Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাবুলে বিস্ফোরণের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

তালেবানের আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার কাবুলে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্ধরের বাইরে ভয়াবহ জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১২ মার্কিন সেনাসহ অন্তত ৬০ জন আফগান নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৪০ জন। হতাহতের মধ্যে মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তালেবান সংস্কৃতি কমিশনের সদস্য আবদুল কাহার বলখি এক তুর্কি টেলিভিশনকে বলেছেন, এটা সন্ত্রাসবাদী হামলা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা স্থানে বিদেশি সেনাদের উপস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত বেসামররিক আফগানদের লক্ষ্য করে এই হামলার নিন্দা জানানো। তালেবানের আরেক মুখপাত্র সুহাইল শাহিন এক টুইট বিবৃতিতে বলেছেন, হামলার ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে তালেবান। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা যায়, কাবুলের স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে বিমানবন্দরের আবে গেটের অদূরে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে কিছুটা দূরে ব্যারন হোটেলের কাছে। এর একটু দূরে রয়েছে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাদের অবস্থানস্থল। পরপর দুই বিস্ফোরণ কারা ঘটিয়েছে, তার দায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যারাই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক তা খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আফগানিস্তানে যখন শান্তিপূর্ণভাবে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, তখন এ ধরনের আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। দেশটি থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তালেবান পর্যায়ক্রমে পুরো আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময় কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেনি। এমনকি তালেবান যোদ্ধাদের কাবুলে প্রবেশ ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময়ও সংঘাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বরং বিগত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানকে বিদেশী দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে তালেবান প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন নিয়েই শান্তিপূর্ণভাবে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়। তারা আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। তারা দেশে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কর্মস্থলে যোগদানের আহবান জানায়। এমনকি যেসব আফগান দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাচ্ছে, তাদেরকে কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছে না। বরং তাদেরকে দেশ ছেড়ে না যাওয়ার আহবান জানিয়েছে। তালেবানের এমন ঔদার্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। নির্ধারিত সময় ৩১ আগস্টের মধ্যে এমনকি তার পরেও মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তালেবান সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, সন্ত্রাসী হামলার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা উদ্বেগজনক। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ হামলা আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। হামলার দায় এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকার না করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের হামলার পেছনে সালাফিস্ট বা সলাফিপন্থীদের হাত থাকতে পারে। তারা হামলা করে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। তারা চায় না, আফগানিস্তান একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত হোক। অথচ হামলায় আহত-নিহতদের মধ্যে সাধারণ মুসলমানই বেশি। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাহলে, সালাফিপন্থীরা কাদের ওপর হামলা চালালো? হামলা চালিয়ে তারা কি তাদের ভাইদের হত্যা করল না? বলার অপেক্ষা রাখে না, সালাফিপন্থীরা বিশ্বে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা বা চাপিয়ে দেয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কখনো কখনো জোরজবরদস্তিরও আশ্রয় নিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা সালাফিদের মতবাদ প্রতিষ্ঠায় কোনো কোনো মুসলিম দেশ সাহায়তা দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকে একে অপরের ভাই। তারপরও কোনো কোনো মতবালম্বী গোষ্ঠী তাদের প্রাধান্য বিস্তার বা তাদের মত প্রতিষ্ঠায় শক্তি প্রয়োগের পথ অবলম্বন করছে, যা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি ও জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করে এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, কোনো গোষ্ঠী যদি তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের মধ্যে সহিংসতার জন্ম দেয়, তবে তা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

কাবুল বিস্ফোরণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকা অস্বাভাবিক নয় বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। এক্ষেত্রে, সালাফি পন্থীদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার কারাও অসম্ভব কিছু নয়। এ বিষয়ে মুসলমানদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। মুসলমানদের উচিত হবে, সালাফিপন্থী বা অন্যান্য দুষ্ট চক্রের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া এবং তাদের প্রতিরোধ করা। কোনো ইসলামি দেশেরও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া উচিত হবে না। আমরা মনে করি, কাবুলে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা তালেবান অনুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল একটি দেশ গড়ার প্রাক্কালে এ ধরনের ভীতিজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির সাথে যারা জড়িত তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন