Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইন্টারনেটে পিছিয়ে থাকা লজ্জাজনক

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ডিজিটালাইজেশন যখন বিশ্বের অনিবার্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়, তখন আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প গ্রহণ করে। গত এক দশকে দেশের ডিজিটালাইজেশনে অবকাঠামোগত অগ্রগতিও কম হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাস্তবতা ও সরকারের প্রতিশ্রুতির নিরিখে যতটা কাজ হওয়ার কথা ততটা হয়নি। কাজের চেয়ে রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি হয়েছে অনেক বেশী। দেশের ৯০ শতাংশের বেশী এলাকা মোবাইল ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। অতি দরিদ্র মানুষদের মধ্যে কিছু লোক বাদ দিলে বেশিভাগ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে মোবাইলফোন। করোনাকালীণ বাস্তবতায় ঘরে ঘরে স্মার্টফোন ও মোবাইল ইন্টারনেটও পৌছে গেছে। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের রূপরেখায় ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির যে হার ২০২৪ সালে অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল, করোনা মহামারীতে প্রায় সবক্ষেত্রেই অনলাইন ভিত্তিক নির্ভরতার কারনে ২০২১ সালেই তা অর্জিত হয়েছে। তবে সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে ইন্টারনেটের শ্লথগতি। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিশেষত বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের গতি পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে পরিচিত ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্সের’ সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলোতে আঞ্চলিক ও আন্তজার্তিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। গত মে মাসে প্রকাশিত স্পিডটেস্ট ইনডেক্সে মোবাইল ইন্টারনেটে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৪তম। জুন মাসে এসে একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৩৫তম। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। এমনকি আফ্রিকার যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সিরিয়া, লিবিয়া, দরিদ্রতম দেশ ইথিওপিয়া, সুদান বা উগান্ডাও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে শুধুমাত্র আফগানিস্তান ও ভেনিজুয়েলা।

করোনা মহামারীতে বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে লকডাউন, শাটডাউন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিংয়ের কারণে মানুষের প্রয়োজনীয় সব সেক্টরেই অনলাইনভিত্তিক পরিষেবার পরিসর বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, টেলিমেডিসিন, ই-কর্মাস, অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন মার্কেটিং, সরকারি তথ্য পরিষেবা, ই-রেজিস্ট্রেশনসহ তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে কোনোকিছুই যেন থেমে নেই। ইন্টারনেটের সংযোগে অনলাইন যখন নাগরিক সমাজের প্রতিদিনের চাহিদা পুরণ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠেছে তখন ইন্টারনেটের গতিতে পিছিয়ে থাকা মানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়ে পিছিয়ে পড়া। আমরা যখন ডিজিটালাইজেশনকে সরকারের অন্যতম মটো হিসেবে গ্রহণ করেছি, জনগণের রাজস্ব থেকে সরকার এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, তখন ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বের সব দেশ থেকে বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক পিছিয়ে পড়ার বাস্তবতা জাতির জন্য লজ্জা ও দুর্ভাগ্যজনক। ডিজিটালাইজেশনের রূপকল্পের পেছনে রয়েছেন জাতির পিতার দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণ উদ্যোক্তা ও কম্পিটার ইঞ্জিনিয়ার সজিব ওয়াজেদ জয়। তার সুযোগ্য নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তির কানেক্টিভিটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। নতুন সাবমেরিণ গেটওয়ে কানেক্টিভিটি থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু-১ সেটেলাইট স্থাপনসহ নানা ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। এখন শুধু মোবাইল ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধি এবং সব মানুষের জন্য সুলভ করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।

মোবাইল ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিম্ন সারিতে অবস্থান করলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ কিছুটা সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটির কম, সেখানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ১০ কোটি ৭৫ লাখের বেশি। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির পরিষেবা সব মানুষের কাছে সহজ ও কার্যকরভাবে পৌছে দিতে হলে আমাদেরকে মোবাইল ইন্টারনেটের কাঙ্খিত গতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসিকে আরো দক্ষ, দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক ভ’মিকা নিতে হবে। চলতি বছরের মার্চমাসে ঢাকার দুই সিটিতে পরিচালিত এক জরিয়ে দেখা যায়, ঢাকার গ্রাহকরা ফোরজি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৬ এমবিপিএস গতি পাচ্ছেন। অথচ চুক্তি অনুসারে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো ফোরজি সংযোগে সর্বনিম্ন ৭ এমবিপিএস গতি নিশ্চিত করার কথা। রাজধানী শহরে যদি এই অবস্থা হয়, তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। ফোরজির সংযোগ দিয়ে বাড়তি অর্থ আদায় করলেও মানুষ থ্রিজি ইন্টারনেটের গতি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি মানুষের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা কেটে নিলেও ইন্টারনেটের গতি না থাকায় সকলেই প্রতারিত হচ্ছেন। এ হিসেবে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গ্রাহকরা অনেক বেশি টাকা খরচ করে সর্বনিম্ন গতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন। মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো ১০ জিবি-২০জিবির লোভনীয় প্যাকেজ র্ঘোষণা দিলেও ইন্টারনেটের গতি না থাকা এবং কারসাজিপূর্ণ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে মূলত প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসি’র কোনো নজরদারি আছে বলে মনে হয় না। এই করোনাকালীন বাস্তবতায় একদিকে যেমন কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ঠিক একইভাবে অনলাইন প্লাটফর্মে লাখ লাখ তরুণের জন্য আউটসোর্সিংসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক নতুন নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি অনেক বাড়াতে হবে। বিটিআরসির স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীল ভ’মিকা পালন নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের সুদৃষ্টি ও নির্দেশনায় এ সমস্যা দূর করা অসম্ভব নয়। ব্রডব্যান্ড কানেকশন সহজলভ্য ও সুলভ করতে হবে এবং ডিজিটালাইজেশনের সরকারি উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেট


আরও
আরও পড়ুন