পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা শহরের সমস্যার অন্ত নেই। বদনামেরও কমতি নেই। কখনো অসভ্য নগরী, কখনো বসবাসের অযোগ্য নগরী, কখনো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর খেতাবে ভুষিত হয়েছে। এসব নেতিবাচক খেতাব বছরের পর বছর ধরেই চলছে। বদনাম ঘুচানোর কোনো উদ্যোগ নেই। বরং দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এসবের মাঝেই গড়ে উঠছে একের পর এক চাকচিক্যময় বহুতল ভবন। মেট্রোরেলের মতো আধুনিক রেল ব্যবস্থা, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে ইত্যাদি। সম্প্রতি ঢাকা শহর নিয়ে একটি উদ্বেগজনক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে বিশ্বের ৫০টি শহরের ওপর গবেষণা করে। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মানুষ কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। বিশ্বের এমন ২৫টি দেশের মধ্যে ভারত শীর্ষে, আর বাংলাদেশ দ্বিতীয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বছরে এ শহরে মোটের ওপর ৫ কোটি ৭৫ লাখ (বিভিন্ন কাজে ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষসহ) তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার চেয়ে কম কাজ করতে পারছে। ঢাকা ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ। গবেষকরা গবেষণায় শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে শহরগুলোর মোট জনসংখ্যার তথ্য। তারা বলেছেন, শহরের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটিকে ‘চরম উষ্ণ’ বলা হয়। উল্লেখ্য, ঢাকা শহরে স্বাভাবিক সময়েও তাপমাত্রা গড়ে ৩০ ডিগ্রি থাকে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব, জলাশয় না থাকা এবং কংক্রিটের ইমারত ও স্থাপনা তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু এগুলোই নয়, এর সাথে জনসংখ্যার আধিক্যও রয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির শহর এটি। ১৯৮৩ সালে এ শহরে যেখানে লোকসংখ্যা ছিল ৪০ লাখ, সেখানে ২০১৬ সালে তা হয়েছে ২ কোটি। সারা বছর এ শহরে জনসংখ্যার উপস্থিতি ৬ কোটি। ফলে শহরের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
দুই.
বিরূপ পরিবেশ ও তাপমাত্রা রাজধানীর মানুষের কর্মক্ষমতা যে শুধু কমিয়ে দিচ্ছে তা নয়, অসহনীয় যানজটও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। যানজটে মানুষের শারিরীক ও মানসিক কি পরিমান ক্ষতি হয়, তা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জরিপে প্রকাশিত হয়েছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যানজটে প্রতিদিন মানুষের ৩২ লাখ বা তার চেয়েও বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এই শ্রমঘণ্টার মূল্য বছরে ১ লাখ কোটি টাকা। উৎপাদন, স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনার ক্ষতি হিসাব করলে এর পরিমাণ হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যানজট কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অপরিমেয় ক্ষতি করে চলেছে। কর্মশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। কয়েক বছর আগে বিনিয়োগ বোর্ডের গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের ক্ষতির খাতওয়ারি একটি হিসাব দেখানো হয়েছিল। তাতে দেখানো হয়, যানজটের কারণে বছরে কর্মজীবী মানুষের যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় তার আর্থিক মূল্য ৪৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। উৎপাদন খাতে এ ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৬৮২ কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ২১ হাজার ৯১৮ কোটি, জ্বালানি ও মেরামত বাবদ ১ হাজার ৩৯৩ কোটি এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয় ১৫৪ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজটের কারণে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি’র ক্ষতির পরিমাণ ৭ শতাংশ। এখন যে তা আরও ছাড়িয়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যানজটের এই আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ক্ষতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কত হয়, তা সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল। কয়েক বছর আগে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদফতরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজম্যান্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু রাজধানীতে বায়ু দূষণজনিত রোগে বছরে মারা যায় ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতিদিন এক টন হাইড্রোকার্বন ও ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইড বাতাসে মিশে নগরবাসীকে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ বাতাসে কার্বনের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ পিপিএম বা পার্টস পার মিলিয়ন। পরিবেশবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা শিল্পকারখানা, যানবাহন এবং আশপাশে গড়ে উঠা ইটভাটা থেকে শিসা মিশ্রিত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করছে। রাজধানীতে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়েও ৫০ পিপিএম বেশি রয়েছে। বায়ুদূষণের পাশাপাশি অতিমাত্রায় শব্দদূষণের কারণে অনেকে ধীরে ধীরে বধির হয়ে যাচ্ছে। নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে শব্দদূষণ এত বেশি যে, তা বিশ্বের যেকোনো শহরকে ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে একটি বধির প্রজন্মের সৃষ্টি হতে পারে। বড়দের মধ্যেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। শব্দদূষণ তাদের হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে। রক্তচাপ বেড়ে হার্টের রোগীতে পরিণত করছে। সাধারণত এলাকাভেদে শব্দের সহনীয় মাত্রা নির্ধারিত হয়ে থাকে। আবাসিক এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল, আবাসিক কাম শিল্প এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় ৭০ থেকে ৭৫ ডেসিবল শব্দমাত্রা থাকা স্বাভাবিক। অথচ ঢাকায় সব এলাকায় গড়ে ৭০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে সাধারণ বর্জ্যরে পাশাপাশি সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকি হয়ে রয়েছে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য। সরকারি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর দেড় সহস্রাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন ২০০ টন ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কঠিন, তরল, রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয়-এই চার ধরণের বর্জ্য সাধারণ বর্জ্যের মতো সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন, নর্দমা ও স্যুয়ারেজে ফেলা হচ্ছে। এসব ক্লিনিক্যাল বর্জ্য নগরবাসীর জন্য এক ভয়াবহ ও মারত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে রয়েছে।
তিন.
বিশ্বের ৩৬টি মেগাসিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬। একটি মেগাসিটির যে মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা ঢাকার রয়েছে। সাধারণত যে শহরের জনসংখ্যা এক কোটির বেশি, সে শহরকে মেগাসিটি বলা হয়। ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটির বেশি। মেগাসিটি একক মেট্রোপলিটান এলাকা নিয়ে হতে পারে। অবার দুই বা ততোধিক মেট্রোপলিটান এলাকা যা এককেন্দ্রে মিলিত হয়, এমন এলাকা নিয়েও হতে পারে। পরিকল্পিত হোক বা অপরিকল্পিত হোক, এই উভয় বৈশিষ্ট্যই ঢাকার রয়েছে। যেমন ঢাকার পাশ্ববর্তী সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকার মেট্রোপলিটন এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাপানের টোকিও সবচেয়ে বড় মেট্রোপলিটন এলাকা নিয়ে গঠিত। আর চীনের সাংহাই হচ্ছে, বৃহৎ প্রপার সিটি বা মূল শহর। তবে ঢাকার যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে একে আদর্শ মেগাসিটি বলা যায় না। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। জিডিপিতে এর অবদান ২০ শতাংশ। তবে শহরটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। একটি আদর্শ শহরে যান চলাচলের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ এলাকায় সড়ক থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ৮ ভাগ। এর মধ্যে শতকরা ৪৪ ভাগ সড়কে ফুটপাত নেই, ৮২ ভাগ ফুটপাতের অবস্থা করুণ। রাস্তার তুলনায় গাড়ি দ্বিগুণ। ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা জনসংখ্যার আধিক্য। বিশ্বব্যাংকের এক হিসেবে ঢাকার পশ্চিমাংশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪১ হাজার মানুষ। নিউইয়র্কে প্রতি একরে যেখানে ২৫ থেকে ২৬ জন লোক বসাবাস করে, সেখানে ঢাকায় বসবাস করছে ৫০০ থেকে ৬০০। রাজধানীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীন ও অসময়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এক দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে। এমনিতেই রাজধানীর ৮০ শতাংশ সড়ক সরু ও অপরিকল্পিত। তার উপর যদি বছরের পর বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলে, তবে নগরবাসীর যন্ত্রণা কমার কোন কারণ থাকতে পারে না। যানজটের প্রধান কারণ সম্পর্কে নগরবিদরা বলছেন, পূর্ব-পশ্চিমমুখী সড়কের সংযোগ না থাকা, রিং রোডের অনুপস্থিতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ প্রযুক্তির অভাব, পার্কিংয়ে কোনো শৃঙ্খলা না থাকা। এর পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অসঙ্গতি যুক্ত হচ্ছে। যানজট সমস্যার সাথে বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিয়ে বহু ধরনের কথা হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীতে ৬০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। কোনো দেশের মেগাসিটিতে ড্রেনেজ সিস্টেম এমন হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। যুগের পর যুগ ধরে কাজ করা ওয়াসা কী করল, তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করতে না পারুক, রাজধানীতে প্রাকৃতিক যেসব খাল, পুকুর ছিল নিদেনপক্ষে সেগুলো তো সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে পারত। এ কাজটি করতে পারলে রাজধানীতে পানিবদ্ধতা বলে কিছু থাকত না। রাজধানীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং যানজটের কারণে মানুষ যে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, তাতে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তা সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। দুঃখের বিষয়, আমরা রাজধানীর যত কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তাদের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পাই না। এক সময় রাজধানীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতো প্রাকৃতিক খাল, লেক, পুকুর ও জলাশয়ের মাধ্যমে। এখন সেগুলো দখল ও ভরাট হয়ে সুউচ্চ ইমারত ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ওয়াসার হিসাব মতে এক সময় রাজধানীতে ৪৩টি খাল ছিল। এর মধ্যে ১৭টির কোনো খোঁজ নেই। বাকি ২৬টি খালের ৫টি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে নিয়েছে অসাধু চক্র। দখল হয়ে যাওয়া এসব খাল উদ্ধারের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। গত বছর দুই সিটি করপোরেশনকে রাজধানীর খাল উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। শুরুতে তোরজোর লক্ষ্য করা গেলেও, এখন তা থেমে গেছে। শুধু খালই নয়, রাজধানীতে এক সময় অনেক পুকুর ছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে রাজধানীতে পুকুরের সংখ্যা ১৯৮৫ ছিল ২ হাজার। এখন সরকারি হিসেবে আছে মাত্র ২০০। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা একশ’র বেশি হবে না। এসব পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার অভাবে নগরীর পুকুর ও জলাশয় হারিয়ে গেছে। নগর উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতার কারণে দখল বন্ধ করা যাচ্ছে না। নগর পরিকল্পনা করলেও পুকুর জলাশয় রক্ষায় কোনো পরিকল্পনা নেই। এ ধরনের পরিকল্পনা না থাকায়, কোথাও আগুন লাগলে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। বিগত এক দশকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটারের বেশি নেমে গেছে বলে বলা হচ্ছে। প্রতিবছর এ স্তর ২.৮১ মিটার করে কমছে। এর ফলে মাটির স্তর দেবে যাচ্ছে এবং ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চার.
নগরবিদরা মনে করছেন, ঢাকার উপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের বিকল্প নেই। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক। এতে জেলা-উপজেলার মানুষ যদি তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সেখানে পান, তবে তাদের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। ঢাকার ভেতরে শিল্পকারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহী করতে হবে। রাজধানীর বাইরে আলাদা শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার উন্নয়ন বা উন্নয়ন পরিকল্পনা যেভাবে করা হচ্ছে, জেলা শহরগুলোকেও একইভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। ঢাকার সাথে জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে মানুষ ঢাকা এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দিনে দিনে নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালতের সুবিধা, জেলা-উপজেলায় এমনভাবে পৌঁছে দেয়া দরকার যাতে সেখানের মানুষকে ঢাকামুখী হতে না হয়। যদি এমন হয়, একজন রুগীকে উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষার্থীকে উন্নত শিক্ষা, বেকারকে চাকরি, দিনমজুরকে কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় ছুটে আসতে হয়, তবে ঢাকাকে কোনভাবেই নির্ভার ও সুষমভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নিউইয়র্ক শহর থেকে মানুষ ২০০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করেও প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে যেতে পারছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মরতরা কলকাতায় অফিস-আদালত ও নিত্যদিনের কাজ করে ফিরে যেতে পারছে। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও এমন করতে হবে যাতে, দূর দূরান্তের মানুষ ঢাকায় অফিস করে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড বা বাসযোগ্য নগরীর যে মানদন্ড তুলে ধরা হয়, ঢাকা তা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। স্থিতিশিলতা, স্বাস্থ্যসেবার মান, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো-এই পাঁচটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে ঢাকার স্কোর গড়ে ৪০-এর নিচে। দেশের রাজধানী হিসেবে এই স্কোর কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই স্কোরকে ধাপে ধাপে উন্নীত করতে না পারলে ঢাকাকে বাসযোগ্য করা যাবে না। নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সর্বোপরি সরকারকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।