Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপহরণকারীদের শিক্ষা দিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তালেবানের

পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করছে রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ শনিবার বলেছেন, আফগানিস্তানের নতুন তালেবান শাসকরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে, বিশেষ করে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য এবং উগ্রবাদের বিস্তার রোধ করতে একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, তাদের সাথে চারটি দেশ যোগাযোগের মধ্যে রয়েছে। এদিকে, আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরে তালেবান কর্তৃপক্ষ চারজন অপহরণকারীকে হত্যা করে এবং তাদের লাশ অন্যদের জন্য নিদর্শন হিসাবে জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখে।

হেরাতের ডেপুটি গভর্নর শের আহম্মদ আম্মার বলেন, ওই ব্যক্তিরা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে অপহরণ করেছিল এবং তাদের শহর থেকে বের করে নেয়ার চেষ্টা করছিল। তবে তারা টহলবাহিনীর কাছে ধরা পড়ে যায়। তাদের ধরার জন্য শহরের চারপাশে চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। সেখানে বন্দুকযুদ্ধে চারজন অপহরণকারী নিহত এবং একজন তালেবান সৈন্য আহত হয়। তিনি বলেন, ‘তাদের লাশগুলো প্রধান চত্বরে আনা হয়েছিল এবং অন্যান্য অপহরণকারীদের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে শহরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।’ তিনি জানান, অপহৃত দুইজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

হেরাতের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাজির বলেন, তিনি শহরের মোস্তোফিয়াট স্কয়ারের কাছে খাবারের জন্য কেনাকাটা করছিলেন যখন তিনি লাউডস্পিকারের ঘোষণা শুনে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা শুনতে পান। তিনি বলেন, ‘যখন আমি এগিয়ে গেলাম, আমি দেখলাম তারা একটি পিকআপ ট্রাকে একটি লাশ নিয়ে এসেছে, তারপর তারা এটি একটি ক্রেনের উপর ঝুলিয়ে রেখেছে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা গ্রাফিক ছবিতে দেখা গেছে, একটি পিক-আপ ট্রাকের পিছনে রক্তাক্ত দেহ এবং একটি ক্রেন একজনকে উপরে তুলেছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হেরাতের একটি প্রধান গোল চত্বরে ক্রেন থেকে তুলে ধরা একজন ব্যক্তির বুকে একটি চিহ্ন লেখা আছে, ‘অপহরণকারীদের এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।’

স্কয়ারের পাশে ফার্মেসি চালানো উজির আহমদ সেদ্দিকি বলেন, চারটি লাশ মূল চত্বরে আনা হয়েছে এবং তিনটি লাশ জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য শহরের অন্যান্য স্থানে সরানো হয়েছে। তিনি বলেন, তালেবান ঘোষণা করেছে যে, চারজন একটি অপহরণে অংশ নিতে গিয়ে ধরা পড়েছে এবং পুলিশ তাদের হত্যা করেছে। হেরাতের তালেবান-নিযুক্ত জেলা পুলিশ প্রধান জিয়াউলহাক জালালী বলেন, বন্দুকযুদ্ধের পর চারজন সশস্ত্র অপহরণকারী কর্তৃক অপহৃত হওয়া এক পিতা-পুত্রকে তালেবান সদস্যরা উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, অপহরণকারীদের হাতে একজন তালেবান যোদ্ধা এবং একজন বেসামরিক নাগরিক আহত হলেও চারজন (অপহরণকারী) ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে।

হেরাতের ডেপুটি গভর্নর মৌলভী শির আহমাদ মুহাজির বলেন, অপহরণ সহ্য করা হবে না এমন একটি ‘পাঠ’ শেখানোর জন্য হত্যাকাণ্ডের দিন একই দিনে বিভিন্ন পাবলিক এলাকায় মৃতদেহ প্রদর্শন করা হয়েছিল। মুহাজির বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী খবর পেয়েছে যে শনিবার সকালে একজন ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে শহরে অপহরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে, পুলিশ শহরের বাইরে রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং তালিবানরা পুরুষদের একটি চেকপয়েন্টে বাধা দেয়, যার ফলে গুলি বিনিময় হয়। ডেপুটি গভর্নর একটি রেকর্ড করা বিবৃতিতে বলেন, ‘কয়েক মিনিটের লড়াইয়ের ফলে আমাদের একজন মুজাহিদিন আহত হয়েছে এবং চারজন অপহরণকারী নিহত হয়েছে।’ ‘আমরা ইসলামী আমিরাত। কেউ যেন আমাদের জাতির ক্ষতি না করে। কাউকে অপহরণ করা উচিত নয়,’ তিনি ভিডিও ক্লিপে বলেছিলেন।

মুহাজির যোগ করেছেন যে, শনিবারের ঘটনার আগে শহরে অন্যান্য অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল এবং তালেবানরা একটি ছেলেকে উদ্ধার করেছিল। একজন অপহরণকারী নিহত এবং তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও অন্য একটি ক্ষেত্রে তালেবান ‘ব্যর্থ হয়েছে এবং অপহরণকারীরা অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে’। ডেপুটি গভর্নর দাবি করেন, ‘এটা আমাদের ব্যাথিত করেছে কারণ আমরা হেরাত থাকাকালীন আমাদের লোকজনকে অপহরণ করা হচ্ছে।’ ‘অন্য অপহরণকারীদের কাছে কাউকে অপহরণ বা হয়রানি না করার শিক্ষা দেয়ার জন্য, আমরা তাদের শহরের চত্বরে ঝুলিয়ে রেখেছি এবং প্রত্যেকের কাছে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে কেউ চুরি করে বা অপহরণ করে বা আমাদের লোকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় তাকে শাস্তি দেয়া হবে,’ তিনি যোগ করেন।

এদিকে, শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে এবং পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তার বক্তৃতায় লাভরভ বলেন, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি কাতার এবং তারপর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ভ্রমণ করেছেন। তারা তালেবান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, তালেবান কর্তৃক ঘোষিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ‘আফগান সমাজের গোটা দল-জাতিগত-ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শক্তিকে’ প্রতিফলিত করে না, তাই আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি।’ লাভরভ আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে প্রত্যাহার সহ বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো প্রত্যাহার ‘পরিণতির কোন বিবেচনা ছাড়াই করা হয়েছিল এবং আফগানিস্তানে অনেক অস্ত্র অবশিষ্ট আছে।’ এই ধরনের অস্ত্রগুলো যে ‘ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করা হবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

পরে জাতিসংঘে দেয়া বক্তৃতায়, লাভরভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের ‘আজকের মূল সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা হ্রাস করার অব্যাহত প্রচেষ্টা বা এটিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বা এটিকে কারও স্বার্থ প্রচারের জন্য একটি নিন্দনীয় হাতিয়ার’ বলে অভিযুক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ, লাভরভ বলেছিলেন যে, জার্মানি এবং ফ্রান্স সম্প্রতি বহুপাক্ষিকতার জন্য একটি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। ‘যদিও জাতিসংঘের চেয়ে কোন ধরনের কাঠামো বহুপক্ষীয় হতে পারে?’ সূত্র : ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ