Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২২, ১২:০৯ এএম

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কথা গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাবের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রদূত হাস বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাদের প্রত্যাশার কথা পুর্নব্যক্ত করেন। কিছুদিন আগে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত যৌথ কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকেও একই ধরণের মন্তব্য করা হয়েছে। বৈঠকে সরকারি প্রতিনিধিরা যাই বলুন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আবারো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত আইনের অস্বচ্ছ ও নিবর্তনমূলক ধারাগুলো সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। মানবাধিকার প্রশ্নে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এ ক্ষেত্রে অনেক বড় বার্তা। বাংলাদেশ এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখলেও মানবাধিকার পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া এ বিষয়ে তারা ছাড় দিতে নারাজ বলে জানিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে এক প্রকার রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও সরকারের সুবিধাভোগী কয়েকটি দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে একপাক্ষিক, জবরদস্তিমূলক নির্বাচনগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একযুগের বেশি সময় ধরে হাইব্রিড রিজিমের তকমা পাওয়া সরকারের সামনে এখন একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ঝুঁকি মোকাবেলার পাশাপাশি ইতিমধ্যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞার আওতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভাব-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং আগামী বছর একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত যাই বলুন, আমাদেরকে জাতীয় স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে কারো ভ’রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি দেশের মানুষের প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার সাথে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি যদি একই সমান্তরালে দাঁড়ায়, সে দাবি অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র একবছর কয়েকমাস বাকি। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনো দেখা যাচ্ছে না। এখনো সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে ব্লেইম গেম, উত্তেজনা ও হানাহানি চলছে। আইনের শাসন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধের পাশাপাশি সরকারিদল ও বিরোধীদলসমুহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। গত এক দশক ধরে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশ একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। অব্যহত মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক রির্জাভের উপর চাপবৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রতি সব বিরোধিদল এবং সাধারণ মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনেও সরকারি দলের প্রার্থীরা যেনতেন প্রকারে জিতে আসার জন্য প্রকাশ্যে বেপরোয়া কর্মকান্ডের ঘোষণা দিচ্ছেন। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে সরকারিদলের প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের ‘গুন্ডা’ বলে দাবি করছেন। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তেমন কোনো মাথাব্যথা বা দায়-দায়িত্ব আছে বলে মনে হয়না। স্থানীয় নির্বাচনেই যদি এ অবস্থা দেখা যায়, ক্ষমতা বদলের জাতীয় নির্বাচন যদি আবারো দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশকে একটি সম্ভাব্য সংকটের হাত থেকে বাঁচাতে হলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • আকিব ২ জুন, ২০২২, ১:২৯ এএম says : 0
    গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ করতে হলে সবার আগে তত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২ জুন, ২০২২, ১:৩০ এএম says : 0
    তত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ১:৩২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের ইতিহাস টানলেই বুঝা যায়, এ দেশে কোনো সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কাজেই তত্ববধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্টু নির্বাচন হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সুবিধাভোগী কয়েকটি দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ১:৪৭ এএম says : 0
    দলীয় সরকারের অধীনে একপাক্ষিক, জবরদস্তিমূলক নির্বাচনগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ১:৫৯ এএম says : 0
    দেশকে একটি সম্ভাব্য সংকটের হাত থেকে বাঁচাতে হলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ২:১৮ এএম says : 0
    রাজনৈতিক সংঘাত বন্ধ করতে হলে সরকারের উচিত হবে তত্ববধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেওয়া। নয়তোে এ দেশ আবার অস্থিতিশীল হবে। কারণ নির্দলীয় সরকার ছাড়া সরকারি দল ছাড়া কেউ নির্বাচনে আসতে চাই না
    Total Reply(0) Reply
  • আনিছ ২ জুন, ২০২২, ১:৪৯ এএম says : 0
    এ দেশে যে যাই বলুক তত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ জুন, ২০২২, ৬:০৫ পিএম says : 0
    আমরা মুসলিম আমরা নির্বাচন চাই না মুসলিমদের নির্বাচন হয় না মুসলিমদের হয় সিলেকশন ছয় অথবা 8 জন সূরা কমিটিতে থাকবে এবং তারা হবে কোরআন হাদিসের বিশারদ এবং বিশ্বের নানান বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী হবে তারা একজনকে আমির বানাবে সেই আমি একাই কোরআন হাদিস থেকে বিপদের সময় সব ধরনের বের করে দেশ চালাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন