পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে মাদকের বিস্তার বেড়ে গেছে। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকের কিছু ছোট কারবারি বা বহনকারি গ্রেফতার করলেও মূল হোতাদের টিকিটি ছুঁতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ব্যর্থতার কারণে মাদকের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না। দিন দিন দেশে প্রচলিত ধারার মাদকের পাশাপাশি নিত্যনতুন ভয়ংকর মাদক প্রবেশ করছে। সম্প্রতি এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) নামক ভয়ংকর এক মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহতা এমনই যে, এর সেবনকারী নিজেই নিজের ঘাতক হয়ে উঠতে পারে। গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ মাদক সেবন করে দা দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে। এলএসডি উত্তেজনার সঙ্গে চিন্তা, অনুভূতি ও পারিপার্শ্বিক চেতনা পরিবর্তন করে দেয়। হ্যালুসিনেশনের সৃষ্টি হয়। এতে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং আত্মহত্যা ও অন্যকে হত্যার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ এই মাদক এখন দেশে আসছে। এতে উঠতি বয়সী কিশোররা পর্যন্ত আসক্ত হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য নতুন উপদ্রব হিসেবে যে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ মাদক। উঠতি বয়সী কিশোরদের অনেকে মাদকাসক্ত, যারা খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদক বেচাকেনায়ও জড়িত। ফলে সমাজে যেমন এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
তরুণ প্রজন্মের বিপথগামী ও উচ্ছৃঙ্খল করে তোলার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে মাদক। মাদক চোরাকারবারিদের লক্ষ্যই থাকে তরুণ ও যুবক শ্রেণীর দিকে। তারাই তাদের মাদকের প্রধান খরিদ্দার। তারা নিত্য নতুন মাদক চোরাচালান করে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা ফেনসিডিল, হিরোইন, ইয়াবা থেকে শুরু করে এখন নতুন সংস্করণ হিসেবে এলএসডি এবং গাজার কেক নিয়ে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে এই মাদক বিক্রি করছে। দেখা যাচ্ছে, ইয়াবার সাথে এখন এই মাদক যুক্ত হয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বহুদিন ধরেই দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিস্তার চলছে। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়ে জোয়ারের মতো ইয়াবা দেশে প্রবেশ করছে। গতকাল দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেকনাফে ইয়াবার ১০০ বড় কারবারির তালিকা তৈরি করেছে সিআইডি। এছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন ইয়াবা কারবারি তৈরি হচ্ছে। এর সাথে মাছ ব্যবসায়ী, দিন মজুর, গাড়ির হেলপার, মুদিদোকানি, বেকার, বখাটে থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার কারবারি করে রাতারাতি তারা কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে। শুধু টেকনাফেই নয়, দেশের সর্বত্র ইয়াবার কারবার করে কোটিপতি হওয়ার এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশে এখন মাদক কতটা ভয়ংকর ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। অথচ এর নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারী ধরলেও এর মূল হোতাদের ধরতে পারছে না। এই মূলে যেতে না পারার কারণেই মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব সমাজের নানা অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করে শান্তি বজায় রাখা। এ কাজটি তারা করছে না। এখন রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন-সংগ্রামও নেই যে তা দমন-পীড়নে তাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। রাজনৈতিক এই স্থিতিশীলতার মাঝে মাদকের বিস্তার রোধ ও নতুন আতঙ্ক কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনোযোগ দিতে পারে। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে নির্মূল করে দিতে পারে। এর পরিবর্তে তারা সরকারকে তুষ্ট করতে নানা অভিযোগে দেশের আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার, মামলা-হামলা, হয়রানি ও জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায় করতে ব্যস্ত। অবশ্য বলা বাহুল্য, পুলিশী তৎপরতায় মাদক কারবার বন্ধ কিংবা কিশোর গ্যাং নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটাও হচ্ছে না।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মাদকের বিস্তারের সাথে জড়িত কিছু লোককে ধরে ও ক্রসফায়ার করে ঠেকানো যাবে না। এর মূল বা গোড়ায় যেতে হবে। এর পেছনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে তাদের ধরতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো ধরনের অনুকম্পা ও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। মাদক চোরাকারবারিকে কোনো দলীয় পরিচয় বা প্রভাবশালী বিবেচনায় ছাড় দেয়া যাবে না। তাহলে মাদকের বিস্তার অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। মাদক ও অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মানুষের মধ্যে সংশোধন ও সংস্কার আনতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে তাদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় ও পাঠ্যসূচীতে পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একইসঙ্গে সমাজ ও পরিবারের অভিভাবক শ্রেণীকে উদ্দীপ্ত ও সচেতন হতে হবে। সন্তানকে মাদকমুক্ত রাখতে এ কাজটি তাদের করতে হবে। জুমার নামাজের খুৎবায় মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে ইসলামের আলোকে ইমাম সাহেবদের বয়ান দিতে হবে। সর্বোপরি মাদকের বিস্তার ও নির্মূলে সরকারকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে তাকে গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।