Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

স্বতঃস্ফূর্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কি?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৭ পিএম

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে প্রেসিডেন্টের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ চলাকালীন গত মাসের শেষের দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম ধাপের নির্বাচন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এসব নির্বাচন কেমন হয়েছে ও হচ্ছে, এমন প্রশ্নে অনেকে হয়তো বিরক্তবোধ করবেন। তারা একবাক্যে বলবেন, দেশে কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থা কিংবা ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। বরং নির্বাচনের নামে যে খেলা হচ্ছে, তা দেখতেই তারা বেশি আগ্রহী। নির্বাচনে প্রার্থী এবং তার দলবলের মারামারি, কাটাকাটি, ভোটকেন্দ্র দখল করে কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়ছে, তাই তারা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে কেউ নেই। সেমসাইড বা নিজ দলের প্রার্থীরাই একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ ধাপ নির্বাচন শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যথার্থই বলেছেন, দেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প আওয়ামী লীগই, অন্য কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ফেল করলেও বিদ্রোহী হিসেবে যারা জয়লাভ করেছে, তারাও আওয়ামী লীগেরই। নির্বাচনটি যেহেতু আওয়ামী লীগের নিজস্ব বা দলীয় কমিটির নির্বাচন নয়, বহু দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার এবং রাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন, তাই এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন এবং বিতর্ক থাকা স্বাভাবিক। যদিও আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন বলে থাকে, অন্য দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তাদের কিছু করার নেই। এটা যার যার ইচ্ছা। এ কথা তারা বলে না, বলতে চায় না, বিরোধীদলগুলো কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। এর কারণ হচ্ছে, নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর বিরোধীদলগুলোর কোনো আস্থা নেই, নির্বাচন কমিশনকেও তারা আস্থায় নিতে পারেনি। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না, নির্বাচন মানেই ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য এবং তাদের জয় জয়কার, এটা প্রমাণিত হয়ে আসছে।

দুই.
ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় হলেও, সামগ্রিকভাবে কিন্তু আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে। তার দলীয় ঐক্যের প্রতীক নৌকার পরাজয় ঘটেছে। সাধারণ মানুষ এখন এটাই মনে করবে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজ দলের সমর্থক ও ভোটাররাই নৌকায় ভোট দেয়নি। যদি নির্বাচনটি সবদলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতো, তাহলে ভোটাররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যেত এবং সরকারি দল হয়ত জয়লাভ করত বা পরাজয় বরণ করত। বিরোধীদলের প্রার্থীরাও হয় পরাজিত হতো, নাহলে বিজয় লাভ করত। এতে সরকার ও বিরোধীদলের জনসমর্থন কতটুকু তারও পরিমাপ হয়ে যেত। সরকার হয়তো জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারি দলের পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে এবং জানে বলেই একতরফা নির্বাচন করে যাচ্ছে। সে হয়তো এটা মনে করছে, আমার এতো মানুষের ভোটের প্রয়োজন নেই। নিজ ঘরের ভোটারদের ভোট পেলেই হলো। এ ধরনের মানোভাব দেশের গণতন্ত্র এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মোটেই ভালো নয়। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সরকারের মধ্যে এমন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন নির্বাচন আর কতকাল চলবে? তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারের নিজের ঘরেই নিজের পরাজয় ঘটছে। এটা তার জন্য লজ্জারও বটে। এতে এটা প্রমানিত হচ্ছে, সরকার একদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে একদলীয় নির্বাচনটিও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে পারছে না। নিজেদের মধ্যেই মারামারি, হানাহানি, প্রাণহানী হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। নিজেদের মধ্যকার নির্বাচনে এমন সহিংসতা কি মানা যায়? পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিরোধীদলগুলো নির্বাচনে না গিয়ে ভালো করেছে। তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা আরও বিস্তৃত হতো। ফলে সাধারণ মানুষ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার লড়াই এবং তার ফলাফল দেখতেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। যেসব জায়াগায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়নি, সেখানে তারা শক্তির লড়াইয়ে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় দেখেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শুরু থেকেই তারা এই পরাজয় দেখে আসছে। চতুর্থ ধাপেও এসে তা দেখেছে। এ ধাপে ৮৩৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা নৌকা বিজয়ী হয়েছে ৩৯৬টিতে। এর মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৪৮ জন রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে ৩৯০টিতে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তারা এখন কি করবে? যে ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে লড়েছে এবং পেয়েছে, সেই ক্ষমতা কি কাজে লাগাবে? তাদের দ্বারা জনগণ কিভাবে উপকৃত হবে? সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোকে সামাজিক নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হয়। ইউনিয়নের মানুষের উন্নয়ন ও সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ানোই চেয়ারম্যানের কাজ। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পরিচিত এবং ঘনিষ্টজনও বটে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে যখন খুনোখুনি, সংঘাত-সংঘর্ষ হয়, তখন তাদের মধ্যে চিরশত্রুতা জন্ম নেয়। যে প্রার্থীর পরিবারের কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন খুন করে, তখন তা মেনে নেয়া কঠিন। পারস্পরিক এই শত্রুতাকে উস্কে দিয়েছে, একতরফা ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। এখন একতরফা নির্বাচন মানেই সরকারি দলের ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে ওঠা এবং যা খুশি তা করে বেড়ানো। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি হওয়া। অন্যদিকে, দলীয় প্রতীকের নির্বাচন মানেই বিভক্তি এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে বল প্রয়োগ করা। এতে সামাজিক নির্বাচনটি আর সামাজিক ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের মধ্যে থাকছে না। বিগত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনের কারণে অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। পারস্পরিক সুসম্পর্কে ফাটল ধরেছে। শত্রুতা বেড়েছে। এর জন্য দায়ী দলীয় প্রতীক ও একতরফা নির্বাচন।

তিন.
আগামী মাসের মাঝামাঝি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। হুদা কমিশন হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচন কমিশন এতটাই ব্যর্থ যে, সে দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। এর আগে রকিব কমিশনও একই কাজ করেছে। এই দুই কমিশনকে ইতোমধ্যে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা দেশের ইতিহাসে ‘মেরুদণ্ডহীন’ কমিশন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অনেকে ‘নির্লজ্জ’ কমিশন হিসেবেও বলে থাকেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানে প্রদত্ত তাদের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা তারা ধারণ করেনি বা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিটি বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন শেষে নির্লজ্জের মতো সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে বলে বলেছে। সাংবিধানিক পদে থেকে এমন অসত্য বিবৃতি দিতে আর কোনো নির্বাচন কমিশনকে দিতে দেখা যায়নি। এমনকি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলেও নির্বাচন কমিশনকে এতটা নির্লজ্জ হয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সে সময়েও এমন একতরফা নির্বাচন হয়নি। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তাদের প্রার্থীরা জয় পেয়েছে। দুঃখের বিষয়, এই দুই নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর দায় ক্ষমতাসীন দলও এড়াতে পারে না। দেশে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতার কারণেই নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে এবং একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। সরকারের মধ্যে এমন প্রবণতাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘বিরাজনীতিকরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যেখানে বিরোধীদলের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবে না। থাকলেও তাদের দমিয়ে বা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে হবে। অথচ বিএনপি’র প্রথম মেয়াদে মাগুরার একটি আসনে অনিয়ম হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধীদল দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এই একটি আসনে বিতর্কিত নির্বাচনের কারণে বিএনপি ক্ষমতা হারিয়েছিল। অন্যদিকে, এই আওয়ামী লীগের শাসনামলেই দুই দুইটি বিনাভোট, অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে কি হয়েছে এবং হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ দায় নির্বাচন কমিশনতো বটেই, আওয়ামী লীগও এড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগের দায় এ কারণে যে, তার শাসনামলে নির্বাচন ব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারা এবং একতরফা নির্বাচনের অপসংস্কৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি এ বদনামও নিতে হবে, সে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেনি। বরং তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রেসিডেন্টের যে সংলাপ চলছে, তাতে বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপিসহ বেশ কিছু দল অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি সংলাপকে ‘নাটক’ ও ‘প্রহসন’ হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যান্য দল একে অর্থহীন বলেছে। তারা বলছে, ২০১২ ও ২০১৭ সালেও প্রেসিডেন্ট এ ধরনের সংলাপ আয়োজন করেছিলেন। তাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্যান্য সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হয়। এবারও প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। তাই এ সংলাপ নিতান্তই ‘লোক দেখানো’ ছাড়া কিছু নয়। সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে কে কার চেয়ে এগিয়ে থাকবে, এ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। নতুন নির্বাচন কমিশনও যে সরকারের ইচ্ছায় একই রকম হবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সংলাপে অংশ না নেয়া দলগুলোর এই মতের সাথে সচেতন ও সাধারণ মানুষও একমত। কারণ, তারাও দেখেছে প্রেসিডেন্টের সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়, সে কমিশন ভোটের অধিকার সুরক্ষার পরিবর্তে কেড়ে নেয়। তারা দেখেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এমন করেছে যে, সাধারণ মানুষ দূরে থাক, ক্ষমতাসীন দলেরও অনেক সমর্থক এবং নেতা-কর্মী ভোট দিতে যায় না। তারা মনে করে, তাদের ভোট দেয়ার দরকার নেই। ভোট না দিলেও তাদের প্রার্থী জিতবে বা সিলেক্টেড হয়ে যাবে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এখন এমন ভয়াবহ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এর দায় বিগত এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। এক সময় বিএনপির শাসনামলে আজিজ কমিশনকে নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদলগুলো অনেক হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা করেছে। ‘পাগলা আজিজ’ বলে বিদ্রুপ করেছে। বলা হয়েছে, ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন কমিশন। তবে ইতিহাসও যে বদলে দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করা যায়, তা আওয়ামী লীগের শাসনামলে গঠিত দুই নির্বাচন কমিশন দেখিয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে, তা এখন কল্পনা করা যায় না। যেমনটি কল্পনা করা যায়নি, রাতের আঁধারে হয়ে যাওয়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এখন সাধারণ মানুষের অপেক্ষা ও দেখার পালা, সামনের জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হয়।

চার.
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্ষমতাসীন দল আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল তার অনুকূলে দিতে পারে, এমন নির্বাচন কমিশনই গঠন করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন এমন ব্যক্তিদের নিয়েই গঠিত হবে, যাদের বৈশিষ্ট্য হবে সরকারের অনুগত্য করা এবং সেদিকে চেয়ে থাকা। তারা সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে যাবে না এবং তাদের মেরুদণ্ড দুর্বল ও মোমের মতোই নরম থাকবে। সাধারণ মানুষও তাই মনে করে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন যেমন সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়াকে প্রলম্বিত করবে, তেমনি দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও দুর্বল করে তুলবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, বর্হিবিশ্বে নির্বাচন নিয়ে দেশের ভাবমর্যাদার ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে, তা আরও নেতিবাচকতার দিকে ঠেলে দেবে। ক্ষমতাসীন দল ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে তার মতো করে যত ইতিবাচক কথাই বলুক না কেন, তা যে দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। এ নিয়ে উন্নত বিশ্বের দেশসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন প্রকাশ তার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা কি এভাবেই থেকে যাবে? নাকি এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা করা হবে, যাতে সবদলের অংশগ্রহণ থাকবে, ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, এ আশা সুদূরপরাহতই মনে হচ্ছে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন