Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিলেছে। গত সোমবার এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বিদ্যুত ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাস সংকট কমিয়ে আনতে এই গ্যাসক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এ গ্যাসক্ষেত্রে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে বাপেক্সের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এর ৭০ শতাংশ উত্তোলনযোগ্য ধরা হলে এই ক্ষেত্র থেকে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৩শ কোটি টাকা। দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে এটি একটি দারুণ সুসংবাদ। দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসায় শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পুরনো গ্যাস সংযোগে সরবরাহ ঠিক রাখতে আবাসিক ও শিল্প কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রখেছে সরকার। এর ফলে দেশের আবাসনখাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা অবশ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা পূরণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রোপকূলে এলএনজি টার্মিনাল ও সরবরাহ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়নের সাথে তাল মিলিয়ে জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা পূরণে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিশেষ করে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন ও নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনে একমাত্র দেশীয় সংস্থা বাপেক্সের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগানোর দাবি দীর্ঘদিনের।

দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির তত্ত¡াবধানে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হলে দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের জ্বালানি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। গত একযুগে দেশের গ্যাসসম্পদের তেমন কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। বিশেষত সমুদ্রে গ্যাসসম্পদের বিশাল সম্ভাবনার কথা বলা হলেও তা কাজে লাগানোর যথাযথ উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার ও ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি নিজ নিজ এলাকায় গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে। অথচ, বাংলাদেশের সীমানায় থাকা বঙ্গোপসাগরের ২৬টি বøকের মধ্যে মাত্র চারটি বøকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ চলছে। মূলত বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অনুসন্ধান ও উত্তোলনযোগ্য এসব অফশোর গ্যাসচুক্তি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ও মতভেদও দেখা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে সম্পাদিত অফশোর গ্যাসচুক্তি নিয়ে দেশে ব্যাপক মতভেদ ও প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে সে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। দেশের বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থাকা সত্তে¡ও উত্তোলিত গ্যাস বিদেশে রফতানির সুযোগ থাকায় ২০১৯ সালে সম্পাদিত গ্যাসচুক্তি নিয়েও এমন বিতর্ক দেখা দেয়। তবে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনতে অসম্মত হলেই কেবল গ্যাস অন্যত্র বিক্রি করতে পারবে বিদেশি কোম্পানিগুলো। দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সের অধীনে থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলো স্বাভাবিকভাবে এমন বিতর্কের বাইরে।

এর অনেক আগে ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে ভোলায় প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স। সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের উপর ভর করে স্থলভাগে গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্স যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, বাস্তবতার নিরিখে বাপেক্সকে শক্তিশালী করে কাজে লাগানো হলে গ্যাসের চলমান সংকট ও বিতর্ক হয়তো থাকতো না। দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্সের পূর্ণ সক্ষমতা সত্তে¡ও বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরতা দেশের সচেতন দেশবাসী স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। দেশের আমলাতন্ত্রে লুকিয়ে থাকা স্বার্থান্বেষি মহল বিদেশি কোম্পানির গোপন কমিশনভোগী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন একসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে দক্ষতার প্রমাণ দিতেও সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সমুদ্রের অবশিষ্ট বøকগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বাপেক্সকে যথাযথ লজিস্টিক ও জনবলসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলতে পারলে তা দেশের জন্য অনেক বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে। জকিগঞ্জে প্রাপ্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশে বিদ্যমান গ্যাস সংকট কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে গ্যাস সংযোগের প্রয়োজনীয় সংস্কার, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং শিল্প ও আবাসনখাতে নতুন গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করার বিষয়টিও নতুনভাবে ভেবে দেখতে হবে। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বহুমাত্রিক উদ্যোগ এই সঙ্গে অব্যাহত রাখতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন