পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন মেট্রোরেলে দ্রুত ভ্রমণে উন্মুখ, পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে শীঘ্রই গাড়ি চলবে, কর্ণফুলী নদীর নিচে দিয়ে গাড়ি চলবে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র অচিরেই বিদুৎ উৎপাদন শুরু করবে। বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের আর ভাবতে হবে না। একসময় ঢাকা শহরের মারাত্মক লোডশেডিং হতো। লোডশেডিংয়ের কারণে এখন আর টিভি বন্ধ থাকে না। আমরা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ৩৮ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করব। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ এমন অনন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সফটওয়্যার রপ্তানি করে আমরা বিলিয়ন ডলার আয় করবো।
এই যখন বাস্তবতা ও গণআকাক্সক্ষা, তখন সেই পুরনো খেলা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের এখনো দু’বছরের বেশি বাকী; কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিরোধী দল বলছে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। দেশে প্রায় দেড় দশক নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। এই কয়দিন আগেও সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছিল। কী দেখেছি আমরা? সংসদে বিরোধী দলের সংখ্যা বেশি না হলেও তারা যা খুশি তাই বলবার যে সুযোগ পাচ্ছে, কোনো প্রকারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। টিভিতে দেখি, অনেক সময় স্পিকারের সাথে বিরোধী দলীয় সাংসদদের বিতন্ডা হচ্ছে। অসংসদীয় ভাষায় কথা তারা বলছেন। তাদের বক্তৃতা দেখে মনে হয়, তারা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে না, তারা ভাষণ দিচ্ছেন পল্টন ময়দানে। মাননীয় স্পিকারকে বাধ্য হয়েই তাদের কোনো কোনো বক্তব্যকে এক্সপাঞ্চ করতে হচ্ছে। এতে তাদের কোনো লাভ নেই, তারা হয়তো জানেনই না, পার্লামেন্টে একজন পার্লামেন্টারিয়ানের বক্তব্য এক্সপাঞ্চ হওয়া কতটা ডিসক্রেডিট/ অসম্মানজনক। সেই বোধটুকুও বোধহয় তারা হারিয়ে ফেলেছেন। সরকারি দলের লোক সংখ্যায় অনেক। ইচ্ছা করলে, তারা হইচই করে নোংরা কথা বন্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তাদের দেখা যায় ধীর-স্থিরভাবে বিরোধী দলের বক্তব্য শুনছেন। সংসদ নেত্রী অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে সবকিছু শুনে এর জবাব দিচ্ছেন। এতো গেল পার্লামেন্টের ভিতরের ব্যাপার। বাইরে যে ভাষায় তারা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন বা করছেন তা কোনো সভ্য সমাজের শিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীদের ভাষা হতে পারে না। সহজেই বোঝা যায়, সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার চাইতে তারা হিংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান, যাতে করে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হয় এবং সেই সুযোগে তারা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ও নীল নকশা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে পারেন।
বিরোধী দল থেকে আন্দোলনের নামে এমন কিছু করা হচ্ছে, যা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। অনেক গোপন মিটিং করছে যেখানে মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদীরাই সবচেয়ে বেশি। সেখানে বিশেষ বাহিনীর লোকদের আনাগোনা করা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেনাবাহিনী নিয়ে রাজনীতি করার কুফল রব সাহেবরা একবার ভালো করেই টের পেয়েছেন। এখন যারা অনিয়মতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় বসার চক্রান্তে মত্ত তারা চান আমাদের জাতীয় ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে। সেনাবাহিনী দিয়ে এমন কিছু করতে, যাতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে। বিরোধীদলের উস্কানিমূলক কথাবার্তায় এই ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী সুশৃংখল এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অনুগত। তাদের নিয়ে জামায়াতের মিটিংয়ে একসাথে বসা! যারা বসছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাস্য, এরূপ রুদ্ধদ্বার আলোচনা সভা, ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হতে পারে কিনা? হ্যাঁ, আমরাও বলছি না দেশে শতভাগ/সুষ্ঠু গণতন্ত্র বিদ্যমান। কিন্তু তার জন্য দায়ী কারা? নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বেই নির্বাচনকে বানচাল করবার হীন ষড়যন্ত্র দেখা যায়। মৌলবাদী- সন্ত্রাসবাদীদেরই ঘৃণিত উলম্ফন দেখা যায়। সরকার যা কিছু করছে তার সবটাই ঠিক এটা আমরা বলি না, কিন্তুপ্রধানমন্ত্রীর কারণে আজ দেশে যতটুকু গণতন্ত্র কার্যকর আছে, তা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। রাষ্ট্রীয় সকল দলের প্রয়োজনীয় ইতিবাচক সহযোগিতা পেলে দেশকে তিনি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। চরম বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তাকে সরকার পরিচালনা এবং দেশের উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। তার সময় এবং সুযোগ কোথায়? বিরোধীদল তো সরকারকে Perpetually Unrest করে রেখেছে। গণতন্ত্র বিকাশের সুযোগ কোথায়? কোনো দেশের দায়িত্বশীল বিরোধী দল নির্বাচনের পরপরই সরকারের পতন ঘটাতে চায় না! বিরোধীদল না জিতলেও নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় না। বিরোধী দলের উচিত ধৈর্য্য ধারণ করা, এমনভাবে জনমত তৈরি করা যেন আগামী নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে গিয়ে অন্তত তাদের ভোটটা চাইতে পারে, ভোট দিতে উৎসাহ না হারায়।
ভয়াবহ করোনাকালে তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। মুখরোচক কিছু কথা বলে দায়িত্ব শেষ করেছে। আগে দেখা যেত বিরোধীদল দেশের মানুষের দুর্দিনে, তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। এখন শুধু বিবৃতি ও বক্তৃতা দিয়েই বিরোধীদল দায়িত্ব শেষ করছে। মিথ্যা সমালোচনা করলেও জনগণ তাদের নীরব-নিষ্ক্রিয় রাজনীতিকে সমর্থন করে না। তাই তারা যা করছেন আগামী নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
বিরোধীদল যদি জনগণের মন জয় করতে না পারে, তাহলে নির্বাচন বানচাল করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না, বরং পরিস্থিতি এর থেকেও খারাপের দিকে যাবে। তাই এটা করা ঠিক হবে না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই তাদের সবার জন্য হবে কল্যাণকর।
লেখক: বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা, পার্লামেন্টারিয়ান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সম্মানিত সভাপতি ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।