পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কিছু দিন ধরে এই শ্রেণীর পুলিশ সদস্যর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সংবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীর বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে গ্রাহকের কয়েকশ’ কোটি টাকা প্রতারণা করে লোপাট করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিএসএফ-এর হাতে ধরা পড়ে। তারপর থেকে তার নানা অপকর্মের ঘটনা উঠে আসতে শুরু করেছে। গত বছরের আগস্টে বিদেশগামী এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়ার অভিযোগে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) বিভাগে সে সময়ে কর্মরত এক এসআইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বছর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ওসি প্রদীপের বিচার এখন চলছে। এছাড়া প্রায় সময়ই পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যর গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত এসব ঘটনার বাইরেও অপ্রকাশিত অনেক ঘটনাই ঘটছে। পুলিশ সদস্যদের কারো কারো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া এবং এ হার বৃদ্ধি জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে চলেছে।
পুলিশের একশ্রেণীর সদস্য পেশাদার অপরাধীদের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যা করছে না। এসব অপরাধে কেউ কেউ ধরাও পড়ছে। কারো কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তি প্রদান করা হয়। এ সংখ্যাটি নিতান্ত কম নয় এবং তা উদ্বেগজনকও বটে। তবে এ শাস্তির নজির থাকার পরও তা অন্যান্য সদস্যর মধ্যে যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে না, তা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অপরাধের ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এতে পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমনিতেই পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেতিবাচক। কেউ বিপদে পড়লে আরও বড় বিপদে পড়ার শঙ্কায় সহজে কেউ পুলিশের দ্বারস্থ হতে চায় না। অথচ উন্নত বিশ্বে যেকোনো ছোটখাটো সমস্যায় মানুষ সবার আগে নির্দ্বিধায় পুলিশের সহযোগিতা চায়। পুলিশও অত্যন্ত আন্তরিক হয়ে সেসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে। সেখানে যে পুলিশের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে না, তা নয়। তবে তা কালেভদ্রে ঘটে। আমাদের দেশে এমন পারসেপসন বদ্ধমূল যে, পুলিশ মানেই আতঙ্ক এবং বাড়তি ঝামেলায় জড়িয়ে পাড়া। পুলিশ যে জনবান্ধব, জনসেবা এবং সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অপরাধীদের দমন করা কিংবা বিপদগ্রস্থর পাশে আন্তরিকতা নিয়ে দাঁড়ানো, সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ধারণা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর অন্যতম কারণ, একশ্রেণীর পুলিশের ভয়াবহ অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়া। এসব ঘটনা যখন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ঘটে, তখন সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। পুলিশের একটি-দুটি অপরাধের ঘটনা বড় হয়ে দেখা দেয়। এর বদনাম নিতে হয় পুরো পুলিশ বাহিনীকে। পুলিশকে জনবান্ধব ও জনসেবক করে সাধারণ মানুষের আস্থায় আনার কথা বিশ্লেষকরা বরাবরই বলে আসছেন। পুলিশের আইজিপি সবসময়ই পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলছেন। পুলিশের সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলা হচ্ছে। তারপরও একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যর মধ্যে কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান, তারা যা খুশি তা করতে পারে। এ প্রবণতা থেকেই পেশাদার অপরাধীর মতো অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ছে। এতে পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইতিবাচক উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আইনের রক্ষক হয়ে পুলিশ নিজেই যদি আইন ভঙ্গ করে কিংবা ভক্ষকে পরিণত হয়, তখন সাধারণ মানুষের অসহায় হয়ে পড়া ছাড়া গতি থাকে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রসর হয়েছি, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছি, অথচ রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা পুলিশ বাহিনীর বদনাম ঘুচাতে পারছি না। একশ্রেণীর অপরাধপ্রবণ পুলিশ সদস্য সংস্থাটির ভাবমর্যাদার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
সরকার তার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে নিশ্চিন্তে জনগণের সেবায় আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারে, এজন্য ব্যাপকহারে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। এর অন্যতম লক্ষ্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে দুর্নীতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে। এ সুযোগ-সুবিধার মধ্যে পুলিশ বাহিনীও রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এ সুযোগ-সুবিধা পেয়েও পুলিশের একশ্রেণীর সদস্য আরও লোভাতুর হয়ে পড়েছে। অবৈধ পন্থায় উপার্জনে নানা গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং বেআইনী কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের এই দুর্বিনীত আচরণ ও অপরাধ বরদাস্ত করা যায় না। পুলিশকে জনবান্ধব ও জনসেবকে পরিণত করতে এর আমূল সংস্কার প্রয়োজন। প্রচলিত মাইন্ডসেটের পরিবর্তন দরকার। পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে সরকার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। বলা বাহুল্য, সরকার আসবে, সরকার যাবে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একসময় চাকরি থেকে চলে যাবেন, পুলিশ বাহিনী থেকে যাবে। তারা কি ধরনের পুলিশ বাহিনী রেখে যাচ্ছেন, এ উপলব্ধি তাদের মধ্যে থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।