পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে দেশের বিশিষ্ট্য নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একাত্মতা, সমাবেশ ও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের একমাত্র খেলার মাঠ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে বহুল ব্যবহৃত মাঠটিতে থানা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাচীর নির্মান করা হচ্ছে বলে গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। এই মাঠ রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এক মা ও তার কিশোর সন্তানকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে ১৩ ঘন্টা আটকে রেখে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি দেয়ার প্রতিবাদে দেশের বিশিষ্ট্য নাগরিক ও পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। খেলার মাঠটি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও তারা দিয়েছেন। কিশোর ছেলেসহ গ্রেফতার হওয়া মা তেঁতুলতলা মাঠ দখল করে সেখানে পুলিশের নির্মান কাজ করার দৃশ্যটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা অতিদ্রæত ভাইরাল হয়ে যায়। এ অপরাধেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে। এতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে দেশে-বিদেশে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা শহর বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণসহ হেন কোনো দূষণ নেই, যা ঢাকায় হচ্ছে না। ঢাকার বাসযোগ্যতা তলানিতে নেমে যাওয়া, পরিবেশ দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক নিরাপত্তার সংকট একদিনে ঘটেনি। শহরে অপরিকল্পিত আবাসন, শিল্পায়ন, নদী, খাল ও জলাভূমি বেদখল হওয়ার পাশাপাশি শহরের ভেতর থাকা খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলো দখল করে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মানের মধ্য দিয়ে শহরের বাসযোগ্য পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বলতে কিছু নেই। তেঁতুলতলা মাঠ সেই দখলবাজির অপসংস্কৃতি হিসেবেই নগরবাসী গণ্য করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলার মাঠ কমে যাওয়া, উন্মুক্ত জায়গা না থাকা, পুকুর ও লেকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তরুণদের খেলাধুলা ও বিচরণ করার সুযোগ কমে গেছে। এতে তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানসিকতার বিকাশ রুদ্ধ হচ্ছে। অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠছে। তেঁতুলতলা মাঠটি একসময় বেশ বড় ছিল। এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্মের সন্তানেরা খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। নানা অবৈধ দখলের কবলে পড়ে এটি ছোট হয়ে গেছে। এর মধ্যেই পুলিশের দখলদারিত্ব মাঠটিকে আরও বিপন্ন করে তুলবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবেশ বিনাশী ও অবৈধ দখল প্রতিহত করবে, সেখানে তারাই যদি এ কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। এমনিতেই রাজধানীর অনেক এলাকায় পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর আবাসনসহ অন্যান্য স্থাপনার আধিক্য রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, পুলিশের মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি জনমনে আরও নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করবে। গণদাবি উপেক্ষা করে মাঠ দখল করে পুলিশের ভবন নির্মাণ পুলিশ বাহিনীর ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র পাঠ্যক্রমে সীমাবদ্ধ নয়। শিশু-কিশোরদের সুস্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশে উন্মুক্ত খেলার মাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ইচ্ছা করলেই কেউ শিশুদের জন্য খেলার মাঠ দিতে পারবে না। তেঁতুলতলা খেলার মাঠটি স্থানীয় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশুদের জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে একমাত্র খেলার মাঠ, স্থানীয় কেউ মারা গেলে এখানে জানাজা হয়, ঈদের জামাত হয় এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি আয়োজিত হয়। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাঠ কোনোভাবেই হারিয়ে যেতে দেয়া যায় না এবং দেয়া উচিৎও নয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। যেখানে জনসংখ্যার অনুপাতে সেখানে অন্তত ৫টি খেলার মাঠ থাকা প্রয়োজন, সেখানে ক্ষুদ্র পরিসরের একমাত্র খেলার মাঠটি থানা ভবন নির্মাণের জন্য বেদখল করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশকে অবশ্যই জনস্বার্থ, জনসাধারণের মনোভাব এবং নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। পুলিশের ভাব-মর্যাদার স্বার্থেই মাঠে ভবন নির্মাণ করা থেকে সরে আসা উচিৎ। মাঠ রক্ষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। ঢাকা শহরকে পরিবেশ বান্ধব ও বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে পুলিশকে অবশ্যই ইতিবাচক ও জনবান্ধব ভূমিকা পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।