পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এ মুহূর্তে আফগানিস্তানে চরম মানবিক বিপর্যয়কর অবস্থা বিরাজ করছে। কীভাবে এ বিপর্যয় মোকাবিলা করা যায়, সে লক্ষ্যে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আয়োজন করা হয় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ অধিবেশন। ওআইসির সদস্য ৫৭টি দেশই অধিবেশনে অংশ নেয়। এছাড়া জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। পার্লামেন্ট হাউসে নিয়োজিত অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়ার সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আফগানিস্তানে বিরাজমান মানবিক পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে সময়মত তা মোকাবিলা না করতে পারলে কী অবস্থা হতে পারে, তার উল্লেখ করছেন। বলেছেন, দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি ছাড়াও বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। তিনি আরো একটি আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে বলেছেন, আফগান সরকার যদি ব্যর্থ হয়, ভেঙ্গে পড়ে, সন্ত্রাস দমন করতে অক্ষম হয়, তাহলে অন্যান্য দেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে। আফগানিস্তানে আইএস’র উপস্থিতি ও পাকিস্তানের অভ্যন্তর তার হামলার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সামলানোর জন্য দরকার কাবুলে একটি স্থিতিশীল সরকার। স্মরণ করা যেতে পারে, আফগানযুদ্ধে অসংখ্য প্রাণহানিসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। দরিদ্র ও খাদ্যভাবে ৫০ শতাংশ মানুষের অবস্থান হয়েছে দরিদ্রসীমার নিচে। দীর্ঘ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া থেকে ৪ কোটি মানুষের একজনও বাদ পড়েনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এ যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে তালেবানের হাতে। গোটা দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে তারা বিদায় হয়েছে। পরাজয়ের গ্লানি ভোলা হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই প্রকাশ্য ও সরাসরি যুদ্ধে হেরে অন্যরকম এক যুদ্ধ তারা শুরু করেছে। আফগানিস্তানের সম্পদ ও অর্থ আটকে দিয়ে, সাহায্য সহায়তা না দিয়ে আফগান জনগণকে শায়েস্তা করার পথ অবলম্বন করেছে।
আফগানিস্তানের বাজেটের ৭৫ শতাংশই আসে বিদেশি সাহায্য থেকে। দেশ পুনর্গঠন, সরকার পরিচালনা এবং জনগণকে ন্যূনতম সাহায্য করার মতো অবস্থাও সরকারের নেই। এ অবস্থা প্রলম্বিত হলে ইমরান খানের আশঙ্কা সত্য হয়ে দেখা দেবে। দেশটিতে সম্পদ আছে বটে; কিন্তু আহরিত-উত্তোলিত না হওয়ায় কাজে আসছে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। সাহায্য-সহায়তা যা আসে তার বেশিরভাগই খেয়ে ফেলে বশংবদ সরকারের লোকেরা। এখন আফগানিস্তান বা আফগান জনগণ নিরালম্ব অবস্থার শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে শূন্য করে গেছে। পরিত্যক্ত অস্ত্রের স্তূপ ছাড়া সেখানে আর কিছু নেই। মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আফগানিস্তানের এহেন দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ানো উচিৎ ছিল প্রতিটি মুসলিম দেশের এবং তাদের নিজস্ব সংগঠন ওআইসির। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পাকিস্তান এবং আরো দুয়েকটি দেশ ছাড়া কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। ওআইসিও না। ইমরান খান যথার্থই বলেছেন, ওআইসির একটা বিশাল দায়িত্ব ছিল দুর্দশাগ্রস্ত আফগান ভাইদের সমর্থন করা। এ আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। যা হোক, পাকিস্তানকে ধন্যবাদ দিতেই হয় ওআইসি’র এই বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করার জন্য। ৪১ বছর আগে ১৯৮০ সালেও ওআইসির এরকম একটি অধিবেশনের আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট মানবিক দুর্ভোগ মোচনে পাকিস্তানের তরফে এ আয়োজন করা হয়েছিল। এত বছর পর একই লক্ষ্য নিয়ে আবার অধিবেশন আয়োজন করতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
অধিবেশনে পাকিস্তান আফগান সমস্যার সমাধানে যে ৬ দফা কৌশল পেশ করে, তা সদস্যদের সমর্থন লাভ করেছে। ৬ দফার মধ্যে আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবিক সংকট দূর, খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আগফানিস্তানকে সহায়তা দিতে ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই অধিবেশনের এমন এক অর্জন, যা আফগানিস্তানকে সুরক্ষা দিতে এবং আফগান জনগণের দুর্দশা মোচনে অত্যন্ত সহায়ক হবে। অধিবেশনেই সউদী আরব আফগানিস্তানকে ১০০ কোটি রিয়ালের মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য দেশও সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। ওআইসি মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব সংগঠন হলেও অনেকটাই অকার্যকর হয়ে আছে। আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমন ও সিরিয়া যুদ্ধে তেমন কোনো ভূমিকাই রাখেনি এই সংগঠন। অথচ, গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রাহ্যযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারতো। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যে উদ্দেশ্যে ওআইসি গঠিত হয়েছিল, সে উদ্দেশ্য সাধনে তার তৎপর হওয়ার বিকল্প নেই। আফগানিস্তান প্রশ্নে যে ঐকমত্য হয়েছে সেটাই তার ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা হতে পারে। পুঁজিবাদী ও পরাভূত পশ্চিমাবিশ্ব ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক ধরনের ক্রুসেড শুরু করেছে। অন্যান্য মুসলিমবিদ্বেষী দেশও তার সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এ মুহূর্তে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য-সংহতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা একান্তভাবেই অপরিহার্য। ওআইসি এই কাজটি সফলভাবে এগিয়ে নিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।