Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘নিরাপদ দেশত্যাগ’র ব্যবস্থাপনার আহবান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের পর আফগানদের নিরাপদ দেশত্যাগের ব্যবস্থাপনার জন্য তালেবানের কাছে আহবান করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর সদস্যদের ভোটে পাস হওয়া এক প্রস্তাবে এই আহবানজানানো হয়। তবে জাতিসংঘের আহবানে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আফগান রাজধানী কাবুলে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার জন্য ভিন্ন এক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ সদস্যের ভোটে এই প্রস্তাব পাস করা হয়। রাশিয়া ও চীন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। পাস করা প্রস্তাবে জানানো হয়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তালেবানের কাছে আশা করছে আফগান ও সকল বিদেশী নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সুশৃংখল বর্হিগমনের ব্যবস্থা করবে। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘে মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ আশা করছে তালেবান আফগানিস্তান ছাড়ায় আফগান ও বিদেশী নাগরিকদের নিরাপদ বহির্গমনের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের প্রতিজ্ঞা অটুট রাখবে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে গত ২৭ আগস্ট তালেবানের এক বিবৃতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়। ওই বিবৃতিতে তালেবান জানায়, মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারের পরেও আফগানরা যেকোনো সময় যেকোনো সীমান্ত দিয়েই সড়ক বা আকাশপথে দেশের বাইরে সফর করতে পারবেন। প্রস্তাবে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদ আশা করে তালেবানে এটি ও অন্য সব প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে। এদিকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে কাবুলে একটি নির্দিষ্ট ‹সেফ জোন› প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যৌথ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। প্রস্তাব অনুসারে জাতিসঙ্ঘের তত্ত¡াবধানে কাবুলের এই সেফ জোন পরিচালিত হতো। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানিয়েছিলেন, এই সেফ জোনের মাধ্যমে পুরো আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সংগঠিত করা যাবে এবং তালেবানকেও চাপে রাখা যাবে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের এই যৌথ প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় তালেবান জানিয়েছিলো, কাবুলে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা অপ্রয়োজনীয়। তালেবান নেতা সাইয়েদ আকবর আগা বলেন, যখন শান্তির সময় আপনি সেফ জোন তৈরি করেন, এর অর্থ দাঁড়ায় দেশে নিরাপত্তা নেই। অতীতে দৈনিক তিন শ থেকে চার শ› লোক নিহত হচ্ছিল কিন্তু এখন সারা দেশেই কেউ নিহত হচ্ছে না। ২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে তাদের আশ্রয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ। তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে। এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে। ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়। তা সত্তে¡ও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে। দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়। চলতি বছরের মে মাসে সম্প‚র্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরে নাইন-ইলেভেনের ২০তম বার্ষিকীতে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করার কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সম্প‚র্ণ প্রত্যাহার করে নেয়া হলো। মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহবানে সাড়া দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান। ৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। আল-জাজিরা, টোলো নিউজ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ