মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার জন্য তুরস্কের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করার পর তালেবান তুরস্ক এই সহায়তা দিক-এমনটাই চাইছে তালেবান।
এদিকে, তালেবানরা কাবুল দখল করার পর বুধবার প্রথমবারের মতো তাদের সঙ্গে কাবুলে প্রকাশ্য ক‚টনৈতিক বৈঠক করেছে চীন। তালেবানের রাজনৈতক অফিসের উপ প্রধান আব্দুল সালাম হানাফির এবং চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াং ইউ-র মধ্যে বুধবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন তালেবানের সঙ্গে ‘প্রকাশ্য ও কার্যকর যোগাযোগ’ স্থাপন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, চীন কাবুলকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম এবং উভয় পক্ষের জন্য সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার চ্যানেল’ বলে মনে করে। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার আগে চীন তালেবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকে গত মাসে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। তারা কাবুলে তাদের দূতাবাস খোলা রেখেছে এবং বলেছে যে, আফগানিস্তান থেকে তার নাগরিকদের পাইকারিভাবে সরিয়ে নেয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। পাশাপাশি তারা কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করেছে। ওয়াং বলেন, ‘আমরা সবসময় আফগানিস্তানের সার্বভৌম স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখÐতাকে সম্মান করেছি, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করেছি এবং সমগ্র আফগান জনগণের প্রতি বন্ধুত্বের নীতি মেনে চলেছি।’ তিনি বলেন, ‘চীন আফগান জনগণের নিজস্ব ভবিষ্যত এবং ভাগ্যের বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্তকে সম্মান করে, আফগান নেতৃত্বাধীন এবং আফগান মালিকানাধীন নীতি বাস্তবায়নে সমর্থন করে এবং আফগানিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভাল প্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত থাকে এবং গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট তালেবানরা কাবুল দখল করে নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারত আফগানিস্তান থেকে তাদের কুটনৈতিক মিশন প্রত্যাহার করে এবং দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পাকিস্তান, চীন এবং রাশিয়া কাবুলে তাদের দূতাবাস খোলা রাখে এবং তালেবানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। কাবুল দখলের আগে গত মাসেই মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে তালেবানদের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে গিয়েছিল। চীনও তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। সেসময় চীন তালেবানদের প্রতি শিনচিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এবং বিশেষকরে পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামি আন্দোলন (ইটিআইএম)-কে সহায়তা না করার আহবান জানায়। তালেবান নেতা মোল্লা বারাদার চীনের সেই আহবানে সাড়া দিয়ে প্রতিশ্রæতি দেন যে, তালেবানরা ইটিআইএম-কে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে কোনো জঙ্গি তৎপরতা চালাতে দেবে না। এসময় মোল্লা বারাদার চীনকে আফগানিস্তানে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহবানও জানান। কাবুল দখল করার পর চীন তালেবানদের প্রতি একটি উম্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের আহবান জানায়। এছাড়া জনগণের আকাক্সক্ষা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাধারণ প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি মধ্যপন্থী এবং বিচক্ষণ দেশীয় ও বৈদেশিক নীতি গ্রহণের পরামর্শও দেয়।
এদিকে, বুধবার তুরস্কের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট চেয়ে তালেবান তুরস্কের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে তালেবান পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। খবরে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে তুরস্কের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে তুর্কি বিশেষজ্ঞরা কাবুল বিমানবন্দরের পরিচালনায় তালেবানকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে থেকে যেতে পারেন। বুধবার এ কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্ধারিত সময়সীমার (৩১ আগস্ট) মধ্যে বিদেশি বাহিনী চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনা করতে তুরস্কের কাছে প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছে তালেবান। ন্যাটো জোটের অধীনে কাবুলে থাকা তুর্কি সামরিক বাহিনীকেও আগস্টের শেষ তারিখের মধ্যে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অসংখ্য যোগাযোগ এবং বর্তমান পরিস্থিতি ও অবস্থার মূল্যায়ন করার পর, তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর উপাদানগুলো সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, সেনা প্রত্যাহারে ৩৬ ঘন্টা সময় লাগবে এবং প্রথম বিমানটি ইতিমধ্যে উড্ডয়ন করেছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর পরিচালনায় তালেবান তুরস্কের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছিল। সেই আলোচনা সম্ভবত ইতিবাচক ফলাফলে পৌঁছাবে। সৈন্য প্রত্যাহারের পর, আমরা সেখানে বিমানবন্দর পরিচালনা করতে পারি।
অবশ্য মাসখানেক ধরে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন সরকার বলে আসছে যে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও তারা কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য কিছু সৈন্য রেখে যাবে। এখন তালেবান কর্তৃক কাবুল দখল করার পর তাদেরকে বিমানবন্দরের প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা সহায়তা দিতে অনুরোধ করেছে গোষ্ঠীটি। ইতোপূর্বে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে তুরস্ক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তালেবান। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট দলটি প্রায় বিনা বাধায় কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলে আঙ্কারার ওই পরিকল্পনা ভেস্তে পড়ার উপক্রম হয়। তবে এরপরও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, তালেবান সরকারের অধীনে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিতে তুরস্ক প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যেই বুধবার তুর্কি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের খবর আসে।
২০ বছর পর ফের আফগানিস্তানের শাসনভার নিতে যাওয়া তালেবানের শর্তসাপেক্ষে করা অনুরোধ মেনে নিয়ে বিমানবন্দর পরিচালনার মতো বিপজ্জনক কাজের ভার নেওয়া হবে কি হবে না, সে ব্যাপারে আঙ্কারা এখনও দ্বিধাগ্রস্ত বলে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কও আফগানিস্তানে নেটো মিশনের অংশ ছিল। এখনও কাবুল বিমানবন্দরে আঙ্কারার কয়েকশ সেনা অবস্থান করছে। তবে তারা অল্প সময়ের নোটিসেই আফগানিস্তান ছাড়তে পারবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সূত্র : স্কাই নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।