পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পৃথিবী থেকে ইসলাম এবং মুসলমানদের উচ্ছেদ ও নির্মূল করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এ অপচেষ্টা চলে আসছে। পশ্চিমাবিশ্বের দেশগুলো ইসলামের অগ্রযাত্রায় ভীত হয়ে একে রুখতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর পূর্ণাঙ্গ বহিঃপ্রকাশ ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করা। ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রায় তারা এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিল যে, নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে দ্বিধা করেনি। এই ধ্বংসযজ্ঞ যে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র চালিয়েছিল, তা এখন সবারই জানা। এর দায় চাপিয়েছিল ওসামা বিন লাদেন ও তার গড়া আলকায়েদার ওপর। লাদেনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে এবং তাকে ধরতে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য পাঠিয়ে বছরের পর বছর ধরে হামলা চালিয়ে দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এক লাদেনকে হত্যা করতে গিয়ে সে নির্বিচারে লাখ লাখ মুসলমান হত্যা করেছে। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী অস্ত্র আছে, এমন উছিলা দিয়ে তাকে হত্যা এবং ইরাকে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়ার অর্থই ছিল একটি মুসলমান দেশ নিশ্চিহ্ন ও ইসলামকে ধুলিস্যাত করে দেয়া। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, সাদ্দাম হোসেনের কাছে এ ধরনের কোনো অস্ত্রই ছিল না। লিবিয়াকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে অশান্ত করে তুলেছিল। গাদ্দাফিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, দেশ দুটি মুসলমানের। এখানেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা থেমে থাকেনি। বিপথগামী কিছু মুসলমানকে দিয়ে আইএস গঠন করে সমৃদ্ধ সিরিয়াকে ধ্বংস করতে হামলা চালিয়ে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়। বেছে বেছে মুসলমান দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলা ও হত্যার ঘটনা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, তারা যেকোনো উপায়ে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে চায়। কেউ যদি লক্ষ্য করে তাহলে দেখতে পাবে, বিশ্বে বর্তমানে মুসলমান উদ্বাস্তুর সংখ্যা শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ১০ জনের ৬ জনই মুসলমান উদ্বাস্তু। অর্থাৎ উদ্বাস্তুদের শতকরা ৬০ ভাগই মুসলমান। জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮ কোটি ৯৩ লাখ। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিরিয়া। দেশটির উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। উদ্বাস্তুর সংখ্যার দিক দিয়ে সিরিয়া এক নম্বরে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ উদ্বাস্তু ক্যাম্প বাংলাদেশের কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে উদ্বাস্তু হয়ে আছে ১১ লাখ মুসলমান। মিয়ানমার সরকার তাদেরকে মেরেকেটে দেশছাড়া করে দিয়েছে। আফগানিস্তান, লেবানন, সোমালিয়া, লিবিয়াসহ আফ্রিকার অন্যান্য মুসলমান দেশের লাখ লাখ উদ্বাস্তু রয়েছে। তাদের অনেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে গিয়ে সলিল সমাধির শিকার হচ্ছে। বিশ্বে অন্য কোনো ধর্মের এত লোক উদ্বাস্তু নেই। এ থেকে এটাই প্রমানিত হয়, পৃথিবী থেকে ইসলাম এবং মুসলমানদের উচ্ছেদ ও নিধন একটি অবিরত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
দুই.
বিশ্বের মধ্যে এ সময়ে সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে ভারতের মুসলমানরা। তারা নিজ দেশে অনেকটা পরবাসীর মতো বাস করছে। স্বয়ং রাষ্ট্র তাদের দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্ব মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী অপবাদ দিয়ে দমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করলেও ভারতের মোদি সরকার এর কোনো ধার না ধেরে সরাসরি মুসলমান উচ্ছেদের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। তার লক্ষ্য ভারতকে একটি পরিপূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। এক্ষেত্রে তার কোনো রাখঢাক নেই। এজন্য যতভাবে পারা যায়, মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। জোর করে হিন্দু বানানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। মুসলমানদের ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে যতভাবে বাধা দেয়া যায়, আইন করে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদের ভারতছাড়া করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাস করা হয়েছে। এই আইনের ছত্রছায়ায় তা বাস্তবায়নে বিজেপি’র সমর্থক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা বিভিন্ন রাজ্যে নানা উছিলায় মুসলমানদের নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই ভারতের মুসলমানদের অস্তিত্ব নিয়ে টান দিয়েছে। গুজরাট দাঙ্গায় মুসলমান হত্যার মিশন থেকে শুরু করে কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া পর্যন্ত মুসলমানদের উচ্ছেদের অভিযান চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ মুসলমানদের শিরোমনি রাসুলে পাক হযরত মুহম্মদকে (স.) নিয়ে বিজেপি’র মুখপাত্র নুপূর শর্মা যে কটূক্তি করেছেন, তা মুসলমান নিধনেরই একটি সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার অংশ। তার দল ভাল করেই জানে, মুসলমানদের প্রিয় নবীকে (স.) নিয়ে কটূক্তি করলে জীবন দিয়ে হলেও তার প্রতিবাদ করবে। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসবে। তখন তাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যা করা যাবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলমানরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং তাদের ওপর পুলিশ নির্যাতন যেমন চলেছে, তেমনি শত শত মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মাহনবীকে (স.) নিয়ে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠলেও বিজেপি কিন্তু নুপূর শর্মার বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার বিজেপি সরকারের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ইসলাম ও তার নবীকে (স.) নিয়ে নুপূর শর্মাদের কটূক্তি সেই লক্ষ্যেরই অংশ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানোর জন্য যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, তাহলে তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। ভারতের মুসলমানরা এখন এই নিরুপায় অবস্থার মধ্যেই রয়েছে। বিজেপি সরকার শুধু মুসলমান বিতাড়নের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে না, ইসলামের প্রতি তার যে প্রচণ্ড বিদ্বেষ রয়েছে এবং তা ছড়িয়ে দিতে চায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়, গত বছর আসামে এক মুসলমানকে পুলিশ গুলি করে হত্যার পর তার লাশের উপর এক উগ্রবাদী হিন্দু ফটোগ্রাফার লাফিয়ে লাফিয়ে লাথি মারা থেকে। কী হিংস্রতা ও বিদ্বেষ ছিল সে চিত্রে! এ চিত্রটি একটি খণ্ডচিত্র হলেও এ থেকে বোঝা যায়, বিজেপি সরকার হিন্দুদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়িয়ে তাদের দিয়ে ভারতছাড়া করার কাজটি করছে।
কেউ কি এমন নজির দেখাতে পারবে, কোনো মুসলমান অন্য যেকোনো ধর্মের প্রবর্তক কিংবা প্রধানকে কটূক্তি করেছে এবং তা নিয়ে বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে? এমন ঘটনা ঘটেনি। অন্য ধর্মের প্রতি যে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং তা পালনে কোনো ধরনের বাধা দেয়া নিষেধ, মহান আল্লাহ ও রাসূলের (স.) এ নির্দেশ মুসলমানরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। ভারতে সহস্রাব্দ বছর ধরে মুসলমান শাসনের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলেই তা পরিস্কার হয়ে যায়। মুঘল শাসকরা যদি ভারতকে শুধু একটি মুসলমান রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইতেন, তাহলে তা তাদের পক্ষে কোনো বিষয়ই ছিল না। বংশ পরম্পরায় শত শত বছর ধরে যে দোর্দণ্ড প্রতাপে মুঘল সম্রাটরা ভারত শাসন করেছেন, তারা চাইলে এ সময়ের মধ্যে ভারত হতো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ও হিন্দু সংখ্যালঘু একটি দেশ। তা তারা করেননি। তারা মুসলমান ও হিন্দুদের একসাথে রেখে সমঅধিকারের ভিত্তিতেই শাসন করে গেছেন। হিন্দুদের ওপর ইসলাম ধর্ম চাপিয়ে দেননি। কাউকে জোর করেও মুসলমান বানাননি কিংবা হিন্দুদের দেশছাড়া করার উদ্যোগ নেননি। বরং বিভিন্ন রাজ্য হিন্দু রাজাদের দিয়ে পরিচালনা করেছেন। এখন কি ভারতে এমন কোনো রাজ্য আছে, যার মুখ্যমন্ত্রী কোনো মুসলমান? নেই। এ থেকে কি এটাই প্রমাণিত হয় না, ইসলাম ও মুসলমানরা অন্য যেকোনো ধর্মের চেয়ে অধিক সহনশীল এবং সমঅধিকারে বিশ্বাসী? মোদি সরকার যে, ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে, এ ধর্মে কি অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার খর্ব করা, নিপীড়ন-নির্যাতন করা, অন্যধর্মের প্রবর্তকদের হেয় করা বা জোর করে ধর্মান্তরিত করার কথা আছে? যদি না থাকে, তাহলে মোদি সরকার কেন মুসলমানদের দেশছাড়া করার পদক্ষেপ নেবে? তার সমর্থক উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলো কেন মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাবে? এটা কি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয়া নয়?
তিন.
ভারতে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা চললেও বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে প্রতিবাদ দূরে থাক, কূটনৈতিক ভাষায়ও কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না। অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের পক্ষে তা করা খুবই স্বাভাবিক। এতদিন ভারতে মুসলমান নির্যাতন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এবং ওআইসি তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে নবী করিমকে (স.) নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র নুপূর শর্মার কটূক্তির কড়া জবাব ও পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশগুলো ভারতীয় পণ্য বর্জন করেছে। বিজেপিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলমান দেশও এর প্রতিবাদ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো মুসলমান বিদ্বেষী দেশও নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি খোদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভায় মহানবীকে (স.) নিয়ে নুপূর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে। আমাদের সরকারই কেবল এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। টু শব্দটি করছে না। এমনকি সংসদে বিরোধীদলের দুয়েকজন সংসদ সদস্য এর প্রতিবাদ করলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো সদস্যই এ বিষয়ে কথা বলেননি। মহানবীকে (স.) নিয়ে কটূক্তির নিন্দা পুরো মুসলিম জাহান এবং প্রভাবশালী দেশগুলো করলেও আমাদের সরকার বিস্ময়করভাবে নীরব রয়েছে। এর কারণ কি, তা পাঠকদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে দেশের তৌহিদী জনতা মহানবীকে (স.) নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ কটূক্তির তীব্র প্রতিবাদ করেছে এবং করছে। এটাই মুসলমান হিসেবে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের দেশের মুসলমানরা এতটাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ যে, তারা কখনোই হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে বা তাদের দেবতাদের নিয়ে কটূক্তি করেনি। বরং সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিপদে আলেম-ওলামাকে পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। সাধারণ মুসলমানরা তাদের বিপদে ছুটে গেছে। এই যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা চলছে, সেখানে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রেও কে হিন্দু, কে মুসলমান বাছবিচার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, ভারতে মুসলমানদের সমঅধিকার দূরে থাক, তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেও গণ্য করা হয় না। উগ্রপন্থী হিন্দুরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উল্লাসের সাথে মুসলমান নিধন, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায়। আমাদের দেশে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে অনেক হিন্দু কর্মরত, যার নজির ভারতে খুব কমই রয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে আমাদেরই একটি শ্রেণী উঠতে-বসতে ইসলামের বদনাম করছে। সাম্প্রদায়িকতার নামে ইসলামের সম্প্রসারণকে রুখতে চাচ্ছে। তাদের দৃষ্টিতে মাদরাসা শিক্ষা, আলেম-ওলামা দেশের শত্রু। তাই মাদরাসা শিক্ষা থেকে শুরু করে ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছে। ভারতে মুসলমানদের ধর্ম-কর্ম বন্ধে যে ধরনের বাধা দেয়া হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি আমাদের দেশে শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ আলেম-ওলামা দমন এবং ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ করার জন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মাঠে নেমেছে। তারা ১১৬ জন আলেমের সম্পদের হিসাব নিতে দুদকের কাছে চিঠি দিয়েছে। এটা যে ইসলামের প্রচার ও প্রসারকে রুদ্ধ করার অপপ্রয়াস, তা বুঝতে বাকি থাকে না। তারা কেন শুধু দেশের মুসলমানদের প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন আলেমদের বিরুদ্ধে লাগবে? তাদের কি আর অন্য কোনো কাজ নেই? দেশে এত এত সমস্যা, তা নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। বরং তাদের এই অপকর্ম থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, তারা সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টে আঘাত করার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য কিংবা কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। তাদের কর্মকাণ্ড আর ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সাজুয্য রয়েছে। উভয়েরই লক্ষ্য, ইসলাম ও মুসলমানদের দমন-পীড়ন। তথাকথিত সংগঠন ঘাদানিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আঘাত করে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আবার এই তাদের সাথেই তাল মিলিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আলেমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সংস্থাও এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, অসাম্প্রদায়িকতার নামে দেশের আলেম-ওলামা দমিয়ে রাখা ও সংকুচিত করার একটি প্রক্রিয়া চলছে। তালিকাভুক্ত আলেমদের কেউ যদি কোনো অনিয়ম করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুদক নিজেই তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। বিতর্কিত একটি সংগঠনের তালিকা ধরে তাকে কেন ব্যবস্থা নিতে হবে? এ কথা মনে রাখা দরকার, ঘাদানিক হোক আর অন্য যেকোনো সংগঠন হোক, তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো প্রক্রিয়া দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মেনে নেবে না।
চার.
খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হামলা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, অশান্ত করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এখন মধ্যপ্রাচ্য সফর করতে হচ্ছে। বিশেষ করে সউদী আরবের দারস্থ হতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধিয়ে বিপাকে পড়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথা বলছেন। এটাকে একদিক থেকে মুসলমানদের বিজয় বলা যায়। কারণ, এই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের দমানোর জন্য হামলা চালিয়ে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো সমৃদ্ধ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে দিয়ে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। ইসরাইলি সৈন্যরা ফিলিস্তিনিদের পাখির মতো গুলি করে মারলেও টুঁ শব্দ করছে না। অথচ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় উদ্বাস্তুদের প্রতি তার এবং তার মিত্রদের দরদ ও মায়া উৎলে উঠেছে। সেখানে যদি মুসলমান থাকত, তাহলে মুখে মুখে লিপসার্ভিস দেয়া ছাড়া এ নিয়ে কোনো কথাই বলত না। যেভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে লিপ সার্ভিস দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সেই মুসলমান দেশগুলোর কাছেই সহযোগিতার জন্য আসতে হচ্ছে। প্রভাবশালী মুসলমান দেশগুলোর উচিৎ হবে ভারতসহ বিশ্বের যেসব দেশে মুসলমানরা নিগৃহীত ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেয়া। মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের যে লাখ লাখ শ্রমিক, ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে, মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ না করলে সেসব বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া। ইসলাম ও মুসলমানদের দমিয়ে রেখে যে বিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, তা বুঝিয়ে দেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।