Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাওয়াহিরিকে হত্যায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ইঙ্গিত তদন্ত করছে তালেবান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

কাবুলে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করা আমেরিকান ড্রোনটি সম্ভবত কিরগিজস্তানের একটি বিমানঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, বুধবার কিছু মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। জাওয়াহিরিকে হত্যার বিষয়ে করা মার্কিন দাবি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তালেবান।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, উত্তর কিরগিজস্তানের মানসে মার্কিন ট্রানজিট সুবিধার জন্য ব্যবহৃত গান্সি এয়ারবেস থেকে হামলা চালানো হয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, বিশকেক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কিরগিজস্তানে গান্সি একটি প্রাক্তন আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি। এটি ইউএস এয়ার ফোর্স দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যা জুন ২০১৪ এ কিরগিজ সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছিল।

মার্কিন প্রশাসন অবশ্য এখনও ড্রোন কোথা থেকে উড্ডয়ন করেছে এবং কোন রুট ব্যবহার করেছে তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা বিভাগ শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি জারি করে বলেছে, ‘জাওয়াহিরিকে কাবুলের কেন্দ্রস্থলে একটি ওভার-দ্য-হরাইজন অপারেশনে হত্যা করা হয়েছিল, যেখানে তিনি তালেবানের অতিথি হিসাবে বসবাস করছিলেন। রোববার কাবুল সময় সকাল ৬ টা ১৮ মিনিটে একটি নির্ভুল, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা তার উপরে আঘাত করা হয়েছিল।’

আমেরিকার বৃহত্তম রেডিও নিউজ নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) উল্লেখ করেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন না যে, তারা কোথা থেকে ড্রোনটি উৎক্ষেপণ করেছে, ‘তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে আর কোনো সামরিক ঘাঁটি নেই, ধারণা করা হচ্ছে বিমানটি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে দীর্ঘ দূরত্ব উড়ে গেছে।’

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান উল্লেখ করেছেন যে, ড্রোন হামলার এ অভিযানে ‘পাকিস্তানের সম্ভাব্য ভ‚মিকা’ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘প্রচুর আলোচনা’ তৈরি করেছে। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান এ হামলার জন্য তাদের আকাশপথ ব্যবহার করতে দিয়ে ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে।

কুগেলম্যান যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘ভ‚গোল মিথ্যা বলে না। এই ড্রোনটি যদি উপসাগরীয় কোনো মার্কিন ঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়, তাহলে এটি ইরানের ওপর দিয়ে উড়তে পারবে না। মধ্য এশিয়ার উপর দিয়ে বৃত্তাকার পথে উড়ে যাওয়া এর পক্ষে সম্ভব নয়। এটি পাকিস্তানের আকাশসীমাকে গোয়েন্দা সহায়তার জন্য সবচেয়ে পছন্দসই বিকল্প হিসাবে ছেড়ে দেয় এবং মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এ অপারেশনের পরিকল্পনা এবং নজরদারি কয়েক মাস সময় নিয়েছিল।’

‘তারা কি একাই করতে পারত, মাটিতে উপস্থিতি ছাড়াই?’ তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পাকিস্তান না হলে, ‘কিছু বিদ্রোহী তালেবান সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই তথ্য সরবরাহ করতে পারে’। তবে কুগেলম্যান আফগানিস্তানের মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সেই সমর্থন প্রদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন না।
এদিকে, কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় আল কায়দা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের করা এমন দাবি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের শাসক দল তালেবান। গতকাল একজন তালেবান কর্মকর্তা বলেছেন, গোষ্ঠীর নেতৃত্ব সেখানে জাওয়াহিরির উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিল না বলে ইঙ্গিত করে। দোহায় অবস্থিত জাতিসংঘে মনোনীত তালেবান প্রতিনিধি সুহেল শাহীন সাংবাদিকদের এক বার্তায় বলেছেন, ‘সরকার এবং নেতৃত্ব কী দাবি করা হচ্ছে সে সম্পর্কে সচেতন ছিল না, বা সেখানে কোনও চিহ্নও ছিল না।’ ‘দাবীর সত্যতা খুঁজে বের করার জন্য এখন তদন্ত চলছে,’ তিনি বলেন, তদন্তের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।

রোববারের ড্রোন হামলার বিষয়ে তালেবান নেতারা মুখ বন্ধ করে রেখেছে এবং কাবুলে জাওয়াহিরির উপস্থিতি বা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। শীর্ষ তালেবান নেতারা কীভাবে মার্কিন ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করছেন, গ্রæপের তিনটি সূত্র জানিয়েছে। এক বছর আগে মার্কিন-সমর্থিত সরকারের পরাজয়ের পর ক্ষমতায় আসা তালেবান গোষ্ঠীটি এ হামলার বিষয়ে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার উপরে তাদের আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং হিমায়িত বিলিয়ন ডলারের তহবিলে অ্যাক্সেসের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

কাবুলে জাওয়াহিরির মৃত্যু প্রশ্ন উত্থাপন করে যে তিনি তালেবানদের কাছ থেকে আশ্রয় পেয়েছিলেন কিনা, যারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রত্যাহারের ২০২০ চুক্তির অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা কোন জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না। শাহীন বলেছেন যে, আফগানিস্তানের ইসলামিক এমিরেট - যে নামটি তালেবানরা দেশ এবং তাদের সরকারের জন্য ব্যবহার করে - কাতারের রাজধানী দোহায় স্বাক্ষরিত চুক্তিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন বলেছেন, তালেবান জাওয়াহিরিকে আতিথ্য ও আশ্রয় দিয়ে চুক্তির ‘ঘোরতর লঙ্ঘন’ করেছে। সূত্র : ট্রিবিউন, ডন।

 

 

 



 

Show all comments
  • Md Azadul Islam ৫ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
    এগুলো কি সন্ত্রাসী হামলা নয়? তারা যা করবে সব বৈধ,ঠিক নয় কি ?
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Hasan ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০০ এএম says : 0
    বিশ্বে অশান্তির জন্য আমেরিকা 'খল নায়কে'র ভূমি
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Farokh ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
    এখন আমেরিকা জ্ঙ্গিবাদ/মৌলবাদ হয় না।বরং বিশ্ববাসী তাদের প্রশংসা করছে।অপরাধী হলে তাকে আটক করে আইন অনুযায়ী বিচার করা হতো।তাহলে প্রশংসা করা যেতো।বর্তমান বিশ্বের আতন্ক হলো আমেরিকা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kamrul Jaman ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
    যেই দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে যে দেশে নতুন সরকার গঠন হয়েছে ওই দেশে হামলা করাটা আমেরিকার অপরাধ হয়েছে এবং আইন ভঙ্গ করছে
    Total Reply(0) Reply
  • Riajul Kabir Mintu ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
    এগুলো কি বিচার বহির্ভুত মানবতাবিরোধী হত্যা না।এই কলঙ্কিত কাপুরুষচিত হত্যা ইতিহাস বয়ে বেড়াবে যুগযুগ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sidratul Muntaha Rifa ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
    সীমা লঙ্ঘন কারীকে সৃষ্টি কর্তা ধ্বংস করবেন একদিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ