মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ৯/১১-এর কারণে একসময়ের মিত্র সউদী আরব এবং তালেবান বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের পরিবর্তন এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক পরিবর্তনের সাথে সাথে উভয়ের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হবে না, কিন্তু আরেকটি জাতির ঘনিষ্ঠ নজর পড়েছে কাবুলে। অতীতে, তারা একসাথে কাজ করেছিল। কিন্তু আজ, সউদী আরব এবং তালেবানরা রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের পাশাপাশি কিছু সমস্যাযুক্ত ইতিহাসের কারণে বিচ্ছিন্ন।
শেষবার যখন তালিবান আফগানিস্তানে ১৯৯৬ এবং ২০০১ এর মধ্যে ক্ষমতায় ছিল তখন সউদী আরব ছিল বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের একটি, যারা ইসলামী গোষ্ঠীর সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিল অন্য দুটি।
সউদী আরবের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক তার আগে বহু বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সউদীরা পাকিস্তানে কঠোর ধর্মীয় বিদ্যালয় বা মাদরাসায় অর্থায়ন করে, যেখান থেকে তালেবান আন্দোলন গড়ে ওঠে। তালেবানরা সুন্নী ইসলাম মেনে চলে, যা সউদী আরবে পালিত মতাদর্শের ধর্মীয় শাখা। যদিও তালেবানরা ধর্মের দেওবন্দি মতাদর্শ অনুসরণ করে এবং সউদী সরকার ওয়াহাবি মতাদর্শে বিশ্বাসী, তবে উভয়ই ইসলামী শাস্ত্রের অতি-রক্ষণশীল ব্যাখ্যা প্রদান করে।
ইসলামকে রক্ষা করা : ১৯৮০-এর দশকে, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে, সউদী আরব আফগান যোদ্ধাদের সমর্থন করে, যারা মুজাহিদীন নামে পরিচিত। তারা তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সাথে একত্রে এটি করেছে। আমেরিকানরা সেখানে ছিল স্পষ্টতই কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সউদীরা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য। মনে করা হয় যে, উভয় দেশই সোভিয়েত বিরোধী প্রচেষ্টায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
তারপর, সোভিয়েতরা বেরিয়ে আসার পর এবং ১৯৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধ চলাকালে সউদী আরব তালেবানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে ওঠে, বিশেষ করে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতিসংঘ তালেবানদের অস্ত্র সরবরাহের সন্দেহ করে এমন জাতিগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও ছিল।
তবে, আল-কায়েদা, সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠীর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী হামলার পর সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ওই হামলায় ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দান : সউদী আরবের ১৯৪০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আমেরিকানরা বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশটির শক্তিশালী মিত্রদের মধ্যে রয়েছে।
১৯৯৮ সালে, সউদীরা তালেবানকে ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া আল-কায়েদার প্রধান ও সউদী নাগরিক ওসামা বিন লাদেনকে প্রত্যর্পণ করতে বলেছিল। কিন্তু তালেবান তা প্রত্যাখ্যান করে। এ অস্বীকৃতিতে সউদী-তালেবান সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয় এবং গোষ্ঠীর তহবিল বন্ধ হয়ে যায়।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনাগুলো কেবল জোটের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছিল। একই মাসের শেষে, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে। সউদীরা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে তালেবানকে ইসলামের বদনাম করার অভিযোগ করে।
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের (এসডবিøউপি) বিশ্লেষকরা আঞ্চলিক উত্তেজনা নিয়ে ২০১৩ সালের একটি গবেষণাপত্রে লিখেছিলেন, ‘এতদসত্তে¡ও ‘সরকারি, ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত ক্রীড়নকদের’ মধ্যে এখনও চলমান সংযোগ ছিল’।
তারা বলেছিল, ‘তালেবানদের জন্য [সউদী] তহবিল সংগ্রহকারী ... বিশ্বাস করা হয় যে তারা ব্যাপকভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এবং মুজাহিদীন এবং তালেবান কর্মীদের সাথে সউদী সহযোগিতার সময় থেকে পুরানো প্রক্রিয়া ব্যবহার করে’।
সউদী আরব ফিরে আসেনি : আজ, সউদীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পুরনো মিত্রদের থেকে দূরে রয়েছে। যদিও এক পর্যায়ে তাদেরকে তালেবান এবং ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের মধ্যে আলোচনায় সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা হলেও ছোট পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার গত কয়েক বছর ধরে সেই ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
চলতি মাসে, তালেবান আফগান রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, সউদী আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সতর্কতামূলক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, ‘আফগান জনগণ কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই যেসব পছন্দ করে তার পক্ষে আছে দেশটি’।
বিশেষজ্ঞরা ডিডবিøউকে বলেছেন, তালেবানের ওপর সউদী আরবের ঐতিহাসিক প্রভাব যে কোন তাড়াহুড়ো করে পুনরুজ্জীবিত হবে এমন সম্ভাবনা নেই।
সউদী-মার্কিন জোট গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেছে এবং দেশের চলমান সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলোও এতে ভ‚মিকা রাখে। সউদীর বিতর্কিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, তার দেশকে আধুনিক করার চেষ্টা করছেন এবং আরো উদার এবং খোলা সউদী আরবের ধারণা অন্যান্য দেশে ইসলামী চরমপন্থীদের সহযোগিতার হাত বাড়াবে এটা মানানসই নয়।
ভারত-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহকর্মী কবির তনেজা গত মাসে একটি ব্রিফিংয়ে লিখেছিলেন, আফগানিস্তান সঙ্কট ‘সউদী আরবের জন্য অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টে একটি চ্যালেঞ্জ’। ‘একটি আসন্ন বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসাবে তার ভাবমর্যাদা বজায় রাখতে, রিয়াদকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সে আবার আফগানিস্তানে এবং ঘরে-বাইরে উড়ন্ত যোদ্ধাদের ব্যাপক অভিবাসনের আবাসস্থল এবং চরমপন্থীদের অর্থায়নের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠবে না।
আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা : প্রকৃতপক্ষে, আজ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ইরান তালেবানদের কাছাকাছি - যদিও তাদের ধর্মীয় আদর্শ ভিন্ন হতে পারে। ইরানের ধর্মতান্ত্রিক সরকার শিয়া মুসলিম।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক দ্য মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের অনাবাসী সহকর্মী বিনয় কৌরা গত বছর লিখেছিলেন, ‘তেহরান এবং তালেবানদের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়ার অনেক রিপোর্ট এসেছে। এটি [সাবেক] তালেবান শাসনামলের যুগের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে, যা ইরানের চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী সউদী আরবের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল’।
টেক্সাসভিত্তিক রাইস ইউনিভার্সিটির বেকার ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসির মধ্যপ্রাচ্যের ফেলো ক্রিস্টিয়ান কোটস উলরিচসেন বলেন, সউদী নেতৃত্ব সম্ভবত আফগানিস্তানকে ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›িদ্বতার প্রেক্ষাপটে দেখবে। ‘ইরানি এবং সউদী কর্মকর্তারা সামনের দিন এবং সপ্তাহগুলোতে একে অপরের ক্রিয়াগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন’।
সউদীভিত্তিক আলেম এবং ধর্মীয় নেটওয়ার্ক এবং প্রভাবের মাধ্যমে তিনি ডিডবিøউকে বলেন, কিছু ‘অনানুষ্ঠানিক প্রচার’ হতে পারে। তবে অতীতের জোটকে চিহ্নিত করে এমন সরকারি সহায়তা বা স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৯/১১ বার্ষিকী
কোটস উলরিচসেন ব্যাখ্যা করেছেন, ‘সউদীদের জন্য আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা এবং আন্তর্জাতিক এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের সাথে একত্রিত হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য সম্মানজনক ঝুঁকি হবে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশক এবং বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার শুরুর মাসগুলোতে ওয়াশিংটনে তাদের অবস্থান পুনর্গঠনে সউদীরা ইতোমধ্যে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে’।
মধ্যপ্রাচ্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জ্যেষ্ঠ এসডবিøউপি গবেষক গুইডো স্টেইনবার্গ এ মতকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি ডবিøউডবিøউকে বলেন, ‘এ মুহ‚র্তে সউদী আরব দেশে খুব কমই প্রতিনিধিত্ব করছে এবং সবেমাত্র তালেবানকে সমর্থন দিয়েছে’। ‘যদি সউদী আরব আবার আফগানিস্তানে হাজির হয়, তবে এটি কয়েক বছরের মধ্যেই যে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে’।
এক পাক্ষকালের মধ্যে ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীও স্মরণ করা হবে। ‘সউদীরা সম্ভবত লো প্রোফাইল রাখতে চাইবে’, কোয়েটস উলরিচসেন বলেছিলেন, ‘পাছে তালিবানের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক সেই সময়ের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করে যা সউদী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বর্তমান প্রজন্মের কিছু সংখ্যক মানুষই মেনে নিতে পারবেন। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।