পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলছে না, মিলকারখানার চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম; হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার উপক্রম; তারপরও ৭ মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। গতকাল বুধবার নির্বাহী আদেশে বাড়ানো দাম ফেব্রæয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ৮.৯৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা, ক্যাপটিভে ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১৮.০২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, বাণিজ্যিক হোটেল ১০.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০.৫০ টাকা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আবাসিকের আগের দাম বহাল রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধির ধুয়া তুলে গত জুন মাসে গ্যাসের দাম ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। তখন সার উৎপাদনে ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ (বৃহৎ শিল্পে ১১.৯৮ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১.৭৮ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০.৭৮ টাকা, চা শিল্পে ১১.৯৩ টাকা) বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। শিল্প খাতে দাম বাড়ানো হলো প্রায় তিন গুণ।
আবাসিকে এক চুলার দর ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের ইউনিটপ্রতি দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা, সার উৎপাদনে ঘনমিটার ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা।
পেট্রোবাংলার গত জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজির (ট্যাক্স-ভ্যাটসহ) ইউনিটপ্রতি ঘনমিটারের দর পড়েছিল ৪৬.৮৫ টাকা। বাপেক্স থেকে কেনা গ্যাস ৪.৫৪ টাকা, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির দশমিক ৩৩ টাকা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি দশমিক ৮৭ টাকা এবং আইওসির কাছ থেকে ২.৯০ টাকা। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি বিবেচনায় মিশ্রিত গ্যাসের মূল্য দাঁড়াবে ১৫.৩০ টাকা। অন্যান্য চার্জসহ গড়মূল্য ২০.৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।
বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি তখন তার হিসাবে বলেছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে গড়ে দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় দর নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গড়ে ২৯২ মিলিয়ন কম হয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে ২.৪০ টাকা হারে কমে মোট ব্যয় কমেছে ৭২ হাজার ৮৪৩ মিলিয়ন টাকা। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দৈনিক গড়ে ৬৮৪.৮৪ মিলিয়ন এলএনজি বিবেচনায় মিশ্রিত ক্রয়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২.৪৭ টাকা।
গত বছরের শেষ দিকে টেক্সটাইল মিল মালিকরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত জ্বালানির অভাবে ৯০ শতাংশ কলকারখানা ভালো নেই। বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প : ৬০ থেকে ৭০ ভাগ উৎপাদন কমে গেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে এখন এ শিল্পের গোটা সেক্টর মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুতের (ঘন ঘন লোডশেডিং) অভাবে এসব কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুধু তাই নয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে ৯০ শতাংশ বস্ত্রকলে উৎপাদন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে। টেক্সটাইল মিল মালিকরা চতুর্মুখী সঙ্কটে আছেন। একদিকে অর্ডার সঙ্কট। গ্যাস সঙ্কটে দিনের বেশির ভাগ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠা এ শিল্প এখন জ্বালানি সঙ্কটের কারণেই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে দেশের শিল্প ব্যবসার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলা হয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে দেশের কারখানা বন্ধ হয়ে ব্যবসা ডুবে গেলে ৪৫ লাখ শ্রমিক বিপাকে পড়বে। গ্যাসের অভাবে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে যে কোনো মূল্যে এলএনজি আমদানির দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। রফতানি ধরে রাখতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি।
এদিকে রাজধানী ঢাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় দিনে গ্যাস থাকে না। আবার কোথাও কোথাও গ্যাস থাকলেও চাপ কম। রাতে গ্যাস এলেও কোনো রাতে ১২টার পর কোনো রাতে ২টার পর গ্যাসের চুলা জ্বলে। ফলে পরের দিনের খাবার গৃহিণীদের আগের রাতে করে রাখতে হয়। যেখানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট; সেখানে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ ৫৮ হাজার। এ ছাড়া বাণিজ্যিক সংযোগ প্রায় ১২ হাজারের মতো। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ মিলিয়ন। ফলে ৩০০ করে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গ্যাস সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনে গ্যাস সঙ্কট থাকার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযোগ জানানো হলেও সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।
গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘœ না করে ফের গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।