Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ পরিকল্পনা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

জনগণের অর্থে সরকারের বিভিন্ন বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্ততবায়ন করা হয়। কিন্তু এসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং সুবিধাভোগী মানুষের লক্ষ্য অর্জনে কতটা সফল, সক্ষম ও সুফল বয়ে আনতে পারছে সরকারের তরফ থেকে তার সঠিক মূল্যায়ন খুব একটা হয়নি বললেই চলে। যথাসময়ে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অসন্তোষ প্রকাশ এবং দিক নির্দেশনা ও যথাসময়ে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাতে কোনো লাভ হয়নি। এবার সরকারের (আইএমইডি) প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ণ বিভাগ একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে তার কারণ অনুসন্ধানে সচেষ্ট হয়েছে। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার শুরুতেই গলদ বা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। গত ৫ বছরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জড়িত একশ’ সরকারি কর্মকর্তার তথ্যের ভিত্তিতে তৈরী হওয়ার রিপোর্টে ৭৬ জন মত দিয়েছেন, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রাথমিক কার্যক্রমের সাথে জড়িতরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং সুবিধাভোগীদের মতামত ও স্বার্থ বিবেচনা না করেই প্রকল্প অনুৃমোদনের জন্য জমা দেন এবং তা গ্রহণ করা হয়। মতামত প্রদানকারীদের শতকরা ৬১ থেকে ৮১ ভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির জন্য ফিজিবিলিটি ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।

পদ্মাসেতু, পদ্মাসেতু রেলসংযোগ, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মেগাপ্রকল্পগুলোও এই জরিপের আওতাভুক্ত ছিল। আমরা জানি, পদ্মাসেতু প্রকল্প ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৪ সালের মধ্যেই বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও সংস্থাসমুহের ঋণসহায়তা প্রস্তাব প্রত্যাহারের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। তবে তা এত দীর্ঘ সময় লাগার কথা নয়। অন্যান্য মেগা প্রকল্পে সে ধরনের সমস্যা না থাকলেও ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, ঢাকা র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত প্রকল্পগুলো প্রায় একদশক ধরে চলছে। যথাসময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। বার বার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ যেমন বৃদ্ধি হয়েছে, তেমনি প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে বিশাল অংকের অর্থের অপচয়ও করা হচ্ছে। এ ধরণের প্রক্রিয়ার কারণে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সম্ভাব্য সুবিধা থেকে একটি প্রজন্মকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের চাইতে কয়েকগুণ বেশি খরচ করেও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই যদি এক প্রজন্ম চলে যায়, তাহলে সেসব অবকাঠামোর সামাজিক-অর্থনৈতিক উপযোগিতা খর্ব হয়ে যায়।

শুধুমাত্র প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে আইএমইডি জরিপ কার্যক্রমে তথ্যের নির্মোহ সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও আলোচিত রিপোর্টে পুরনো চিত্রেরই প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বেরিয়ে এসেছে। ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন, ভারত-পাকিস্তান এবং ইউরোপেীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর চিত্র তুলে ধরে দেখিয়েছিল, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা ও সেতু নির্মিত হয় বাংলাদেশে। ঢাকা-চট্টগ্রাম. ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ এবং ব্যয়বৃদ্ধি দেশের আমদানি-রফতানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সাথে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের শতকরা ৮০ জনই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কথা স্বীকার করেছেন। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে যথাযথ মান রক্ষা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সাথে জড়িত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা ও সততা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠে এসেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রতিবছর যে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় করা হচ্ছে, তা অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা, দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাটের অপসংস্কৃতি বন্ধ করা জরুরি। যেকোনো প্রকল্প নেয়ার আগে দক্ষ প্রকল্প পরিচালকসহ লোকবল নিয়োগ, বাজেট নির্দিষ্টকরণ, প্রকল্পের যথাযথ নকশা প্রণয়ন এবং সময়মতো তা বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স ও রাজস্ব থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন অব্যবস্থাপনা ও অপচয় মেনে নেয়া যায় না।

 



 

Show all comments
  • আবুল ১৫ জুন, ২০২২, ৬:৩০ এএম says : 0
    আমাদের দেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হয়ে যেত। এ দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। দুর্নীতি কমালে দেশ অনেক উন্নত হবে
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল ১৫ জুন, ২০২২, ৬:৩৩ এএম says : 0
    এ দেশে এমন কোন সেক্টরে দুর্নীতি হয় না। এ দেশে সৎ লোকের বড় অভাব। সব ধান্দা সিটারে বড়ে গেছে। দুর্নীতি না কমাইতে দেশের আরো খারাপ পরিস্থিতি হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১৫ জুন, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    যথাসময়ে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অসন্তোষ প্রকাশ এবং দিক নির্দেশনা ও যথাসময়ে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাতে কোনো লাভ হয়নি। সরকারের এ ব্যাপারে আরো জোড়ালো ভূমিকা পালন করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১৫ জুন, ২০২২, ৬:৩৮ এএম says : 0
    যেকোনো প্রকল্প নেয়ার আগে দক্ষ প্রকল্প পরিচালকসহ লোকবল নিয়োগ, বাজেট নির্দিষ্টকরণ, প্রকল্পের যথাযথ নকশা প্রণয়ন এবং সময়মতো তা বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশ উন্নত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১৫ জুন, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
    আ.লীগ সরকার এদেশে অনেক উন্নত করেছে। কিন্তু দুর্নীতির কারণে মানুষ এর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়ন প্রকল্প

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন