পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডা হচ্ছে করোনা মহামারী মোকাবেলা করে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোভিড পেন্ডেমিকের শুরুতেই ্এ নিয়ে যেসব জল্পনা-কল্পনা ও ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছিল, এক বছর পেরিয়ে এসে তার প্রথম পর্বের মূল্যায়ণ অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে সব আশঙ্কার বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে এক বছরের মাথায় করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, পরীক্ষণ ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য বাণিজ্যিক উৎপাদন ও দেশে দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরুর আয়োজন এ ক্ষেত্রে অনেক বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পেন্ডেমিকের প্রলম্বিত লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি ও জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে যেসব শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে করোনা ভ্যাকসিনেশনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। করোনার চিকিৎসায় তেমন কোনো অগ্রগতির সাফল্য অর্জিত না হওয়ায় এখনো করোনা ভ্যাকসিনেশনই হচ্ছে একমাত্র ভরসা। যদিও করনো ভ্যাকসিনেশনের সাফল্য সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তথাপি এটা বলা যায়, বিভিন্ন দেশে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ ইউরোপের যেসব দেশে মহামারীতে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছিল, সেসব দেশ করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে যত সম্ভব দ্রæত সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপে ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছে বলেই ধরে নেয়া যায়। তবে করোনাভাইরাসের আগের চেয়ে শক্তিশালী নতুন নতুন স্ট্রেইন ও ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তার রেখা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে ছাপ ফেলেছে। ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত ভ্যাকসিন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপর কতটা কাজ করবে তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনা সংক্রমিত হওয়া ও মৃত্যুর অনেক ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটলেও প্রয়োগকৃত করোনা ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি এফিশিয়েন্সি ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে।
করোনার প্রথম ঢেউ দেশে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। লন্ডন, রোম, নিউইয়র্কের মত অতি উন্নত শহরগুলোতে হাজার হাজার রোগী নিয়ে হাসপাতালে বিশৃঙ্খল-বিপর্যস্ত অবস্থা সামলে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি। হাজার হাজার রোগীর জন্য হাসপাতালের আইইসিইউ, ভেন্টিলেটর সংকট মোকাবেলা সহজ কথা নয়। সে অনুপাতে বাংলাদেশে বা ভারতে করোনা সংক্রমণ ঘটলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। প্রতিদিন দু-তিনশ নতুন সংক্রমিত রোগীর মধ্যে বিশ-পঞ্চাশজনের অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। একটি বৈশ্বিক মহামারির সময় দেশের হাতে গোণা কিছু সরকারি হাসপাতাল ছাড়া বাকি সব হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ হয়ে পড়ার বাস্তবতা মানুষকে চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যত বেশি সম্ভব করোনা টেস্টের পাশাপাশি সংক্রমিত রোগিদের আইসোলেশন ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে করোনা টেস্ট সীমিত রাখতেই স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বেশি তৎপর দেখা গেছে। করোনা টেস্ট, চিকিৎসা ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়ন, করোনা ভ্যাকসিন তৈরীতে নিজস্ব সক্ষমতা কাজে লাগানোসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক ধরণের নির্লিপ্ততা ও দায়সারা ভূমিকা দেখা গেছে। বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বল্পখরচে, স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমান করোনা টেস্ট কিট তৈরীর উদ্যোগ সরকারের অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতায় রুদ্ধ হয়ে যেতে দেখা গেছে। দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী গেøাব বায়োটেক খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিনের তিনটি ফমূর্লা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় তালিকাভুক্ত হয়েছিল। গত বছর অক্টোবরে কোম্পানীর পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল ৬ মাসের মধ্যেই তাদের ভ্যাকসিনটি বাজারে আসতে পারে। এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও প্রয়োজনীয় সরকারি সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ও উৎপাদন ইতিমধ্যে হয়তো আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারতো। করোনা টেস্ট এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিয়ে একটি রহস্যজনক শৈথিল্য, অতপ:র ভারত নির্ভরতা আমাদের জন্য আরেকটি বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিপর্যয় মোকাবেলায় ত্বরিৎ কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে গত এক দশকে সরকারের সব অর্থনৈতিক অর্জন ম্লান হয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে পারে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যে দেশের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সতেরো কোটি মানুষের দেশে এখনো করোনা টেস্ট দিনে ২০-২৫ হাজারে সীমিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ৫ হাজারের অধিক নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছে এবং সংক্রমিতদের মধ্যে কয়েকশ’ হাসপাতালে ভর্তি এবং অক্সিজেন ও আইসিইউ সার্পোটের প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতিবেশি ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তান্ডব যেভাবে বেড়ে চলেছে, সেখানকার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় তিন হাজার। এটি সরকারি হিসাব, অনেক ভারতীয় প্রকৃত সংখ্যা লুকানো হচ্ছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, ভারতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরী এস্ট্রাজেনার ভ্যাকসিন নিয়ে ভারতীয় শাসকদের রাজনীতি, কূটনীতি ও বাণিজ্যিক স্বার্থের মারপ্যাঁচে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে পারছে না ভারত। বাংলাদেশের সাথে সেরাম ইনিস্টিউটের চুক্তির আগে বাংলাদেশকে চীনের টিকা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল। এখন নিজেদের সংকটের কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়েও বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে না। শতকোটি মানুষের দেশ ভারত নিজেদের চাহিদ্ ামিটিয়ে বাংলাদেশকে টিকা দেয়ার কথা ভেবে থাকলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য বড় প্রবঞ্চনা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে তা আমাদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ভারতের সাথে সীমান্ত কঠোরভাবে বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে এক ধরণের শৈথিল্য প্রর্দশনের পর অবশেষে ১৪ দিনের জন্য ভারত সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি এলাকা থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোক ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে ভারতে গিয়েছে বলে জানা যায়। এরা যেন করোনার প্রাণঘাতী সংক্রমণের বাহক হয়ে দেশে মহামারীর বিপর্যয় বাড়িয়ে তুলতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের মারাত্মক বেঙ্গল স্ট্রেইন রুখতে ভারত সীমান্ত পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ এটি অতি সাধারণ একটি বাগধারা। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বড় ধরনের প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে তথাকথিত বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের উপর আস্থা রাখতে গিয়ে বড় ধরণের প্রতারণা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় পণ্যের সবচে বড় বাজার এবং দেশটির রেমিটেন্স আয়ের সবচে বড় উৎস হিসেবে বাংলাদেশকে বার বার অস্বাভাবিক ও অযাচিত মূল্য দিতে হচ্ছে। বিশেষ সময়ে বাংলাদেশে চাল বা পেঁয়াজ রফতানী বন্ধ করা, পাটের উপর অতি উচ্চহারে এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করা, রাজনৈতিক কারণে গরু রফতানি বন্ধ করার মত পদক্ষেপগুলো থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের অবস্থান আমাদেরকে আরো স্পষ্ট ধারণা দেয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় ভ্যাকসিনই হচ্ছে একমাত্র কার্যকর পন্থা। এ কারণেই করোনাকালীণ সংকট উত্তরণে দ্রæততম সময়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সফল করার দিকেই মনোযোগ বিশ্ব নেতাদের। একেকটি দেশ যখন সম্ভাব্য প্রায় উৎস থেকে করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তখন বাংলাদেশের সামনে ছিল অবারিত সুযোগ। একদিকে চীনের সিনোভেক অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদক ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরী করা এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে ভারতীয়দের ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসির টার্গেটও হয়েছিল বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে দুইদিক থেকেই সুবিধা আদায়ের সুযোগ থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতা অথবা কোনো কায়েমি স্বার্থের কারণে অন্যসব বিকল্প পথ রুদ্ধ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করে তিন কোটি ডোজ টিকার মূল্য আগাম পরিশোধ করে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকে। চুক্তি অনুসারে, প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সেরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার পরের দিনই ভারত সরকার বিদেশে টিকা রফতানির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভ দেখা দিলে চুক্তি অনুসারে যথাসময়ে টিকা সরবরাহের বিষয়ে আশ্বাস দিলেও তারা কথা রাখেনি। সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানিচুক্তি নিয়েও বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস বা প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও তা রক্ষা করার সদিচ্ছার প্রতিফলন কখনো দেখা যায়নি। বৈশ্বিক মহামারীর সময় টিকা বিক্রির চুক্তি করে অগ্রিম টাকা নিয়ে সময়মত টিকা সরবরাহ না করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের দাবি অনেক পরের কথা, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ভারত।
করোনা সেকেন্ড ওয়েভ প্রথম ওয়েভ থেকে অনেক বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হতে পারে, এমনটা কেউ ভাবেনি। সারাদেশে লকডাউনের মধ্যে গত ১০দিনে এক হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। লকডাউন তুলে নেয়ার পর সংক্রমণ বেড়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনেক বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয়ভাবে করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরুর তিন মাসের বেশি অতিক্রান্ত হলেও এখনো তিন ভাগ মানুষও টিকা পায়নি। সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারী ১৩ লক্ষাধিক মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ দেশের টিকা কার্যক্রম চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এমন একটি বৈশ্বিক মহামারীতে টিকা নিয়ে এমন ব্যর্থতা নিয়ে খোদ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যেই বেøইম গেম দেখা যাচ্ছে। বেক্সিমকোর অর্থনৈতিক স্বার্থে করোনার টিকার বিকল্প উৎস খোলা রাখা হয়নি বলে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। ভারতের ছলচাতুরিতে প্রতারিত হয়ে দেশের টিকা কার্যক্রমে বিপর্যয় সৃষ্টির পর এখন চীন ও রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার। অথচ ফেব্রæয়ারীতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই করোনা টিকার বিকল্প উৎস সন্ধানের কথা বলা হয়েছিল। সেরামের টিকা যথাসময়ে পাওয়া গেলেও দেশের সব মানুষকে যথাশীঘ্র টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হলে আরো অন্তত ২০ কোটি ডোজ টিকার মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশেই রাশিয়ান টিকা উৎপাদনে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। দেশে বেসরকারী দুইটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ান ফর্মুলায় টিকা উৎপাদনের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর ত্বরিৎ কার্যক্রম এখনি শুরু হবে নাকি কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিতে সময় ক্ষেপণ করা হবে তাই এখন দেখার বিষয়। করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন যুদ্ধ বাংলাদেশ যথাসময়ে শুরু করলেও এরই মধ্যে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। আর বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারি দেশ হয়েও ভারত এই লড়াইয়ে হেরে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে দিল্লী-মুম্বাইয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের লাশের মিছিল চলছে। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, অক্সিজেনের অভাবে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে। করোনার এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে যখন দেশে দ্রæততম সময়ে টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখার কথা, বাংলাদেশে তখন টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতি ও চুক্তির উপর আস্থা রেখে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে বিশ্বের সবদেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সংকট দেখা দেয়। কিন্তু সামলে নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার যথাযথ কার্যক্রমের অসংখ্য উদাহরণ আছে। এই করোনাকালীন বিশ্ববাস্তবতায়ও আমাদের অর্থনীতির চাকা, রেমিটেন্স প্রবাহ থেমে থাকেনি। করোনা লকডাউনে দেশে-বিদেশে প্রায় সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও যখন সঙ্কুচিত ও নিয়ন্ত্রিত, তখনো বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়নি। অবকাঠামো উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়নি। করোনাকালীন বাস্তবতার আলোকে দেশের হাসপাতাল পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য গবেষণা, টিকা সংগ্রহ ও টিকাদান কার্যক্রম, প্রণোদনা, দরিদ্র-কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রান ও বিশেষ সহায়তাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থায় যে ধরণের কর্মসূচি ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের কথা ছিল বাংলাদেশে তা দেখা যায়নি। গত এক বছরে দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা দ্বিগুণ করা যেত, অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যাওয়ার বাস্তবতায় অক্সিজেন উৎপাদন ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ ব্যাপক হারে বাড়ানোর উদ্যোগের পাশপাশি সারাদেশে সব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জরুরী সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কোনো প্রত্যাশাই পুরণ হয়নি। আমরা যখন নিজেদেরকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে দাবি করছি, তখন দেখা যাচ্ছে, করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমে, প্রতিবেশী নেপাল-ভূটান-মালদ্বীপ-পাকিস্তান আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। অব্যবস্থাপনা ও অবিমৃষ্যকারি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ভারতের পেন্ডেমিক এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে ওরা হেরে গেছে। আমরা এভাবে হেরে যেতে চাই না। এখনো আমাদের অবস্থা ভারতের চেয়ে অনেক ভাল আছে। এই অবস্থা যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে বিষয়ে সর্বাত্মক প্রয়াস ও জরুরী বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। করোনা নিয়ে ওষুধ কোম্পানি ও হাসপাতালগুলোর কর্পোরেট মুনাফাবাজি বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিকল্প উৎস থেকে জরুরী ভিত্তিতে টিকা সংগ্রহ করে সার্বজনীন টিকা কার্যক্রমকে আরো সহজলভ্য ও জনগণের আস্থাশীল ও অংশগ্রহণমূলক করে তোলার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দরকার। ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ এবং দেশিয় কোম্পানীগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় সামনের দিনগুলোতে অক্সিজেন সংকটের যে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, তা দূর করে অক্সিজেন উৎপাদন দ্বিগুন করার জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা মহামারীর এই মহাসংকটের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সম্পদ এবং কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক সক্ষমতা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।