Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সময়মতো পাঠ্যবই সরবরাহে অনিশ্চয়তা কেন

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বছরের তথা শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন পাঠ্যবই তুলে দেয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে সরকার। পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে বই তুলে দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড কার্যত বই উৎসবে রূপান্তরিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যত্যয় দেয়া দিয়েছে। যথাসময়ে বই বিতরন কার্যক্রম শুরু হলেও জানুয়ারি মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থীর হাতে সব তুলে দিতে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এসিটিবি)। বিগত সময়ের নানা গাফিলতি, ত্রæটি-বিচ্যুতি ও ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার আলোকে একদশক পেরিয়ে এসে বই বিতরণে বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা ও অনিশ্চয়তা দূর হওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। গতকাল ইনকিলাবসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে এলেও এ বছর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া এখনো খুবই অনিশ্চিত। বছরের প্রথমদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার অনিশ্চয়তা এ ক্ষেত্রে সরকারের অর্জনকে ¤øান করে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই পৌছে দেয়ার বিশাল আয়োজনের শুরুর বছরগুলোতে কৃতিত্বের সাথে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও এখনকার অনিশ্চয়তা ও ব্যর্থতা দু:খজনক।

বিগত দুই বছর করোনার কারণে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক নাগাড়ে দেড়বছর ধরে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।ও মিক্রনের মত অতি সংক্রামক নতুন ধরণ ছড়িয়ে পড়ায় করোনার ঝুঁকি পুরোপুরি দূর না হলেও বাংলাদেশে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বছরের প্রথম দিন থেকেই বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু এনসিটিবি তথা শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ এখনো অনিশ্চিত হওয়ায় বিগত এক দশকের মধ্যে বই উৎসবের যথাযথ প্রত্যাশা ও জৌলুসে অনেকটাই ভাটা পড়তে যাচ্ছে বলে প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনাকালীন লকডাউনের সময়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই মূদ্রণের কাজ আগেভাগে শেষ করার সুযোগ থাকলেও শিক্ষামন্ত্রনালয় ও এনসিটিবি যথাসময়ে উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে তড়িঘড়ি করে পাঠ্যবই মূদ্রণের কারণে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবইয়ে অনেক অবাঞ্ছিত ভুলভ্রান্তি দেখা গেছে। এসব কারণে ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়াও দেয়া গেছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যানের কাছে হাইকোর্টের তরফ থেকে এ বিষয়ে রুলসহ কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। শেষ সময়ে এসে বই মূদ্রণের দরপত্র আহŸান করা এবং অল্প সময়ের মধ্যে বইছাপা ও সরবরাহের কারণে আবারো ভুলভ্রান্তি দেখা গেলে তার দায় সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার সোপান। শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য, বাণিজ্য, অস্বচ্ছতা, অব্যবস্থাপনা, দলবাজি ও দুর্নীতির কারণে দেশে নানাবিধ সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় সময়োপযোগী সংস্কারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নৈতিক মানসম্পন্ন কর্মমুখী শিক্ষার পাঠ্যক্রম, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা অনেক মূল্য দিয়ে বাজার থেকে বই কিনতে বাধ্য হবে। এভাবেই বিনামূল্যে নিশ্চিত বই সরবরাহের জাতীয় কার্যক্রমকে অনিশ্চিত করে তোলার মধ্য দিয়ে একটি মহল মোটা অংকের মুনাফাবাজির সুযোগ গ্রহণ করবে। জনগণের ট্যাক্সে পরিচালিত হাজার কোটি টাকার প্রশংসনীয় প্রকল্পে এমন অনিশ্চয়তা ও অপরিনামদর্শিতার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ষষ্ট শ্রেণী থেকে নবম ও মাদরাসা বোর্ড, ভোকেশনাল ও প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সর্বস্তরে পাঠ্যবই পেতেই যদি জানুয়ারি মাস পার হয়ে গেলে তা কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মূল্যবান সময় নষ্টের কারণ হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রনালয় ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালির শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাঠ্যবই

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন