গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল কাসেম সোলায়মানির দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জেনারেল কাসেম সোলায়মানির মতো ন্যায় দক্ষ সেনানায়ক সচরাচর পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন ‘সেল্ফ মেইড ম্যান’ ও ‘সেল্ফ মেইড জেনারেল’। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও মেধায় বলীয়ান ছিলেন। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়েই তিনি নিজেকে গঠন করেছিলেন এবং তিনি তাঁর ভূমিকা পালন করে শাহাদাত বরণ করেছেন। ওয়েবিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাফার বলেন, জেনারেল কাসেম সোলায়মানি এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি শাহাদাতের পর লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামের অধিবাসী ও সাধারণ পরিবারের সদস্য। তিনি এটি নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি ২২ বছর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তিনি নিজেকে একজন সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তাঁর অসিয়তনামায় তিনি তাঁর কবরের উপর সৈনিক পদবি লিখার জন্য বলেন। তিনি সামরিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তাঁর কারণেই আমেরিকার বড় বড় পরিকল্পনা ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানসহ অনেক দেশ তাদের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে জেনারেল কাসেম সোলায়মানির কাছে ঋণী। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই নামে কম্পিত ছিলেন। আর এজন্যই ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সরকারি সফরে থাকাকালীন তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন। কিন্তু এটি ছিল তার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
তিনি আরও বলেন, ৩ জানুয়ারি জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে হত্যার পর আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই শুধু নয়, আমেরিকাবাসীও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে মিত্রবাহিনী দ্রুত সরে যেতে বাধ্য হয়।
আর ৮ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আইন আল-আসাদে ইরানি হামলায় মার্কিনিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় যা তারা গোপন করে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে এটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর বর্তমানে মার্কিনিদের এমন অবস্থা হয়েছে যে, বিশ্ববাসী আর তাকে সুপার পাওয়ার মনে করে না। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত বলেন, জেনারেল কাসেম সোলায়মানির শাহাদাত একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি ইতিহাসের পাতা থেকে বিস্মৃত হওয়ার কোনো ঘটনা নয়। তিনি ছিলেন এমন এক বীর যার যাকে নিয়ে কেবল ইরানিরা নয় বরং বিশ্বের সকল মানুষ গর্ববোধ করে। তিনি নিজ চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও প্রতিভার গুণে মুসলিম বিশ্বের আদর্শে পরিণত হয়েছেন। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর জানাযায় লক্ষ-কোটি ইরানির উপস্থিতি ইরানি জাতির ঐক্য, হৃদ্যতা ও সংহতিকে প্রকাশ করে। ইসলামি বিপ্লব এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে যার মাধ্যমে জেনারেল সোলায়মানির মতো ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। আর এ ধরনের ব্যক্তিত্ব সারা বিশ্বের সকল জাতির জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে রয়ে যায়।
রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক জনাব সিরাজুল ইসলাম বলেন, শহীদ কাসেম সোলায়মানি একজন আদর্শ সেনানায়কে পরিণত হয়েছিলেন যার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তাঁর শাহাদাতের পর প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা দেখলে। কয়েকদিন ধরে সংবাদ ও টক শোগুলোতে তাঁর উপর আলোচনা চলতে থাকে। এসব আলোচনায় রাজনীতিক, কুটনীতিক বড় বড় ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর ভূমিকা প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা রাখেন। পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা চোখে পড়ে না। মধ্যপাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আধিপত্যবাদী শক্তি ‘নিউ মিড্ল ইস্ট প্ল্যান’ সফল করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটাকে নস্যাৎ করে দেন জেনারেল সোলায়মানি। রাজনৈতিক, সামরিক সর্বদিক থেকে পরাশক্তির নীলনকশা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ান জেনারেল সোলায়মানি। যার কারণে তারা তাঁকে হত্যা করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে. এম সাইফুল ইসলাম খান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সাংবাদিক জামালউদ্দিন বারী, রাজধানীর মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও খুলনা ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ ইব্রাহিম খলিল রাজাভী। ওয়েবিনারে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করবেন বিশিষ্ট ক্বারী এ. কে. এম. ফিরোজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।