Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৭ বছরেও নেয়া হয়নি গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ

টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড বিস্ফোরণের ১৭ বছর পূর্তি। অগ্নিকাণ্ডে ঘটনার ১৭ বছরেও নেয়া হয়নি গ্যাস উত্তোলনের কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান মেশিন ও যন্ত্রাংশ, এগুলো যেন দেখার কেউ নেই। গ্যাস ফিল্ডের আশপাশে অবস্থানরত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের লোকজনের অভিযোগ, এখনও সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের মালিকরা।

২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারী দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে প্রথম বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একই বছরের ২৪ জুন দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ড হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন মনে রেখেছেন টেংরাটিলাবাসী। ফেলে আসা এক বিভীষিকাময় সেইদিনের দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত টেংরাটিলার গ্যাসফিল্ডের আশপাশের প্রতিটি মানুষকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ গ্যাস উত্তোলন ও বিপনন বন্ধ থাকায় বুদ বুদ আকারে গ্যাস বের হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং স্থানীয়দের দিন কাটছে এক অজানা আতঙ্কে।

সরেজমিনে গ্যাস বিস্ফোরিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্যাস ফিল্ডের আশপাশে এখন সুনশান নিরবতা।অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনার ১৭ বছরেও বন্ধ হয়নি টেংরাটিলার গ্যাসফিল্ডের গ্যাস উদগীরণ। গ্যাসকূপের মরিচা পড়ে তিলে তিলে নষ্ট হচ্ছে গ্যাসফিল্ডে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবহেলা অযত্নে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নানা মেশিনারিজ ও লোহার মূল্যবান পাইপ। পশ্চিম পাশের ঢেউ টিনের বেড়া ভেঙে যাওয়ায় গবাদিপশু ও বাইরের মানুষ অবাধে প্রবেশ করছে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত রয়েছে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড। টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের পর আশপাশের লোকজনদের সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছুদিন পরই নাইকো তাদের মূল সরঞ্জামাদি নিয়ে গ্যাস ক্ষেত্র থেকে চলে যায়।

এই গ্যাস ফিল্ডের মোট আয়তন প্রায় ৫৮ একর। দু’দফা গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের প্রোডাকশন কুপের রিগ ভেঙে প্রচণ্ড গর্জনে কেপে উঠে দোয়ারাবাজার ও ছাতক শহর। এই ভয়াবহ কম্পনসহ ২শ’ থেকে ৩শ’ ফুট পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা ওঠানামা করতে থাকে। দুই দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের মাটির ওপরে ৩ বিসিক গ্যাস পুড়ে যাওয়া এবং ৫.৮৯ থেকে কমপক্ষে ৫২ বিসিক গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, খৈয়াজুরি ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গাছ-পালা মরে গিয়ে বিরার ভূমিতে পরিণত হয়। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এলাকার পরিবেশ। আশপাশের অনেকেই এই গ্যাস উদগীরনের ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এখনও ওই এলাকায় গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের কথাগুলো মনে হলে আঁতকে উঠেন সাধারণ মানুষ। গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের পর টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক দূষণ, শ্বাসকষ্ট, শ্রবণশক্তি হ্রাস, চোখে কম দেখা, চর্মরোগসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে গ্যাস ফিল্ডে নাইকো কোম্পানীর কোন কার্যক্রম নেই। গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটকে গিয়ে জানা গেলো এখানে ৬ জন নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, প্রতি মাসে ঢাকা থেকে এক কর্মকর্তা এখানে এসে কয়েকদিন থেকে চলে যান।

এ ব্যাপারে টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগুন লাগনের ফর থাইক্কা কত টিভি আর পেপারে রিপোর্ট হইছে, আমরা যে কত কষ্টে বাইচ্ছা আছি, কই সরকারতো আমাদের খবর রাখে না। আমার ক্ষতি হইছে প্রায় ২০ লাখ টাকার, সরকারিভাবে আমাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। একই গ্রামের আবু হানিফা বলেন, গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণের সময় আমার স্ত্রী গর্ভ অবস্থায় ছিল। এসময় প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ঝাপ করতে গিয়ে আমার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে। বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকার, আমাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮ হাজার টাকা। আজবপুর গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, গ্যাসের আগুনে বাড়ী-ঘর গাছ-পালা পুড়ে গেছে। আমাকে ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ হাজার টাকা। অনেক দালালরা এখানে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ ব্যাপারে সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, টেংরাটিলা এখন অনেকটাই বৃক্ষ শুন্য। গ্যাস ফিল্ডে দুর্ঘটনার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কথা রাখেনি কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো। ক্ষতিগ্রস্থরা এখনও পর্যাপ্ত পরিমানের ক্ষতিপূরণ পায়নি। গ্যাসফিল্ড ট্র্যাজেডির সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। আমরা বিশ্বাস করি এখনো এখানে অনেক গ্যাস মজুদ রয়েছে। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আবারো গ্যাসক্ষেত্রটি চালু হবে বলে আশাবাদ। গ্যাসক্ষেত্রটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিংয়াংকা ইনকিলাবকে জানান, টেংরাটিলা গ্যাস অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাপেক্স যদি গ্যাসফিল্ড খননের উদ্যোগ নেয় তা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ