Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে

ড. মোহা. হাছানাত আলী | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনরায় ওমিক্রনের থাবায় পড়েছে। অচল হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। ওমিক্রনের প্রভাবে সরকারি আদেশে প্রথমে ৬ ফেব্রুয়ারি, পরে আরো দু’সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বলতে গেলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের প্রায় সব কিছুই সচল। অচল শুধু শিক্ষাঙ্গন, যা দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই চলমান ছিল বাণিজ্য মেলা। সরকার বিষয়টি দেখেও না দেখার মতো আচরণ করেছে। মেলায় প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে। মেলায় প্রবেশে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা দৃষ্টিকটুভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। মেলায় মান্য করা হয়নি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নির্দেশনাবলী। ওমিক্রন বিবেচনায় মেলা বন্ধও করা হয়নি, যা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। ওমিক্রমনের মধ্যেই শুরু হতে পারে একুশে বইমেলা এমন সংবাদও ঘুরে বেড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়। ওমিক্রনের প্রভাবে যখন কম্পমান পুরো দেশ, তখন দৃশ্যত কোথাও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কারো মধ্যে সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। পথঘাট, মাঠ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের কড়াকড়ি নেই।

গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি সিদ্ধান্ত মালিক পক্ষ চরমভাবে উপেক্ষা করেছে। দেশের সকল বড় ছোট শপিংমল বা বিপনিবিতানে পুরোদমে কেনাকাটা চলছে। বিনোদন কেন্দ্রসমূহে জনসমাগম কিছুটা কমলেও খোলা রয়েছে সব কিছু। ঢিলেঢালাভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। তারপরও বন্ধ হয়নি বিপনিবিতান বা বিনোদন কেন্দ্রসমূহ। এখনও দেশের বহু মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়নি। সার্বজনীন টিকা কার্যক্রম চলমান থাকলেও এখনও বহু মানুষ টিকা গ্রহণ করেনি বা টিকা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে চলেছে। অথচ, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিকা গ্রহণই একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি। দেশে টিকার পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা সরকারিভাবে প্রচার করা হলেও কেন অধিকাংশ মানুষকে এখনও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হলো না, তার প্রকৃত কারণ অনেকের কাছেই অজানা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওমিক্রন দেশের অন্য কোথাও থাবা বসাতে না পারলেও শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কক্ষে সফলভাবে তালা ঝুলিয়ে দিতে পেরেছে। দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল আবাসিক হল। ওমিক্রমনের মধ্যেই খোলা আবাসিক হলে অবস্থান করছে বহু শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও শিক্ষাঙ্গনের আশেপাশে গড়ে ওঠা ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তারা একসাথে এসব আবাসিক ছাত্রাবাসে বসবাস করছে। একই ডাইনিংয়ে দলবেঁধে খাওয়া দাওয়া করছে। দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করছে। একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। এসবে ওমিক্রন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে ওমিক্রমনের প্রকোপ বৃদ্ধিপাবে অহজুহাতে ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া মোটেই বোধগম্য নয়। যারা মনে করেছিলেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করবে, তাদের সেই আশা মোটেই পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীরা শপিংয়ে যাচ্ছে, সিনেমা হলে যাচ্ছে, টি-স্টলে আড্ডা দিচ্ছে, সুযোগ মতো বাবা-মায়ের সাথে পর্যটন কেন্দ্রসমূহে পিকনিক মুডে ঘুরতে যাচ্ছে। কোনো কিছুই থেমে নেই। থেমে গেছে শুধু শিক্ষা। সবকিছু উম্মুক্ত রেখে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে শুধুমাত্র সঠিক তদারকির অভাব ও জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অনিহার কারণে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরের মধ্যে বসে আছে, তা কিন্তু নয়। বরং তারা স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে গণপরিবহনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। সবই চলছে প্রায় স্বাভাবিক গতিতে। বাজারে গেলে দেখা যায়, গাদাগাদি করে মানুষ কেনাকাটা করছে, মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার কোনো বাধ্যবাধকতা পরিলক্ষিত হয় না। হাসপাতল, ক্লিনিক, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, নৌ-পথ সব জায়গায় একই চিত্র। তাহলে কেন দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দেশের শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ডকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে, তা শিক্ষা সচেতন মানুষের কাছে আজ বড় প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো কাউকে যে পাওয়া যাবে, এমনটিও নয়। তবে প্রশ্নের উত্তরটি জানা জরুরি। কী আজব দেশে আমাদের বসবাস, যখন ওমিক্রমনের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়ে গেল বিনা বাধায়। শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করতে পারে না, পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দিতে পারে না যখন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন চলমান রয়েছে, ওমিক্রনের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে বিয়ে-শাদীসহ সকল ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি চলছে বাধাহীনভাবে।

আগেই বলেছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে ক্যান্টিনে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সবুজ চত্বরে ঘোরাঘুরি করছে বন্ধু-বান্ধবের সাথে, একসাথে তারা হলে অবস্থান করছে, টিভি রুমে যাচ্ছে, ডাইনিং বসে একসাথে খাবার খাচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু ক্লাসরুমে পাশাপাশি বসে ক্লাস করলে? পরীক্ষা হলে বসে পরীক্ষা দিলে? কী অদ্ভুত যুক্তি! পক্ষান্তরে পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাপী ওমিক্রনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও অধিকাংশ দেশই এবার তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ করেনি। ইউনিসেফ ইতোমধ্যে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সচল করার আহবান জানিয়েছে। আমাদের দেশের বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিপক্ষে কথা বলতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও জনসাধারণ কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করে বা বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বা জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লাভ কউ? এমন বাস্তবতায় শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে একটি জাতিকে পঙ্গু করার কোনো মানে হয় না। বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে সরকার ঘোষিত বা এ লক্ষ্যে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ যদি অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা যেত, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা যেত, যদি পথে-ঘাটে-মাঠে সরকারের ঘোষিত বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা যেত, তাহলে সেটাই হতো ওমিক্রন মোকাবেলায় প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে যদি শতভাগ শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকা সময়মত দেয়া যেত, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রদত্ত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করা যেত, তাহলে এবার অন্তত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রয়োজন হতো না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, বরং দেশের ৭০/৮০ ভাগ মানুষকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হতে পারে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর সমাধান, যা অতীব জরুরি। সকলেরই জানা যে, করোনা এমন একটি ভাইরাস যা মেডিসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সম্ভব হতে পারে যদি আমরা দ্রুত দেশব্যাপী টিকাকরণ কার্যক্রম শেষ করতে পারি। এছাড়া আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আগাগোড়াই এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ করেছি, যা করোনা নিয়ন্ত্রণে মোটেই সহায়ক নয়। দেশে পর্যাপ্ত টিকার মজুদ থাকা সত্ত্বেও কেন দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে সময়মত টিকা দেয়া সম্ভব হলো না তা নতুন করে ভেবে দেখতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে এই না পারার প্রকৃত কারণ। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার লক্ষ্যে দেশের সকল শিক্ষার্থীকে দ্রুত টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রাদান করতে হবে। সম্ভব হলে তাদের বুস্টার ডোজ দিতে হবে। এছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। কোনভাবেই যেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মাস্ক ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন বা প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বরং প্রজ্ঞাপন যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিশ্চিত করাই হবে ওমিক্রন মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘদিন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরে এমনিতেই শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার গুণগতমানে টান পড়েছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মোবাইল আসক্তি বহুগুণে বেড়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন দীর্ঘায়িত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। বাল্যবিবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে বহু ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজ থেকে ঝড়ে পড়েছে।

আমরা জানি যে, অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি দেশে অনেকটা ব্যয়বহুল। ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা তাদের শিক্ষা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়েছে। অর্থের অভাবে এবং শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা তাদের লেখাপড়া বাদ দিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য কৃষি ক্ষেত্রে বা গার্মেন্ট শিল্পে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে দেশে যে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে, তা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল অন্যদিকে প্রযুক্তির অপ্রতুলতা ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য ও ধীরগতির কারণে এখনও তা সর্বজনস্বীকৃত শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা যত কথাই বলি না কেন, এখনও আমরা প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্বের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারিনি। আমরা এখনও উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিসেবা প্রদান করতে পারিনি। প্রযুক্তি ব্যয় সহজলভ্য করতে পারিনি।

এটা জানা যে, করোনার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ফলে অনেক অভিভাবক উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট ক্রয় করে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। বিত্তবান ও শহরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে অনেকটাই ভাগ্যবান। প্রযুক্তিগত সুবিধার শতভাগ উপভোগ করছে। কিন্তু গ্রামে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সেই শহুরে জীবনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে সুফল পাওয়া কোনভাবেই সম্ভবপর হচ্ছে না। আমরা আশা করতে চাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আর দীর্ঘায়িত হবে না।

আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ আরেকবার বৃদ্ধি করা হলে দেশে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের শিক্ষকরা চরম অর্থ কষ্টে পতিত হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠাননের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের নিকট থেকে কোনো অর্থ সহায়তা পান না। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসের ওপর তাঁদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তি নির্ভর করে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে নিদারুণ অবস্থায় পতিত হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি পেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই আর্থিক সংকট গোটা দেশের বিকাশমান বেসরকারি খাতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এই ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করার জন্য ক্যাম্পাস সচল করার ত্বরিৎ উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। সামাজিক বিশৃঙ্খলারোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লাসরুমভিত্তিক পাঠ ও পঠন চালু করা সময়ের দাবি। আশা করি, সরকারসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি ভেবে দেখবে।

লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

২২ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন