পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে পুলিশ ও বিজিবিতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের ডোপ টেস্টের সম্মুখীন হতে হয়। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির দ্বিতীয় সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্টের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে মাদকসেবীদের জন্য সরকারি চাকরির দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঠাঁই পাবে না মাদকাসক্তরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় যাতে অভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় তা নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসায় মাদকবিরোধী প্রচার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের গায়ে ‘মাদককে না বলুন’ প্রচার যোগ করার পক্ষে মত দেওয়া হয়। বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মাদকসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন সচিবও তাদের মন্ত্রণালয়ের অবস্থান প্রকাশ করেন। তারা মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠক শেষে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাকরিতে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তা শুরু হবে। মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গণমাধ্যমে চালানো হবে প্রচার। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে। বলা বাহুল্য, সিদ্ধান্তটি প্রশংসার দাবিদার। তবে এটি যাতে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোয় পরিণত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মাদককে বলা হয় মরণনেশা। এই নেশায় যারা একবার আসক্ত হয়, তারা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। বিজ্ঞজনদের কোনো পরামর্শ-উপদেশ এই নেশা আসক্তদের সুপথে ফেরাতে পারে না। এভাবে সমাজে বেড়ে যায় মাদকসেবীর সংখ্যা। এই মাদক এখনো দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তার লাভ করছে। মানুষ আসক্ত হচ্ছে এই মরণনেশায়। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রধান মাদকদ্রব্য হিসেবে ইয়াবার নাম বেশি প্রচলিত। এর আগে হেরোইন নামে এক মাদক দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেছিল মাদকসেবীদের মাঝে। এই নেশায় একবার আসক্ত হলে মাদকসেবীরা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতো। অবশেষে এসব মাদককে অতিক্রম করে সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করে এক নম্বর স্থান দখল করে আছে ইয়াবা।
বিদায়ী বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল নতুন নামের কয়েক ধরনের মাদক, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নতুন করে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও ডার্কওয়েভে বিক্রি হচ্ছে নতুন ধরনের সব মাদক। দেশে এতদিন মূলত পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার থেকে মাদক আসলেও এখন পশ্চিমাবিশ্ব থেকেও আসছে মাদকের চালান। স্ক্যানার না থাকায় একাধিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে তা সারাদেশে। কৌশলী কারবারিরা নিজেদের কাছে মাদক না রেখে নানা বয়সি শিক্ষার্থী ও তরুণদের ব্যবহার করে বাজার দখল করায় মূল হোতারা বরাবরই অধরা থাকছে।
সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার পরও দেশে মাদকের ব্যবহার ও পাচার সন্তোষজনক মাত্রায় রোধ করা যায়নি। সরাসরি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এত সব কঠোর সিদ্ধান্তের পরও থামানো যাচ্ছে না মাদকের কারবার। দেশে আইনি শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি থাকতে পারে না। তারা যতই ক্ষমতাধর হোক আইনি শক্তির কাছে এক সময় তাদের মাথা নত করতে হবে। সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীরা যেমন পাচারের কৌশল পাল্টায়, তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচক্ষণ কর্মকর্তাদেরও কৌশলী হতে হবে। তাহলেই তাদের পরাজিত করা সম্ভব। আমরা মনে করি, সরকারের নীতি-কৌশলের রূপান্তর ঘটিয়ে হলেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে আগামী দিনের কর্ণধার দেশের যুব সমাজ।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।