Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে কারণে গ্রামাঞ্চলে সমাদৃত তালেবান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

মাটির ইট দিয়ে তৈরি বাড়ির ভেতরটি ছিল ঠান্ডা, পরিষ্কার এবং শান্ত। শামসুল্লাহ নামে একজন তার পরিবার নিয়ে সেখানে বাস করেন। পরিবারটি দরিদ্র, এবং গত ২০ বছরের যুদ্ধের সময় তাদের সব সম্পদ ধ্বংস বা লুট করা হয়েছিল।
পেশায় তুলা চাষী শামসুল্লাহর বাড়িটি ছিল প্রখর রোদ এবং বাইরে ধুলোবালি থেকে আশ্রয়। হেলমান্দ প্রদেশে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া মার্জাতে সব পারিবারের মতো তার ঘরও ছিল উঁচু মাটির দেয়াল দ্বারা ঘেরা। শামসুল্লাহর মা গোলজুমার বয়স ৬৫। তবে তার কণ্ঠস্বর ছিল শক্তিশালী যখন সে দুঃখপূর্ণ জীবন এবং যুদ্ধের কথা বলেছিল যা তার জীবনকে ধ্বংস করেছিল এবং তার চার বড় ছেলেকে হত্যা করেছিল। কনিষ্ঠ শামসুল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র জীবিত সন্তান। তার বয়স ২৪, কিন্তু দেখতে মনে হয় তার থেকেও ১০ বছরের বড়।
১১ বছর আগে মারা যাওয়া গোলজুমার প্রথম পুত্র ছিলেন জিয়া উল হক। তিনি ছিলেন তালেবান যোদ্ধা। গোলজুমা বলেন, আমার ছেলে তালেবানে যোগ দিয়েছে কারণ সে বুঝতে পেরেছিল আমেরিকানরা ইসলাম ও আফগানিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়। অন্য তিন ছেলে ২০১৪ সালে কয়েক মাসের মধ্যে মারা যান। হায়াতুল্লাহ এবং আমিনুল্লাহ নামের দুই ভাইকে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। শামসুল্লাহ বলেন, তার ভাইদের সেনাবাহিনীতে সাইন আপ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, যেখানে তাদের হত্যা করা হয়েছিল। একমাত্র জীবিত হিসেবে শামসুল্লাহ বলেন, আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।
২০১০ সালে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশে মার্কিন সেনাদের ‘সার্জ’-এর প্রথম সেট পিস অপারেশন হিসেবে মার্জাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ধারণাটি ছিল যে, সেখানে বিদ্রোহীদের দমন করতে পারলে যুদ্ধের গতিপথকে কাবুল সরকার এবং আমেরিকান, ব্রিটিশ এবং অন্যান্য মিত্র বাহিনীর পক্ষে নিয়ে যাবে। মার্জায় তুলা এবং আফিমের পপির ক্ষেত বিদেশী সৈন্যদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল যারা তালেবান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। দীর্ঘ তিন মাস ধরে পরিচালিত অপারেশনে মার্কিন কমান্ডার জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টাল মার্জাকে ‘রক্তপাতের আলসার’ বলেছিলেন। পরবর্তী ১০ বছরে সেখানে বহুবার যুদ্ধ হয়েছিল।
গোলজুমা পশ্চিমা নেতাদের অবজ্ঞা করেছিলেন যারা বলেছিলেন যে, তারা আফগানিস্তানকে মানুষের জন্য একটি ভাল জায়গা বানানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের মিশন সম্পর্কে কিছুই জানি না। তারা দেশকে ধ্বংস করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক লোক এখানে থাকার সময় অনেক কষ্ট পেয়েছিল। তারা আমাদের স্বামী, আমাদের ভাই এবং আমাদের ছেলেদের হত্যা করেছিল। আমি তালেবানকে পছন্দ করি কারণ তারা ইসলামকে সম্মান করে। আমার মতো নারীরা কাবুলের মহিলাদের মতো নয়।’ তালেবান যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আগে সবাই তাদের ভয় পেয়েছিল, এখন তারা স্বস্তি পেয়েছে বলে তিনি যোগ করেন।
২০০১ সালে, ৯/১১ হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা আফগানিস্তানে একটি স্পষ্ট মিশন নিয়ে আক্রমণ করেছিল, আল-কায়েদা ধ্বংস করা এবং তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তালেবানদের শাস্তি দেয়া। এরপরে যা ঘটেছিল তা বোঝা এবং যুক্তিযুক্ত করা অনেক কঠিন; একটি অদম্য যুদ্ধ যা আফগানদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তারা যা করার চেষ্টা করেছিল তা ধ্বংস করে ফেলেছিল। গণতন্ত্রের মতো উন্নয়নও বন্দুকের নল থেকে আসতে পারে না। পাশ্চাত্যের পথে বিজয় ছিল। প্রকৃতপক্ষে, শহুরে পুরুষ ও মহিলাদের একটি প্রজন্ম শিক্ষিত ছিল এবং তাদের দিগন্ত পরিবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু সেই সুবিধা গোলজুমার পরিবারের মতো গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র এবং সবে শিক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। গ্রামাঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের দুঃখ কষ্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ি করে। তালেবানের শাসনে তারা অপরাধমুক্ত নিরাপদ জীবন-যাপনের সুযোগ পায়। ফলে তারা তালেবান শাসনকেই স্বাগত জানায়। সূত্র : বিবিসি নিউজ।



 

Show all comments
  • Manobik virus ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
    তালেবান যেন মানবিক থাকে সে আশা করি
    Total Reply(0) Reply
  • Nurullah ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৮ এএম says : 0
    ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের দুঃখ কষ্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ি করে। তালেবানের শাসনে তারা অপরাধমুক্ত নিরাপদ জীবন-যাপনের সুযোগ পায়। ফলে তারা তালেবান শাসনকেই স্বাগত জানায়।
    Total Reply(0) Reply
  • সোয়েব আহমেদ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৯ এএম says : 0
    তালেবানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বেশি হচ্ছে...
    Total Reply(0) Reply
  • সৈকত ফকির ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
    এটাই বাস্তবতা। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ছাড়া তালেবানের েএই বিজয় সম্ভব ছিল না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ