পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের স্থানীয় সরকার বিভাগে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন । বর্তমান সরকার আইন করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের প্রধান শহরগুলোর মেয়রদের প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। কিন্তু মেয়ররা কি স্থানীয় সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বশীলতা ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন, এই প্রশ্ন আজ দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সিটি কর্পোরেশন ও পৌর মেয়রদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। শুধু মেয়র, পৌর-মেয়রদের বিরুদ্ধেই নয়, দেশের হাজার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের একটা বড় অংশই নানা ধরণের দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে জানা যায়। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে ডিএনসিসি বা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য, জমি দখল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খবর অনুসারে রাজধানীর তেজগাঁও বিজয় সরণি এলাকার কলমিলতা মার্কেটের জমি দখলের ক্ষতিপুরণের মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্যের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রায় চার বছর আগে আদালত ভ’মিমন্ত্রনালয় ও ঢাকার ডিসির মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপুরণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হলেও ২০১৯ সালে মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকার ডিসি বরাবরে মাত্র ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিলেন। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, মেয়রের এই উদ্যোগকে ‘দূরভিসন্ধিমূলক ও অনভিপ্রেত’ বলে উল্লেখ করেছিলেন জেলা প্রশাসক।
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ব্যক্তিগত সম্পদ জবর দখলের ক্ষতিপুরণ না দেয়া এবং শহরের ভেতরে ও বাইরে ভুক্তভোগীদের জমি দখলের মত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র আতিকুল ইসলামের পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান এবং নুরতাজ আরা ঐশির পক্ষে গত মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আখন্দ এই রিট দায়ের করেছেন । সারাদেশে রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মহলের অবৈধভাবে নদীদখল, খাল ও জলাভ’মি দখল, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সংস্থার জমি দখলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পদ জবরদখলের অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু ঢাকার উত্তর সিটি মেয়রের মত স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ লেভেলে এমন অবৈধ জবরদখলের অভিযোগ সত্যিই দু:খজনক। কিছুদিন আগে ঢাকা দক্ষিণের সদ্য সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম বাদ দিলে, মূলত সারাদেশের বেশিরভাগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের অনেক অভিযোগ উঠলেও এসব অভিযোগের উপযুক্ত তদন্ত ও বিচারের দৃষ্টান্ত বিরল। দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে মুখচেনা প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পদের তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেলেও মামলার চুড়ান্ত ফলাফল দেখা যায় না।
সরকারি বা স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করতে হলে আইনগতভাবে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের আগেই প্রকৃত মালিকদের মূল্য ও ক্ষতিপুরণ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাজারের জমি দখলের পর ভুক্তভোগীরা আদালতের স্মরণাপন্ন হলে আদালত ৪ হাজার কোটি ক্ষতিপুরণ পরিশোধের নির্দেশনা জারির পর তা নিয়ে ছলচাতুরি ছাড়াও মেয়রের লোকজনের লালমাটিয়ায় দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া এবং সাভারে ৯ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। অভিযোগ মিথ্যা বা দূরভিসন্ধিমূলক না হলে এ বিষয়ে যথাশীঘ্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষত হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো তৎপর ও যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচিত জনপ্রতিধিদের সাধারণ মানুষের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবৈধ জবরদখলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষকের ভ’মিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের আর কোনো শেষ থাকে না। কেউই আইনের উর্ধ্বে নন। আইনের নির্দেশনা সর্বক্ষেত্রে কার্যকর হবে, এটাই প্রত্যাশিত। সারাদেশে সকল মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার স্থানীয় সরকারে সিইও নিয়োগের কথা ভাবছে বলে জানা যায়। তবে সিইও নিয়োগের পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং কাজের গতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।