পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বামী ও শিশুসন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকার এক গৃহবধূ। পর্যটনের ভর মৌসুমে এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটায় পর্যটকদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। এটা পুরো পর্যটনের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। গত বুধবার সকালে স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা থেকে কক্সবাজার যান ঐ গৃহবধূ। শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে তারা উঠেন। বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে বের হলে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়ে। এর জের ধরে সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গল্ফ মাঠের সামনে থেকে কয়েকজন যুবক সন্তানসহ তার স্বামীকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। গৃহবধূকে আরেকটি অটোরিকশায় তিন যুবক তুলে নিয়ে গল্ফ মাঠের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে গণধর্ষণ করে। পরে সেখান থেকে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে সেখানেও গণধর্ষণ করে। ধর্ষকরা ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলে গৃহবধূকে হুমকি দিয়ে বাইরে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে চলে যায়। হোটেলের তিন তালার জানালা দিয়ে এক যুবককে ডেকে সহায়তা চেয়ে তার সহযোগিতায় দরজা খুলে বের হয়ে তিনি ৯৯৯-এ ফোন দেন। এ সময় পুলিশ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে না এসে থানায় সাধারণ ডাইরি করার কথা বলে। পরি তিনি র্যাব-১৫ কে ফোন করলে তারা এসে তাকে এবং পর্যটন গল্ফ মাঠে থাকা তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শানাক্ত করার কথা জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনার মূল হোতা সন্ত্রাসী আশিক ও তার অন্যান্য সহযোগিকে গ্রেফতার করার অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজারে পর্যটনের এ সময়ে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রমানিত হয়, পর্যটন এলাকাগুলোর নিরাপত্তা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। শুধু কক্সবাজার নয়, বান্দরবানসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী ঘটনায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত পর্যটন মৌসুমে দেশের ভ্রমণ পিয়াসীদের প্রথম পছন্দ থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণ তাদের কাছে আকর্ষণীয়। শুধু দেশি পর্যটকই নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও এ সমুদ্র সৈকতের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। এর সূত্র ধরেই কক্সবাজার হয়ে উঠেছে পর্যটন নগরী এবং একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকা হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের মোটেল ও রিসোর্ট। কক্সবাজার শহর ও সৈকতের তীর ঘেঁষে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। পরিণত হয়েছে পর্যটনের অর্থনৈতিক অঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষের। এখানে এসে যদি পর্যটকরা নিরাপদবোধ না করেন এবং নির্বিঘ্নে ঘুরতে না পারেন, তাহলে পুরো পর্যটন শিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পর্যটন খাতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের। আয় করেছে ৯৫০.৭ বিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির জন্য পর্যটন খাতটি ব্যাপক সম্ভাবনাময়। অথচ এ খাতে পর্যটকদের জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও শৃঙ্খলা থাকা দরকার, তা খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে, যাতায়াত, থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংকট ও সমস্যা রয়েছে। পর্যটন মৌসুমকে পুঁজি করে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো ব্যাপকহারে রুম ভাড়া এবং খাবার-দাবারের দাম বৃদ্ধি করে দেয়। ছুটির দিনগুলোতে সব ধরনের হোটেল-মোটেলের রুম ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা সংকট। গৃহবধূর গণধর্ষণের ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। প্রশ্ন উঠেছে, পর্যটন স্পটগুলোতে যদি স্বচ্ছন্দে পর্যটকরা ঘুরেবেড়াতে না পারে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ কি? স্থানীয় মাস্তান-সন্ত্রাসীদের তালিকা এবং তাদের অপকর্ম সম্পর্কে নিরাপত্তা বাহিনীর অজানা থাকার কথা নয়। এ অনুযায়ী, পর্যটন মৌসুমে তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি ছিল। এ সতর্কতায় যে ঘাটতি ছিল, তা গৃহবধূর গণধর্ষণের ঘটনা থেকে বোঝা যায়। এ ধরনের ঘটনার বাইরেও পর্যটকরা স্থানীয় মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন। এসব ঘটনা অগোচরে থেকে যায়। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘটনা ঘটলেই কেবল তা প্রকাশিত হয়।
গৃহবধূর গণধর্ষণের ঘটনা শুধু কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রেই নয়, এর বিরূপ প্রভাব দেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও পড়বে। ভ্রমণ করতে গিয়ে বিপদে পড়ার শঙ্কা পর্যটকদের ভ্রমণ স্পৃহা কমিয়ে দেবে। কক্সবাজারে ঘটনাকে শুধুমাত্র গণধর্ষণ বা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করার কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যারা গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা জানা গেছে। তারা যে দীর্ঘদিন ধরেই কক্সবাজারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাও প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে কেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সেখানের হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ ও সমিতিরও রয়েছে। তারা কেবল ব্যবসা করার ধান্ধা করবে, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়টি দেখবে না, তা হতে পারে না। কক্সবাজারে গণধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে এবং এর সাথে যারা জড়িত, তারা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকরা যাতে নির্ভয়ে স্বস্তি নিয়ে ভ্রমণ করতে পারে, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের অপ্রিতীকর ঘটনায় পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।