Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

টিকা কার্যক্রম গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। এ প্রেক্ষিতে, বুস্টার ডোজসহ স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রম বেগবান করা দরকার। দেখা যাচ্ছে, সার্ভার জটিলতার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক অনেকে সময়মতো এসএমএস পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সার্ভার সমস্যার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে এ ধরনের জটিলতা কেন হলো, তার সঠিক কারণ অগোচরে থেকে যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে বলা হয়, টিকার নিবন্ধন, এসএমএসসহ সবকিছু আইটি খাতের লোকজনর সহায়তায় করা হয়। সম্প্রতি আইটি খাতের লোকজন দুইগুণ বিল চাচ্ছে। এ নিয়ে জটিলতার পাশাপাশি বুস্টার ডোজ নিয়ে সার্ভারে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় বুস্টার ডোজ কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর টিকা নিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যেখানে মুহূর্তে এসএমএসসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতর এমন প্রতিষ্ঠানকে কেন নিয়োজিত করেছে, যারা যথাযথভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পারছে না। উল্টো দ্বিগুণ বিল চেয়ে জটিলতার সৃষ্টি করছে। এতে বোঝা যায়, আইটি খাত বিলের কারণে এসএমএস পাঠাতে এক ধরনের জিম্মি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অকাম্য।

দুই ডোজ গ্রহণকারিদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ঝুঁকির মাত্রা অনেক কম বলে গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ বাড়তি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। করোনা টিকা কার্যক্রমের শুরুতেও সার্ভার জটিলতার কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এখন প্রায় দুই বছর পেরিয়ে এসে বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রেও সে একই অজুহাত দেখানো হচ্ছে। যথাসময়ে টিকা গ্রহণে ইচ্ছুকরা টিকা নিতে পারছে না। দেশে টিকার কোনো ঘাটতি নেই। এ অবস্থায় দ্রুত টিকা প্রদান কার্যক্রম জরুরি। টিকা সংরক্ষণ এবং কার্যকারিতারও নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। উন্নত বিশ্বে সংরক্ষিত টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা ফেলে দিচ্ছে। আমাদের দেশের সেই সামর্থ্য নেই। পর্যাপ্ত টিকা থাকার পরও তা যদি প্রদানে বিলম্ব হয়, তাহলে তার মেয়াদও শেষ হয়ে আসবে। ফলে টিকার কার্যকারিতা থাকবে না। ফেলে দিতে হবে। এমতাবস্থায় টিকা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, শুধু টিকা প্রদানের সিস্টেম জটিলতার কারণে কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না। এতে করোনার সংক্রম বাড়বে বৈ কমবে না। এর দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে। সরকার বাড়তি সুরক্ষার জন্য বুস্টারডোজ প্রদানের ক্ষেত্রে বয়স সীমা পর্যায়ক্রমে ৬০ বছর থেকে ৪০ বছরে নামিয়ে এনেছে। এতে টিকা গ্রহীতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু সার্ভার জটিলতার কারণে টিকা প্রদান গতিশীল হচ্ছে না। দেশে অন্তত ৯ কোটি টিকা মজুদ থাকলেও বুস্টার ডোজ চালু হওয়ার পর একমাসে মাত্র ১৫ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত টিকা সংরক্ষণ করায় কোটি কোটি টিকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের উদ্বৃত্ত টিকা বাংলাদেশেও উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছে। টিকা কার্যক্রমে গতিহীনতা, অস্বচ্ছতা বা সার্ভার জটিলতার কারণে মাসের পর মাস ধরে সময়ক্ষেপণ করা হলে এসব টিকার মেয়াদও শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্ব যেমন ডিজাটালাইজেশনে এগিয়ে চলেছে, একইভাবে বাংলাদেশও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় চলছে। এহেন বাস্তবতায় সার্ভার জটিলতা বা অ্যাপ দুর্বলতার কারণে টিকা কার্যক্রমের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনভোগান্তি ও সংক্রমণ বেড়ে দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা মেনে নেয়া যায় না। সার্ভার জটিলতা বা অ্যাপ দুর্বলতার নেপথ্যের কারণগুলো দূর করতে না পারলে কোটি কোটি ডোজ টিকার মজুদ এবং প্রদান কার্যক্রমের সামগ্রিক প্রত্যাশা ফলপ্রসূ হবে না। টিকার সংকট না থাকলেও সার্ভারের সমস্যার কারণে অর্ধকোটি মানুষ বুস্টার ডোজের এসএমএস পাচ্ছেন না বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে। প্রত্যেক দেশেই করোনা টিকা কার্যক্রমের ডিজিটাল নিবন্ধন ও ডেটা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেসব দেশে এমন জটিলতার কথা শোনা যায় না। আমাদের দেশেই যত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমরা মনে করি, টিকা কার্যক্রম গতিশীল করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দরকার। দেশের অর্থ ব্যয় করে কেনা টিকা সময়মতো দেয়া যাবে না, কিংবা টিকা প্রদানের জটিলতার মধ্যে আটকে পড়বে, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। টিকা প্রদানের ধীর গতির ক্ষেত্রে যেসব কারণ রয়েছে, তা অবিলম্বে দূর করতে হবে। মানুষ যাতে সহজে টিকা গ্রহণ করতে পারে, এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। টিকার নিবন্ধন ও এসএমএস পাঠানোর যেসব জটিলতা রয়েছে তা দ্রুত নিরসন করতে হবে। ধীরগতির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বুস্টার ডোজসহ সামগ্রিক টিকা কার্যক্রমে গতিশীলতা নিশ্চিত করতে অহেতুক সময় ক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। টিকা কার্যক্রমকে সর্বধারণের জন্য উন্মুক্ত ও সহজ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিকা


আরও
আরও পড়ুন