Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমাদের কিশোররা কেন অপরাধী হয়ে উঠছে?

| প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদের ঘরে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের বিনোদনের কথা চিন্তা করে হাতে তুলে দিচ্ছে স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ। কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের খাতিরে বাবা-মা বাচ্চার হাতে মোবাইল তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।ফলে কিশোর-কিশোরীরা খুব সহজেই ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, ফেইচবুক, বিভিন্ন গেইম এমনকি পর্নগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আবার বাবা মা সন্তানের প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে আলাদা কক্ষ দিয়ে থাকে তবে তারা কী করে তা সঠিক ভাবে তদারকি করেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই সাইডগুলোতে কিশোররা আসক্ত হয়ে পড়ে এবং এখান থেকে অনেক সময় বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম তারা শিখে থাকে। কিশোরদের ভিতর ডেভিয়েন্ট বিহেভিয়ার বা সমাজচ্যুত আচারণ দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে। সুতরাং পরিবার, আর খুব সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বাবা-মার কিছু দায়িত্বহীনতা এই শিশু কিশোরদের অপরাধমুখী করে তুলছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা পরিবারকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। একজন মানুষ তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে পরিবারের সাথে। উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে বেশির ভাব কিশোর অপরাধী পরিবারের সংলগ্নে বড় হয়। তাহলে বলাই বাহুল্য যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে হয়ত পরিবার ব্যর্থ ছিল তাদেরকে যথাযথ শিক্ষা প্রদানে। বাবা মায়ের ভিতর অন্তর্দ্ব›দ্ব, ডিভোর্স অথবা পরিবারের কেউ অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত থাকা অনেক সময় একজন কিশোরকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। দারিদ্রতা বা অভাব-অনটন যে কিশোর অপরাধের আর একটি অন্যতম কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার খাতিরে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আশা কিশোররা চুরি, পকেটমার,ছিনতাই এর মত অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। কিশোর অপরাধ সংঘটনে পরিবেশের দায় এড়ানোর মত নয়। পরিবার থেকে বের হয়ে একটি শিশু যখন ভয়ংকর পরিবেশের সম্মুখীন হয়, তখন পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষারঅনেক ক্ষেত্রে অর্থহীন হয়ে যায়। যখন কোনো কিশোর অপরাধ সংঘটন করে তখন তাকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে ক্রম বর্ধমান অপরাধের তুলনায় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক নগন্য। সারাদেশে মাত্র তিনটি সংশোধন কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল অপরাধীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, বিভিন্নভাবে অনুপ্রেরণা দেয়া, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব সংশোধন কেন্দ্রে তারা বিভিন্ন মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। আরও উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন অপরাধীদের একসাথে রাখার ফলে পরবর্তীতে এর নেতিবাচক বিভিন্ন প্রভাব পড়ে অপরাধীদের উপর। সংশোধন কেন্দ্র থেকে মুক্তির পর এসব ছোট অপরাধী (চুরি, পকেটমার) দেখা যায় বড় অপরাধে (খুন, ধর্ষণ) লিপ্ত হচ্ছে। আজকের কিশোর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের হাত ধরেই একটা দেশ উন্নতির দিকে দিকে ধাবিত হবে। কিশোর অপরাধে দায় রাষ্ট্র,সমাজ কিংবা পরিবার, কেউই এড়াতে পারবে না। কিশোর সংশোধন কেন্দ্র বাড়িয়ে, দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত কর্মচারীদের মাধ্যমে কিশোরদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দরিদ্র কিশোরদের যথাযথ কারিগরি শিক্ষা, ইলেকট্রনিক ওয়ার্ক এর শিক্ষা প্রদান করতে হবে। সংশোধন কেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারী দের তদারকির ভিতরে রাখতে হবে। কিশোরদের জন্য সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা, শরীর চর্চা, ধর্মশিক্ষা, নৈতিকতা শিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে তারা সহজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং একটি সুন্দর সমাজ গঠক করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সৈয়দা আনিকা বুশরা
শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিশোর


আরও
আরও পড়ুন