পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্যাসের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। কয়েক দিন ধরে এ সংকট চললেও সমাধানের উদ্যোগ নেই। গ্যাস না থাকায় ঢাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুলা জ্বলছে না। ফলে রান্না প্রায় বন্ধ। খাবারের জন্য বাড়ির লোকজনকে আশপাশের হোটেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। হোটেলগুলো সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের সংকট বেড়েছে। আবাসিকের পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে অনেক সিএনজি স্টেশন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন এরই মধ্যে তিন ভাগের একভাগ কমে গেছে।
গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, শিল্প-কারখানায় প্রাধান্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহের ফলে আবাসিকে হয়তো গ্যাসের কিছুটা প্রেসার কম থাকতে পারে। তবে সেখানে আমরা বিকল্প হিসেবে এলপিজি রেখেছি। শীতে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাসের সমস্যা থাকবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন বিদ্যুতের যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে সংকট কেটেছে। আমরা আশা করছি সামনে আর সমস্যা হবে না। বিশ্বে জ্বালানির ক্ষেত্রে যদি ব্যাপক পরিবর্তন না হয়, এখন যে অবস্থাটা আছে স্টিল নাউ আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, আগে তাদের গ্যাসের ঘাটতি ছিল ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দেশে দিনে মোট ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারত ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো। এখন পারছে ২৭০ থেকে ২৭৫ কোটি ঘনফুট। তীব্র শীতের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২৬৪৯ মিলিয়ন ঘুনফুট। কিন্তু এই দিন সরকারি ছুটি থাকলেও চাহিদা ছিল ৩৩৯৯ মিলিয়ন ঘুনফুট। শীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাগুলো চালু থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে সংকট তীব্র হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অবৈধ সংযোগ। চড়া দামের কারণে বৈশ্বিক খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ দীঘ কয়েক মাস ধরে। অন্য সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন অথবা সার কারখানায় সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হতো। এখন সেই সুযোগটিও নেই। কারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প জ্বালানি ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে। ফলে গ্যাস দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। সার কারখানা বন্ধ করে দিলেও বিপদ। সারের দাম চড়া, আমদানিতে বাড়তি খরচ লাগছে। তাই দেশি সার কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে। আমদানিনির্ভরতা ভুল নীতি ছিল। তাই এখন ভুগতেই হবে, এটা কৃতকর্মের ফল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এই যে সব খাতেই এখন গ্যাস–সংকট চলছে। ঢাকার বাসিন্দারা কেউ কেউ রাতে অথবা খুব ভোরে উঠে রান্না করছেন। কেউ কেউ কিনেছেন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার। তাঁদের এলপিজির দামও দিতে হচ্ছে। আবার সরকারি গ্যাসের বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ৬৪টি কারখানায় গ্যাস সরবরাহ ও পোশাক উৎপাদন পরিস্থিতি জানতে একটি জরিপ করেছে নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। গত দুই মাসে কারখানা গুলোতে গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। গড়ে ১ দশমিক ৮ পিএসআই করে গ্যাস পেয়েছে তারা। এতে কারখানার উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর না দিয়ে সরকার আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। এ আমদানি নির্ভরতাই সংকট তৈরি করেছে। এখন দেশীয়ভাবে যে গ্যাস উৎপাদিত হয়, তার ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে শেভরন। এক কোম্পানির ওপর এমন নির্ভরতাও ভোগাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন দেশি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে পেট্রোবাংলা।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান ইনকিলাবকে বলেন, সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে, এটা ঠিক। সারা বিশ্বেই গ্যাসের সমস্যা এখন। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতেও রান্নার গ্যাস সব সময় মিলছে না। উত্তরার দক্ষিণখানের আনোয়ার বেগম জানালেন দীর্ঘদিন থেকে গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন। দিনের বেলা গ্যাস থাকেই না। খুব সকালে গ্যাস চলে যায়, আসে রাত ১০টার পর। ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে হয়। গত দেড় মাস ধরে এভাবে চলছে বলে জানালেন তিনি। শুধু দক্ষিণখান নয়, রাজধানীর অনেক এলাকায় এখন গ্যাস সংকট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। শীতকালে গ্যাসের সমস্যা কথা শোনা গেলেও গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সারা বছর ধরেই গ্যাসের সংকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, পশ্চিম আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, আদাবর, পশ্চিম ধানমÐি, লালবাগ, সোবহানবাগ, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, কামরাঙ্গীরচর, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, দক্ষিণ বনশ্রী, রামপুরার শিমুলবাগ, আশীষ লেন ও উলন রোড এলাকায় গ্যাস সমস্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার কোথাও কোথাও সারাদিন চুলা জ্বলে না। কোথাও সকালেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। আসে দুপুরে। আবার কোথাও সন্ধ্যায় গ্যাস পাওয়া যায়।
শিল্পউদ্যোক্তারা বলছেন, শিল্পে গ্যাস সংকট বেড়েছে। বিশেষ করে গাজীপুর, আশুলিয়া, টঙ্গী ও সাভারের শিল্পকারখানাগুলোতে চাহিদা অনুসারে গ্যাস মিলছে না। যখন গ্যাস আসে তার চাপ এত কম থাকে যে কারখানা চালু করা যায় না। প্রায় সব কারখানা দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে। সাভার ও আশুলিয়ার একাধিক গার্মেন্টস মালিক জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। কারখানা প্রায় বন্ধ থাকছে। শ্রমিকরা অনেকটা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। আশুলিয়ার ইউনিক ফ্যাশন কারখানার ম্যানেজার রফিকুল হক বলেন, তারা দিনে কয়েক ঘণ্টা গ্যাস পাচ্ছেন না। যখন আসছে তখন গ্যাসের চাপ কম থাকে। ফলে কারখানা প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অনেক শিল্পমালিক গ্যাসের অভাবে সিএনজি দিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার ফল হিসেবে তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে পারছেন না।
এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে। কোথাও ৬ ঘণ্টা, কোথাও ১২ ঘণ্টা পুরোপুরি বন্ধ থাকছে কারখানা। বাকি সময়েও গ্যাসের চাপ কম থাকছে। এতে উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, কোথাও ৬ ঘণ্টা, কোথাও ১২ ঘণ্টা পুরোপুরি বন্ধ থাকছে কারখানা। বাকি সময়েও গ্যাসের চাপ কম থাকছে। এতে উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ইনকিলাবকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা, কোনো কোনো দিন রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ শূন্য বা তার কাছাকাছি থাকে। ফলে সে সময় পূর্ণ উৎপাদন সম্ভব হয় না। রাতে গ্যাসের চাপ বাড়লে উৎপাদন করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।