পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী শাহিন আকন্দ (৪৮)। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনে ভালই চলছিলো তার সংসার। পল্লবীর কিশোর গ্যাং লিডার আশিক ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আশিকের বাবা খালেকুজ্জামান জীবন পল্লবীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ক্যান্ডিডেট হওয়ায় সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা থাকলেও পুলিশ বা র্যাব কাউকে পরোয়া করে না। তাই চাঁদা না পেয়ে সহযোগীদের নিয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় পল্লবীর লালমাটিয়া টেম্পুস্ট্যান্ড বাজারে ব্যবসায়ী শাহিনকে হাতুড়ি, লাঠি দিয়ে পেটানোর এক পর্যায়ে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাংটির সদস্যরা। শরীরে ১০টি সেলাই নিয়ে ঢামেকে চিকিৎসা চলছে ব্যবসায়ী শাহিনের। ঘটনার এক দিন গত হলেও বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং লিডার আশিক ও তার সহযোগিরা।
এভাবেই সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাÐে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ১০ বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে ৯০ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২ বছরে ৩৪ জন খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় সাড়ে চার শতাধিক কিশোরকে আসামি করা হয়েছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে।
আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্ব›দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। স¤প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। ঢাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের খুনাখুনিতে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাÐে তারা কিশোরদের ব্যবহার করে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এটি হল কিশোর গ্যাং তৈরির একটি দিক। অন্য আরেকটি দিক হল-আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।
এডভোকেট নুরুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, নানা কারণে কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। প্রথমে তুচ্ছ এবং পরে বড় অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছে। গডফাদাররা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এদের উপর। গ্রেফতারের পর আইনগত সহযোগিতাও করেন সেল্টারদাতা রাজনৈতিক নেতারা।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। অতীতে এ বিষয়ে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে অনেক কাজ করা হয়েছে। যখন যেখানে কিশোর গ্যাং সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এছাড়া এ বিষয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, সেটি নিয়েও কাজ করছি।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর রমনা ও মতিঝিল এলাকার বাসিন্দারা কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ। তুচ্ছ ঘটনায় হইচই-মারামারি নিত্যদিনের ঘটনা। কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্য পেশাদার অপরাধী হিসাবেও পুলিশের তালিকাভুক্ত। কেউ কেউ হাত পাকিয়েছেন চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায়। স্কুলের গÐি পার হওয়ার আগেই ইভটিজিং আর বখাটেপনায় অনেকে সিদ্ধহস্ত। প্রতিটি গ্যাংয়ের পেছনে সরকারদলীয় কতিপয় নেতার আশীর্বাদ রয়েছে। কিশোর গ্যাং লালনপালনের নেপথ্যে তাদের উদ্দেশ্য একটাই-যে কোনোভাবে এলাকার আধিপত্যবজায় রাখা। রমনা ও মতিঝিল এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পুলিশের তালিকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের একজন নেতা এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতি।
তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, মগবাজার এবং শান্তিনগর এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাং বেইলি কিং রন বা রন গ্রæপের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ১৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের একজন নেতা। পুলিশের তালিকায় কিশোর গ্যাংয়ের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসাবে নাম আছে কলাবাগান থানা যুবলীগের এক নেতা ও হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের এজন নেতা।
রাজধানীর মুগদা এলাকায় সক্রিয় চাঁন যাদু গ্রæপের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন নেতা। সিটি করপোরেশনের ৭২নং ওয়ার্ড যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও কিশোর গ্যাং লালনপালনের অভিযোগ আছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ে জড়িত কিশোর গ্যাং অলি গ্রæপ। লিডারের নাম অলি গাজী। তিনি নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের টিএসসি ইউনিটের নেতা হিসাবে পরিচয় দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।