পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়ে গেল। এ যুদ্ধে কোনো প্রতিপক্ষ নেই। নিজেরা নিজেরাই অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করল। প্রাণ ঝরল, আহত হলো। নিজেদের মধ্যে এমন ভয়াবহ যুদ্ধ এবং প্রাণহানির ঘটনা বিরল এমন হতো, এ যুদ্ধে প্রতিপক্ষ থাকত, তাহলে যুক্তির খাতিরে তা মেনে নেয়া যেত। হ্যাঁ, এমন নজির রয়েছে, ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভাই ভাইকে খুন করেছে। তবে তা প্রকাশ্যে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে হয়নি। কিংবা যুদ্ধে অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়নি। শুধুমাত্র একটি চেয়ারকে কেন্দ্র করে এবং তাতে বসার জন্য অনাকাক্সিক্ষত যুদ্ধটি হয়ে গেল। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৬৯টি সহিংসতায় নিহত হয়েছে মোট ৯২ জন। আহত হয়েছে ৬ হাজার ৪৮ জন। নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪১ জন, বিএনপির ২ জন, সাধারণ মানুষ ২২ জন, পুলিশের গুলিতে ১৫ জন এবং ১ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এই যে এত মানুষ নিহত ও আহত হলো, তা কেবল নিজেদের মধ্যকার হিংসা-প্রতিহিংসার কারণেই হয়েছে। ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য হয়েছে। এ যুদ্ধ বাঁধাল কে? এ প্রশ্নের জবাবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, নির্বাচন কমিশন। তার বিচার করবে কে? ভোট একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নির্বাচন কমিশন ভোটের নামে যেন মাঠে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছে কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে আসে। কে রক্তস্নাত হয়ে রক্তের পথ ধরে তাদের কাছে হাজির হয়। তাকেই বিজয়মালা পরিয়ে জয়ী ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের এই মানসিকতা কি আদিম যুগের বর্বরতাকেও হার মানাচ্ছে না?
দুই.
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন যথার্থই বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের যে নির্বাচন হয়েছে, এটাকে কোনো নির্বাচন বলা যায় না। এটা অরাজকতা। জোর করে ভোট নেয়ার কাজকেই কমিশন বৈধতা দিচ্ছে। নির্বাচনের কাজে কমিশন একেবারে ঠুঁটো জগন্নাথের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এই কমিশন থাকতে আগামী যে নির্বাচনগুলো হবে সেগুলো আরও রক্তাক্ত হবে। তার এ কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করতে পারে না, যুদ্ধ বাঁধাতে পারে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। যে ৯২ জন নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে, তাতে তার কোনো আফসোস নেই। নির্বাচনের নামে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার এই দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এত প্রাণহানির পরও নির্বাচন কমিশন কোথাও নির্বাচন বাতিল করেনি। কমিশন যদি কঠোর হস্তে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো, নির্বাচন বাতিল করতো, তাহলে এই সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। কমিশনের লোকজন বেতন-ভাতা নিচ্ছে, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছে না। তার এ কথা থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন যেন সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনের নামে ‘বাঁচো না হয় মরো’ এমন এক রক্তাক্ত পরিস্থিতির দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা বা যুদ্ধ পরিস্থিতি উপভোগ করার মানসিকতা পোষণ করছে। মানুষের রক্ত ঝরুক, প্রাণ যাক-এটাই চাচ্ছে। তা নাহলে, কেন এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এই যে এতগুলো মানুষ নিহত হলো, তাদের প্রাণের কি কোনো মূল্য নেই? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সরকারের কিছু লোক ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে এমন প্রবণতা বিদ্যমান, নির্বাচনে এমন এক-দুটি সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে, কিছু লোক মারা যাবে, এটা এমন কিছু না। তাদের তরফ থেকে এমন কথাও বলা হয়, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে এবং খুব বেশি প্রাণহানি ঘটেনি। এর অর্থ হচ্ছে, তাদের কাছে একজন মানুষের জীবনেরও কোনো মূল্য নেই। নির্বাচনে সহিংসতা না হলে এবং মানুষ না মরলে, তা তাদের কাছে কোনো নির্বাচনই মনে হয় না। এর কারণ হচ্ছে, যে নিহত হয়, সে তো তাদের কেউ না। তার পরিবারের ব্যথা তাদের স্পর্শ করে না। এটা যে এক ধরনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক মানসিকতা, তা তাদের বোধে থাকে না। আজ যদি তাদের পরিবারের কেউ নিহত হতো, তাহলে কি হতো? তারা কি এ ধরনের নির্বাচন মেনে নিতো? ইউনিয়ন পরিষদের এবারের পর্বের নির্বাচনে মারামারি, কাটাকাটি করে অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, তিনি যে চেয়ারটিতে বসতে যাচ্ছেন, সে চেয়ারটি কত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তার চেয়ারটি কি রক্তমাখা নয়? এই চেয়ার তো জনগণের সেবা করার জন্য। জনগণকে মারার জন্য নয়। তাহলে, কেন তাকে খুনোখুনি করে এ চেয়ারে বসতে হলো। ক্ষমতার জন্য? জনগণের সেবা করার জন্য তো ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে না। চেয়ারে না থেকেও সেবা করা যায়, যদি প্রকৃতই জনসেবার মানসিকতা থাকে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যে ৮৩৪ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই তো জোরজবরদস্তির মাধ্যমে হয়েছেন। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে এবং অন্যকে মেরে তথাকথিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। অনেকে বিনাযুদ্ধে জিতেছেন। এতে কি তাদের মান-সম্মান বেড়েছে? আত্মসম্মানবোধে কি একটুও আঁচড় লাগেনি? দেশের মানুষ তাদের কি চোখে দেখছে, এটা কি ভেবে দেখেছেন? দেখছেন না। কারণ, আত্মসম্মানবোধের দিকে তাকালে তো আর ক্ষমতা পাওয়া যাবে না। ক্ষমতা না পেলে দাপট ও অর্থকড়ি কামাই করা যাবে না। জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই মানসিকতা নিয়ে তারা চেয়ারম্যান হয়েছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যে বলেছেন, পদ-পদবি পেলে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা থাকে। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়, তার এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। যারা সহিংসতার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তারা কি এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন? বিশেষজ্ঞরা তো এ কথাও বলছেন, এখন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাস্তানরা অংশগ্রহণ করে। ক্ষমতাসীন দলও যার পেশীশক্তি আছে তাকেই মনোনয়ন দেয়। তাদের এ কথার সত্যতা তো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাওয়া গেল।
তিন.
দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই, এ কথাটি এখন বহুল প্রচলিত। সরকার গ্রাসরুট লেভেল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একদলীয় নির্বাচনী ব্যবস্থার অপসংস্কৃতি চালু করেছে। বিগত এক দশকে এমন কোনো নির্বাচনের নজির নেই, যেটি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এখনও আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি বা গড়ে তোলার চেষ্টা করিনি। এটা সব সরকারেরই ব্যর্থতা। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। তারা বলেন, তারা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন করেছেন। ক্ষমতায় গেলে এ অধিকার পাকাপোক্ত করবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন তারা একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায়। অথচ এক যুগেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং তারা যেসব নির্বাচন করেছেন এবং করছেন, তার সবগুলো চরম বিতর্কিত ও দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। জনগণ দেখছে, ক্ষমতায় এসে তারা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। তাহলে তাদের সংগ্রাম ও প্রতিশ্রুতির মূল্য কোথায় রইল? ক্ষমতাসীন দল মানুষের ভোটের অধিকারকে এখন আর মূল্য দেয় না। এ অধিকারকে পাশ কাটিয়ে উন্নতির কথা বলছে। হ্যাঁ, উন্নতি হচ্ছে, তবে সেখানে কি নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি রয়েছে? যেখানে মানুষের নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটে না, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি তো অনৈতিক বিষয় ছাড়া কিছু হতে পারে না। এখন বিরাজ করছে, জোর যার মুল্লুক তার পরিস্থিতি। জোর করে ক্ষমতা দখল করো, ক্ষমতার জোরে দুর্নীতির মাধ্যমে উন্নতি করো। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো স্থান নেই। বরং সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে পিষ্ট ও প্রাণ দিচ্ছে। দুঃখের বিষয়, স্বাধীন দেশে এখনো আমরা নিজেদের মধ্যে রেষারেষি ধরে রেখেছি। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে শত্রুজ্ঞান করছে। অথচ দেশের প্রকৃত উন্নয়নের স্বার্থটি কেউ দেখছে না। কেবল কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, এ নিয়ে ছক কষাকষি চলে। আমরা যে প্রত্যেকেই এ দেশের নাগরিক এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে দিতে হবে, এই মানসিকতাই ধারণ করতে পারিনি। বিভেদের দেয়াল তুলে রেখেছি। এই বিভেদকে আমরা জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের মতো একটি সামাজিক সেবামূলক নির্বাচনেও বিভেদের আগুন ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানের সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আত্মীয় আত্মীয়কে খুন-জখম করছে। পারস্পরিক সুসম্পর্কের বন্ধনকে শত্রুতায় পরিনত করা হচ্ছে। এই শত্রুতার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কেউ বলতে পারে না। নির্বাচনে খুনোখুনি, মারামারির যে অপসংস্কৃতির পথ নির্বাচন কমিশন তৈরি করে দিল, তা যে আগামীতেও চলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, আমাদের দেশের একশ্রেণীর দুষ্টুচক্র খারাপ পথটিকেই উদাহরণ হিসেবে বেছে নেয়। জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও আলাপ-আলোচনা, বক্তব্য-বিবৃতি কিংবা টেলিভিশন টক শোতে অতীতের খারাপ নজিরগুলো বেশি তুলে ধরে। এ সরকারের সময় জাতীয় থেকে স্থানীয় যেসব প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, তা যেমন এখন সমালোচিত হচ্ছে, তেমনি যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখনও দীর্ঘকাল ধরে তার সমালোচনা চলবে। আমাদের রাজনীতির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আমরা অতীতের ভাল কাজ নিয়ে তেমন আলোচনা বা প্রশংসা করি না। প্রতিপক্ষের দোষ-ত্রুটি নিয়েই বেশি আলোচনা করি। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল, উভয়েই কারো ভালো দিক দেখে না। এই যে ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানি হয়েছে, তাদের এ প্রাণের বিনিময়ে কি অর্জিত হলো? অর্জিত হলো, একজন দাঙ্গাবাজ ও মাস্তানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া। অথচ এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রাণহানি ও সংঘাত সহজেই এড়ানো যেত। যেহেতু নির্বাচন কমিশন নামমাত্র আছে এবং নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তাই ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর নাম নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে ঘোষণা দিয়ে দিলেই হয়ে যেত। সরাসরি নিয়োগ দিলে গ্রামের পথে-ঘাটে, মাঠে মারামারি ও প্রাণহানি থেকে অনেক মানুষ বেঁচে যেত। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত একজন ভাল প্রতিনিধি দায়িত্ব পেত। সরকার তো জেলা প্রশাসকদেরও নির্বাচন ছাড়া সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে কোনো ক্ষতি হতো না। জনগণ তো জানেই এখন আর তাদের ভোট দিতে হয় না। তাদের ভোট ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এতে তাদেরও কোনো আপত্তি থাকতো না। আবার কোনো ধরনের মারামারি ছাড়াও তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। লোক দেখানোর নির্বাচনের নামে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়ার কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? তবে এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। যদি অংশগ্রহণ করতো তাহলে তাদের নেতা-কর্মীরা আস্ত থাকত না। যেসব খুন-খারাবি ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটি থেকে তারা বাঁচত না। পুলিশ সবগুলোতে তাদের আসামী করে জেলে ঢুকিয়ে দিত। অসংখ্য নেতা-কর্মী এলাকাছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াত। যেহেতু তারা অংশগ্রহণ করেনি, তাই যেসব খুন ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তাতে মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে বা কেউ গ্রেফতার হয়েছে, এমন খবর পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়নি। কারণ, এসব ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার বিভক্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
চার.
নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক সমালোচনা করেছে এবং করছে। অসংখ্যবার তাদের পদত্যাগ দাবী করেছে। তাতে নির্বাচন কমিশন কান দেয়নি। দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। কারণ, কমিশনাররা সরকারের চাকরি করেন। ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সরকারি চাকরির মতো সোনার হরিণ কে ছাড়তে চাইবে! অবসরে যাওয়ার আগে বা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কি কেউ সরকারি চাকরি ছাড়ে? এমন বোকামি কি কেউ করে? সরকার যেভাবে তাদের চালায় তাদেরও সেভাবেই চলতে হয়। সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্য থাকতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে কি চাকরি থাকবে? থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের প্রতি আনুগত্য থেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে তারা স্বাধীন, তাদের ক্ষমতা রয়েছেÑএসব পুস্তকীয় কথা। তা মানতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বিগত নির্বাচন কমিশনাররাও তাই করেছেন। এতে তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তবে তাদের দোষ একটাই, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে পারেনি। সেটা না পারুক, তবে তাদের বড় দোষ নির্বাচন করতে গিয়ে মানুষের খুনোখুনি বন্ধ করতে পারেনি। বন্ধ করার উদ্যোগও নেয়নি। এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।