Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তানের সঙ্গে শুকনো ফলসহ রফতানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:৩৯ পিএম

শুকনো ফলের বাজারে আগুন! হ্যাঁ, কাবুলে তালিবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে দিল্লি-সহ ভারতের প্রায় সর্বত্র শুকনো ফলের বাজারদর আকাশ ছুঁয়েছে। টাটকা ফলের দামও বেড়েছে মাত্রাছাড়া হারে। হিং, এলাচ, গরমমশলাও বাজারের অবস্থা একইরূপ। আখরোট, কাজুবাদাম, কিসমিসের কথা না বলাই ভালো। ও দিকে ভারতের পোশাক, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সিমেন্ট, চিনি, কম্পিউটারের যে বিশাল বাজার ছিল কাবুল-সহ গোটা আফগানিস্তানে, তা-ও থমকে গিয়েছে। -আনন্দবাজার

ওই সব পণ্যে বোঝাই হাজার হাজার ট্রাক সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়াঘা সীমান্তের এ-পারে। ভারতীয় পণ্যের একটি বড় অংশ এত দিন ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়েই ঢুকে যেত আফগানিস্তানে। তীব্র অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য। দু’দেশের মধ্যে দেড়শো কোটিরও বেশি ডলারের বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকারে। আফগানিস্তান ফের তালেবানি কব্জায় যাওয়ায় শুধুই যে উপমহাদেশে সন্ত্রাসের আশঙ্কা-বৃদ্ধি ঘটেছে, তা-ই নয়, দিল্লির উদ্বেগ লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে আফগান মুলুকের সঙ্গে দেশের রফতানি, আমদানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েও। ভারতের রফতানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের সঙ্গে। তাই কাবুল ফের তালিবানের কব্জায় চলে যাওয়ায় সিদুঁরে মেঘ দেখছে এখন দিল্লি।

২০০১ সালে আমেরিকার সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন হওয়ার পর থেকেই আফগান মুলুকের সঙ্গে ভারতের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য বেড়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে সেই বাণিজ্যের পরিমাণ পৌঁছয় দেড়শো কোটি ডলারে। গত অর্থবর্ষেও তা আরও বেড়ে যায়। ভারতের বাজারে শুকনো ফল আর গরমমশলার যে চাহিদা, তার ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হত আফগান মুলুক থেকে। টাটকা ফল তো আসতই, আফগানিস্তান থেকে আসত আখরোট, কাজুবাদাম, আঞ্জির, অ্যাপ্রিকট, সবুজ ও কালো রঙের কিসমিস, সুগন্ধী হিং এবং ডুমুরের মতো ট্রাকের পর ট্রাকভর্তি শুকনো ফলও। আর ভারত আফগানিস্তানে মূলত রফতানি করত পোশাকআশাক, জীবনদায়ী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম, কম্পিউটার, হার্ডওয়্যার পণ্যাদি, সিমেন্ট, চিনি এবং কৃত্রিম ফাইবার।

দু’দেশের মধ্যে এই আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দাঁড়িপাল্লাটা ঝুঁকে থাকতো ভারতেরই দিকে। আফগান মুলুক থেকে আমদানির চেয়ে সে দেশে ভারতীয় পণ্যের রফতানিই হত বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ৫ বছরে আফগান মুলুকে ভারতের রফতানির পরিমাণ বেড়েছিল অন্তত ৬৩ শতাংশ। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে ভারত ৮২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার মূল্যের পণ্যাদি রফতানি করেছিল আফগানিস্তানে। আর আফগানিস্তান থেকে সেই সময় ভারতে এসেছিল ৫০ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার মূল্যের পণ্যাদি। তবে শুধুই যে ভারতের রফতানির পরিমাণ বেড়েছিল তা-ই নয়, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের নিরিখে আফগান মুলুক থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণও বেড়েছিল ৭৪ শতাংশ। তালিবানের সঙ্গে ভারতের এখনও কোনও বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। তাই দু'দেশের আমদানি, রফতানি বাণিজ্যের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় যত দিন যাচ্ছে ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে।

আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য ২০০১ সাল থেকে ভারত সে দেশে গত ২০ বছরে বিনিয়োগ করেছিল ৩০০ কোটি ডলার। তার মধ্যে যেমন ছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে যৌথ ভাবে ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, তেমনই ভারত বিনিয়োগ করেছিল আফগান মুলুকের সড়কপথ নির্মাণ ও উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুতের পরিবাহী লাইন বহু দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া, স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণ ও উন্নয়নের মতো মোট ৪০০টি প্রকল্পে। সেগুলির ভবিষ্যত নিয়েও এখন গভীর উদ্বেগে রয়েছে দিল্লি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান-ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ