেয়ে বড় ভোজ এর আয়োজন হয়। তখন ঐতিহ্যবাহী খাবার-দাবারেরই আয়োজন করা হয়। আর প্রতি বছর একই ধরনের রান্না করা হয়। ক্রিসমাসে টার্কি রান্না করতে করতে একঘেয়েমি বোধ করতেন বলেও বইটিতে অকপটে স্বীকার করেছেন ম্যাকগ্রেডি।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মা দিবসও বিশেষ উদযাপন করেন না। তবে প্রায়ই সপ্তাহশেষে উইন্ডসর দুর্গে যান রানি, সেখানে বিশেষভাবে বানানো ডিম দিয়ে নাস্তা সারেন।
সবশেষে ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, বাকিংহাম প্যালেস-এর সদস্যরা হ্যালোউইনও উদযাপন করেন না। এই হলো রানি এবং রাজপ্রাসাদের খাবার-দাবার নিয়ে বৃত্তান্ত।



 

Show all comments
  • jack ali ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:৩৫ পিএম says : 0
    i feel greatly sorry for her. Allah gave her Intellect, judging between right and wrong, conscience, analytical power overall to use free will to choose the right path or the path which guide towards hell forever.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এলিজাবেথ

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ