পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিরতিহীনভাবে বন্ধ রয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার মধ্য দিয়ে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ বাড়া ও কমার মাঝখানে বিধিনিষেধ ও লকডাউনের মধ্যেও দেশের শ্রমঘন শিল্প কারখানাগুলো চালু রাখা হলেও একদিনের জন্যও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। এর ফলে নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীরা করোনা সংক্রমণের শিকার হোক, এটা কেউ চাইনা। তবে সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বন্ধ রাখার বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কেও ভাবার প্রয়োজন আছে। দেশে করোনা সংক্রমণ এই মুহূর্তে নিম্নগামী। গত জুন মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেয়ার পরও সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে তা হয়ে উঠেনি। গত সপ্তাহে করোনা সংক্রমনের হার যখন ২০-২৫ ভাগ ছিল তখন ১৫ আগস্টে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি সংক্রমণের হার ১০ ভাগে নেমে আসলে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে সংক্রমণ ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। হয়তো দু’চার দিনের মধ্যে তা ১০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসবে। তবে গতকাল করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শকদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসা এবং শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনা টিকা দেয়ার পরই স্কুল খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতেই ইউনেস্কোর তরফ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছিল। তাদের ভাষ্য অনুসারে, আরো একবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রভাব মোকাবেলা করতে পারবে না শিশুরা। ইতিমধ্যে বিশ্বের ৯০ভাগ দেশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। গতমাসে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে আর অপেক্ষা না করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল। তাদের বিবৃতি অনুসারে এখনো বিশ্বের ১৯ টি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। করোনা লকডাউনের বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে, এমন নীতি গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো। আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে এর সম্পুর্ন বিপরীত চিত্র। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পাবলিক পরীক্ষাগুলো নিয়ে হতাশা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যে সুদুরপ্রসারি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তা উত্তরণের কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই। গার্মেন্ট কর্মী ও বিদেশগামীদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক টিকা নিশ্চিত করার উদ্যোগ দেখা গেলেও বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
টিকার পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি এখন স্থবির হয়ে আছে। আগামী এক বছরের মধ্যেও শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকাদান সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অতএব করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরণের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকান্ড চালু রাখার কোনো বিকল্প নেই। একইভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেয়ার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতদিন লাগাতার বন্ধ থাকার কারনে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জীর্ণ-পরিত্যক্ত, ময়লা-আবর্জনা ও জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে থাকা স্বাভাবিক। করোনার সাথে সাথে শহরে প্রাণঘাতী ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। এ কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তা দূর করে দিন তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে আগেই জানিয়ে দিতে হবে। করোনায় লাখ লাখ মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক বেসরকারি ননএমপিও শিক্ষক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন, অনেক প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাম কা ওয়াস্তে অনলাইন ক্লাস চালু রেখে শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধে চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকদের মধ্যে একটি সমঝোতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা থাকা জরুরি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিধি, পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কারোনা টিকা দেয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।