প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
কালো বোরখায় ঢাকা সারা শরীর। মুখ ঢাকা হিজাবে। শুধু জেগে আছে দুটি চোখ। স্পষ্ট, দৃঢ়, সাহসী দুই চোখ। আর জেগে আছে কণ্ঠস্বর। নিজের কথা, নিজের মতো আরও মেয়েদের কথা সোচ্চারে বলতে পারার মতো জোরালো স্বর আর সুর। কোনও আবরণ যাকে চেপে রাখতে পারেনি। হাজারও বাধা বিপত্তির মধ্যে এই হাতিয়ার সম্বল করেই লড়ে যাচ্ছেন ইভা বি, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বালোচ উপজাতির প্রথম র্যাপ গায়িকা।
কথিত আছে, এই দুনিয়ায় প্রথম ঈশ্বরের আদেশের বিরোধিতা করেছিল যে, সে দুনিয়ার প্রথম মেয়ে, ইভ। জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার নিষেধ সে মানেনি। সেই বিদ্রোহী মানবীর নামের অনুসরণেই তাঁর নাম, বলেন ইভা। আর ‘বি’ কথাটি বোঝায় তাঁর জাতি বালোচকে। সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে এমনিতেই যাদের জীবনে যাপনে বহু প্রতিকূলতা জড়িয়ে আছে। আর সেই উপজাতির মেয়েদের জীবন যে কেমন হবে, তা তো বলাই বাহুল্য। পিতৃতান্ত্রিকতার শক্তপোক্ত বেড়া বেঁধে রেখেছে তাদের।
ইভা নিজেও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি যে সমাজ থেকে উঠে এসেছেন, সেখানে খুব কম সংখ্যক মেয়েই চাকরি করে। র্যাপ গাওয়া মেয়েকে নিয়ে সেখানে নিন্দার ঝড় উঠবে, জানতেন তিনি। প্রথম বাধা এসেছিল বাড়ি থেকেই। ভাইয়ের প্রবল আপত্তির মুখে পড়ে নিজের গান গাওয়ার কথা লুকিয়ে রাখতেন ইভা। রেকর্ডিংয়ে যাওয়ার সময় বাড়িতে জানাতেন, ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন তিনি। তার ইউটিউব চ্যানেলে নতুন গান আপলোড করা মানেই বাড়িতে ধুন্ধুমার ঝগড়াঝাঁটি অনিবার্য ছিল। এমনকি যে গানটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে, রিলিজ করার তিনদিনের মধ্যে যার ভিউ পৌঁছয় ৩.২ মিলিয়নে, সেই ‘কানা ইয়ারি’ গানটি নিয়েও মুশকিলে পড়েছিলেন ইভা। কোক স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করার আগে কীভাবে রিহার্সাল করবেন বুঝতে পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ বন্ধুর বিয়ে আছে এই মিথ্যে অজুহাত দিয়ে রিহার্সাল চালিয়ে যান ইভা।
আমেরিকান র্যাপার এমিনেম-এর কিছু গান শুনেই র্যাপ গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইভা বি। ২০১৪ সালে গান লেখা এবং গান গাওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভাইয়ের কটূক্তি শুনতে শুনতে পরের বছরেই গান গাওয়া থামিয়ে দেন তিনি। চার বছর নিজেকে চুপ করিয়ে রেখেছিলেন ইভা। কিন্তু তার উপজাতির মেয়েরা, তার দেশের মেয়েরা কীভাবে আছে, তা নিয়ে ক্রমশ কথা জমে উঠছিল তার ভিতরে। আর তাই গান লেখা চলছিলই। গানেই তিনি লেখেন ‘কলম বোলেগা’ অর্থাৎ ‘কলম কথা বলবে’। সুর থামলেও, কলমকেই হাতিয়ার করে মেয়েদের কথা বলে চলেছিলেন তিনি। আর এই লড়াইতে তাঁকে আগাগোড়া যিনি সমর্থন করে এসেছিলেন, তিনি নিজেও মহিলা। তিন ইভার মা। হয়তো সেইজন্যেই ডান হাতের উল্কিতে ‘মা’ কথাটি লিখে রেখেছেন পাকিস্তানের এই জনপ্রিয় শিল্পী।
ভাইয়ের থেকে গান গাওয়ার অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল এক শর্তে, মাথায় থাকতে হবে হিজাব। সেই শর্ত মেনে নিয়েই গান গাইতে শুরু করেছিলেন ইভা বি। তিনি বলেন, তার প্রতিভাকে তো হিজাব কেড়ে নিতে পারবে না। হিজাব পরেই র্যাপ গান গেয়ে প্রতিকূলতার বেড়া ভাঙছেন তিনি। তার বক্তব্য, কোনও পুরুষের মা, স্ত্রী, মেয়ে এমন পরিচয়ের আড়ালে চাপা পড়ে যায় অনেক মেয়ের প্রতিভাই। কিন্তু সমাজে নিজের স্থান করে নেওয়ার জন্য লড়তে হবে মেয়েদের, এমনটাই মনে করেন ইভা বি। তার মতে, অধিকার না দিলে তা ছিনিয়ে নিতে হবে। তার বসতি ল্যারি এতদিন কুখ্যাত ছিল ড্রাগ, গ্যাংস্টার আর সন্ত্রাসের জন্য। আর সেই এলাকাকেই এবার অন্যরকম পরিচিতি দিয়েছেন ইভা বি। সূত্র: ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।