Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টিকার যৌথ উৎপাদনের বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনা মোকাবেলায় দেশে এক ধরনের সংকট তৈরী হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তৃতীয় ঢেউয়ে নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। গত সোমবার সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২২০ জনের বেশি। তবে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এখনো ৫০ হাজারের নিচে। অন্যদিকে এক বছরে তিন শতাংশ মানুষকেও টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। এখনো নানা উৎস থেকে উপহার এবং ক্রয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত টিকা দিয়ে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। অথচ দেশের টিকাযোগ্য মানুষের জন্য ২ ডোজ হিসেবে একসাথে অন্তত ২৫ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। এখন নানা উৎস থেকে পাওয়া ৬০-৭০ লাখ টিকা নিয়ে পুনরায় ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে দশ কোটি টিকা দেশে আসবে। টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করে কাক্সিক্ষত টিকা না পাওয়াকে পর্যবেক্ষকরা চিহ্নিত করছেন। এতে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মত ধনী দেশগুলো নিজেদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি টিকা কিনে মজুদ করে অধিক জনসংখ্যার দরিদ্র দেশগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। করোনাভাইরাস নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় ভ্যাক্সিনেশনই হচ্ছে তার একমাত্র বিকল্প। শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, যারা করোনা মোকাবেলা ও ভ্যাক্সিনেশনে এগিয়ে থাকবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় তারাই এগিয়ে থাকবে। এ ক্ষেত্রের ব্যর্থতা অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করবে। বিশ্বমন্দাসহ নানা প্রতিকুলতা ডিঙিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় টিকা কেনায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ ছিল না। আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তহীনতা ও অস্বচ্ছতার কারণে ভারতের ভ্যাক্সিন ডিপ্লোম্যাসি ও ডিসেপশনের কারণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতার মধ্যেও চীন ও রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে করোনার টিকা উৎপাদন ও এসব দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে করোনার টিকা আমদানির সুযোগ নিয়ে এখনো সময় ক্ষেপণের প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনরা আন্তরিকতা অপরিসীম। ইতিমধ্যে বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের অর্থনৈতিক সংকট নেই। এক্ষেত্রে, পুরোদমে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে না পারার কারণ হচ্ছে, তাৎক্ষণিক টিকা সংগ্রহ করতে না পারা। ফাইজার, মর্ডানা-বায়োএনটেকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যারা আগে চুক্তি করেছে তারা টিকা আগে পাবে, এটাই স্বাভাবিক। টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও বিলম্ব করেছে। এর মধ্যেও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চীন-রাশিয়ার মত ভূ-রাজনৈতিক অংশীদারদের সাথে মিলে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চীনা দূতাবাসের উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান বলেছেন, বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এখন বাংলাদেশ সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলেও প্রশংসা করেছেন। আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে এখনই যৌথ টিকা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করা উচিৎ।

করোনাভাইরাস স্বল্প সময়ের মধ্যে তার ভ্যারিয়েন্ট বা লক্ষ্যণ ও গতিধারার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। টিকার কার্যকারিতা ও মেয়াদ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও টিকা নিতে হতে পারে। কারণ, করোনার পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে টিকা উৎপাদন এবং মুজুতের বিকল্প নেই। এ ধরণের সংক্রামক ভাইরাস মোকাবেলা করতে হলে কোটি কোটি মানুষকে একই সময়ে টিকা দিতে হবে। টিকার মজুদ হাতে থাকলে একদিনে কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে দশ কোটি টিকা আসলেও তা দিতে প্রায় চার বছর লেগে যাবে। ফলে দ্রæত ধরণ পাল্টানো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সব মানুষের হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে কয়েক মাসের মধ্যে সবার টিকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গতকাল প্রকাশিত বøুমবার্গ রিপোর্ট অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি লোককে এরই মধ্যে পূর্ণডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। টিকাযোগ্যদের পর ইউরোপো কিশোরদেরও টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। উপমহাদেশে মালদ্বীপ, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান বা মিয়ানমারের চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। করোনা ভ্যাক্সিনেশনে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দ্রততম সময়ের মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষের টিকাদান সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব উৎস থেকে ভ্যাক্সিন সংগ্রহের পাশাপাশি নিজস্ব ও যৌথ ব্যবস্থাপনায় টিকা উৎপাদন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, টিকা প্রদান যত ধীর হবে, অর্থনীতিও তত ধীর হয়ে পড়বে। এতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই টিকা কার্যক্রম দ্রæতায়িত করা ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কার্যক্রম চালাতে হবে। আগামী জুনের মধ্যে যাতে দেশের সিংহভাগ মানুষকে টিকা প্রদান করা যায়, এমন পরিকল্পনা করতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের কথা কয়েক মাস আগে থেকেই বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, টিকার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে দ্রæত যৌথ উৎপাদনে যেতে হবে।

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিকা


আরও
আরও পড়ুন