পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর অলিতে-গলিতে, মহাসড়কে, ভিআইভি রোডে সবখানে শুধু রিকশা আর রিকশা। রিকশার নৈরাজ্যে বিশৃঙ্খল, অনিরাপদ ও গতিহীন হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। রিকশার কারণে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজটকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। অথচ যানজটের প্রধান অনুসঙ্গ রিকশা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। রমজানে ঢাকার রাস্তায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। দুপুরের পর একবার যানজটে আটকা পড়লে ইফতারির আগে ছাড়া গাড়ি নড়েই না। এর নেপথ্যের কারণও রিকশা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর যানজট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয়, প্রকল্পসর্বস্ব। এ কারণেই যানজট নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে সফলতা আসছে না। রিকশার কারণে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গতি আসছে না। চলতে গিয়ে রিকশার ভিড়ে আটকে যায় গাড়ি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যও বলছে, এক দশকে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে নেমে এসেছে মাত্র সাত কিলোমিটারে। কয়েক বছরের মধ্যে তা ঘণ্টায় চার কিলোমিটারে চলে আসবে, যা হাঁটার চেয়েও মন্থর।
রিকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য এর আগে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি) বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও রাজনৈতিক কারণে সফল হতে পারেনি। সিকি শতাব্দী ধরে নিবন্ধন বন্ধ থাকলেও ভোটের রাজনীতি ও ২৫টি সংগঠনের বাণিজ্যে ১২ লাখেরও বেশি অবৈধ রিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর রাজপথে। সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে নবনির্বাচিত দুই মেয়রেরই প্রতিশ্রুতি ছিল নগরবাসীকে ‘ক্লিন ঢাকা’ উপহার দেয়া। উত্তর সিটির মরহুম মেয়র আনিসুল হক অভিজাত এলাকায় রিকশা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও দক্ষিণে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লিন ঢাকার জন্য নয়, যানজট নিয়ন্ত্রণ তথা নগরবাসীর ভোগান্তিতে কমাতে রিকশা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে মহানগরীতে বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার। আর অবৈধ রিকশা আছে ১২ লাখেরও বেশি। নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, রাজধানী শহরে আসলে রিকশা থাকার কথা নয়। এগুলোকে অবশ্যই কমিয়ে ফেলতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। আর যেগুলোতে চলবে সেগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে চলার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৯৩৮ সালে কলকাতা থেকে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকায় আনা হয়েছিল রিকশা। কলকাতা পৌরসভা রিকশাকে ‘অমানবিক যান’ ঘোষণা করেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে যানজট ও বিশৃঙ্খলা কমাতে রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ঢাকায় রিকশার সংখ্যা বাড়ছেই। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকার পরেও গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেই এলাকাভিত্তিক গ্যারেজের সূত্র ধরে রিকশার চালক বনে যাচ্ছে শত শত মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ইএনএফপিএর পরিসংখ্যান মতে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ঢাকায় এই হার ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ হিসাবে প্রতিদিন রাজধানীতে গড়ে বাড়ছে ১৭০০ মানুষ। এই বাড়তি মানুষের একটি অংশ ভূমিহীন, যাদের অল্প জমি আছে বাড়তি আয়ের জন্য তারাও ঢাকায় আসছে। কৃষিকাজ ছেড়ে শহরে এসে তার একটি অংশ বনে যাচ্ছে রিকশাচালক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে, ঢাকায় রিকশার চেয়ের রিকশা চালকের সংখ্যা দ্বিগুনের কাছাকাছি। অর্থাৎ ১৫ লাখেরও বেশি। উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪১ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল ৩৭টি। ১৯৪৭ সালে বেড়ে হয়েছিল ১৮১টি। সে সময় বিদেশ থেকে ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে রিকশাও আনা হয়েছিল। রিকশা নিয়ে ঢাকাবাসীর ব্যাপক কৌতুহলও ছিল সে সময়। কৌতুহলের সেই রিকশা ঢাকাবাসীর জন্য যন্ত্রণাদায়ক হবে কে জানতো। ঢাকার রাস্তায় ১৯ ধরনের যান্ত্রিক যানবাহনের সঙ্গে একই রাস্তায় চলছে রিকশা, রিকশাভ্যান, ঠেলাগাড়ির মতো অযান্ত্রিক যানবাহন। সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এসব মিশ্র পরিবহন যান চলাচল করছে লেন, বিধি না মেনেই। এতে করে সড়কে দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, রাজধানীর রাস্তায় সর্বোচ্চ দুই লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলতে পারে। সেখানে ঢাকায় চলছে ১২ লাখের ও বেশি রিকশা। অর্থাৎ সব ধরনের যান্ত্রিক গাড়ির চেয়েও বেশি হারে রিকশা চলছে। রাজধানীর যানজটের এটা একটা প্রধান কারণ।
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা ও এর আশপাশে এক কোটি ৭০ লাখ বা তার কিছু বেশি মানুষের বসবাস। এক সমীক্ষার হিসাবে, ঢাকায় রিকশার যাত্রী ১৭ লাখ ৬০ হাজার। রিকশায় দৈনিক যাতায়াতের সংখ্যা দুই কোটি ৯৩ লাখ। কোনো আদর্শ মহানগরীতে আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকা মহানগরীতে আছে প্রায় ৭ শতাংশ। মহানগরীর দুই হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক আছে। প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে যন্ত্রচালিত গাড়ি চলাচল করতে পারে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সড়কে। দখল, অপ্রশস্ততা, নির্মাণ সামগ্রীর কারণে ব্যবহার করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ৯৬ শতাংশ সড়কেই বড় গাড়ি চলতে পারে না। সরকারের আরএসটিপির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর প্রধান সড়ক, বাইলেনসহ বিভিন্ন সড়কের ৯৫ শতাংশেই রিকশার আধিক্য থাকে। নগরীতে রিকশার সংখ্যা কতো এর কোনো সঠিক হিসাব নেই কারো কাছে। রাজউকের মাস্টার প্লান অনুযায়ী ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ৫ লাখ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নগরীতে রিকশার সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঢাকায় এখন রিকশার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৮০ হাজারেও বেশি মোটরচালিত রিকশা। সাথে আরও ৮০ হাজার আছে ইজিবাইক।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা চলছে রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নেমপ্লেট লাগিয়ে। একেক এলাকায় একেক সংগঠনের ব্যানারে রিকশা চলে। প্রতিদিনই ঢাকার রাস্তায় শত শত রিকশা নামছে। আগে সাধারণ রিকশা নামানো হলেও এখন মোটরচালিত রিকশাই বেশি নামছে। নগরীতে চলাচলের জন্য রিকশার লাইসেন্স বা নম্বরপ্লেট প্রদানের এখতিয়ার একমাত্র ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। অথচ সেই নিয়ম অমান্য করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং পুলিশের সহযোগীতায় বিভিন্ন সংগঠনের নামে রিকশার নম্বরপ্লেট বিতরণ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিকলীগের ব্যানারে শুরু হয় রিকশার নম্বরপ্লেট বাণিজ্য। ইতিমধ্যে কয়েকটি সংগঠন নম্বরপ্লেট বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ইনসুর আলীর নেতৃত্বাধীন সংগঠন জাতীয় রিকশা শ্রমিক লীগের ব্যানারে ৫০ হাজারেরও বেশি রিকশা চলছে রাজধানীতে। এছাড়া রিকশা কেন্দ্রীক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সংখ্যা ৩৫/৪০টির মতো। এর মধ্যে ১৮টি সংগঠনের নামে রিকশার নম্বরপ্লেট ব্যবহার হয়ে আসছে। এসব সংগঠন বিভিন্ন সরকারের আমলে নির্দিষ্ট নম্বরপ্লেট বিতরণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত বলে দাবি করে। যেমন-১৯/ডি টোলারবাগ মিরপুরের ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক সমিতি। সিটি কর্পোরেশনের বাতিলকৃত ৮ হাজার ৫শ’ ৪৪টি রিকশার নেমপ্লেট বিতরণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত এই সংগঠনের নামে হাজার হাজার রিকশা চলছে নগরীতে। যাত্রাবাড়ীর বাংলাদেশ রিকশা ভ্যান মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। এই সংগঠনও ৪৩ হাজার রিকশা ভ্যানের নম্বরপ্লেট ছাপিয়ে বিতরণ করেছে। রিকশা চোর প্রতিরোধের নামে এই সংগঠনের নেতারা বহু বছর ধরে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরেক সংগঠনের নাম মুক্তিযোদ্ধা পূর্নবাসন কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ। এই সংগঠনের নামেও কিছুদিন পর পর নতুন করে নম্বরপ্লেট ছাপিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ রিকশা ভ্যান মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ নামের সংগঠনও ৪৩ হাজার নম্বরপ্লেট বিতরণের দাবিদার। এভাবে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নম্বরপ্লেট বিক্রিল আড়ালে ক্রমেই বেড়ে চলেছে রিকশার সংখ্যা।
যানজটের কারণ
নগরীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ রিকশা। যেসব রাস্তায় রিকশা চলাচল করে না সেখানে যানজট খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ট্রাফিক পুলিশের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অদক্ষ ও আনাড়ী রিকশাচালকদের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। ধীর গতির যানবাহন বলেও রিকশার কারণে দ্রুতগতিসম্পন্ন যানবাহন চলতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতেও যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পসহ ঢাকার যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে যে সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেগুলো প্রতিটিতে রিকশা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অনেক আগেই ঢাকা শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। এরই মধ্যে নগরীর শাহবাগ থেকে ফার্মগেইট, সায়েন্স ল্যাবরেটরী থেকে মিরপুরসহ কয়েকটি প্রধান রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এসব রাস্তায় উল্টোপথে রিকশা চলতে দেখা যায়। যাতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।