চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে ছিলেন সবার চেয়ে বীর সাহসী ও সবচেয়ে বেশি দানশীল। তাঁর কাছে কেউ কিছু চাইলে সাথে সাথে দান করতেন। নিজের কাছে না থাকলে ব্যবস্হা করে দিতেন। তাঁর ধৈয্যশীলতা ও সহনশীলতা ছিল সমুদ্রের ন্যায়। একবার সাহাবায়ে কেরাম কোনো কাফের গোত্রের জন্য আযাবের দুয়া করতে বললে তিনি বলেন, 'আমি তো এসেছি রহমত স্বরূপ, আযাব হয়ে আসিনি'। রাসূলের দাঁত মুবারক শহীদ করা হলে তখনও তিনি তাদের জন্য হিদায়াতের দুয়া করেন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি লজ্জাশীল। তাঁর দৃষ্টি কখনও কারো চেহারায় স্থির হয়ে থাকত না। নিজের ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপারে কখনও প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। রাগান্বিত ও হতেন না, কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে কোনো ধরণের বাড়াবাড়ি তিনি সহ্য করতেন না। যখন পিয়ারা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুটি কাজের একটি গ্রহণ করার অধিকার দেওয়া হত, তখন তিনি সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন, যেন উম্মতের জন্য সহজ হয়ে যায়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি কখনও খাবারের দোষ ধরতেন না।
হযরত আবূ হোরায়রায় রাযি. বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোনো খাবারের দোষ বর্ণনা করতে না। (বুখারী-মুসলিম)। রুচিকর হলে খেয়ে নিতেন, নতুবা রেখে দিতেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কখনও পাতলা চাপাটি তৈরি করা হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাইয়ের ওপর ঘুমোতেন। একারণে তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যেতো।
হযরত উমর রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। তিনি খেজুর পাতার মাদুরে শুইয়ে ছিলেন। তাঁর শরীর ও মাদুরের মধ্যস্হলে কোনো বিছনা ছিল না। তাঁর শরীরের পার্শ্বে মাদুরের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি পাতাভর্তি চামড়ার বালিশে ভর দিয়েছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা'আলার কাছে দুয়া করুন, তিনি আপনার উম্মতকে প্রাচুর্য দান করবেন। পারস্য ও রোমকে প্রাচুর্য দান করা হয়েছে। অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। আল্লাহর রাসূল বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি তুমি কি এই রূপ চিন্তা কর? তারা এমন গোত্র যাদেরকে তাদের যাবতীয় কল্যাণ দুনিয়ার জীবনে দান করা হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তুমি কি রাজি নও? তাদের জন্য দুনিয়া এবং আমাদের জন্যে আখেরাত। ( বুখারী-মুসলিম)।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু ও সকল মিষ্টিদ্রব্য পছন্দ করতেন। হযরত আবূ হোরায়রা রাযি. বলেন, রাসূল সা.এর তাঁর পরিবারবর্গ জীবনভর কখনও যবের রুটি পেটভরে আহার করেননি। হযরত আইশা সিদ্দিকা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত মুহাম্মদের পরিবার-পরিজন একাধারে দুদিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি। (বুখারী-মুসলিম)। রাসূলের পরিবারে কখনও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হত, দুমাস যাবত চুলায় আগুন জালাবার সুযোগ হতো না। তখন তাঁরা শুকনো খেজুর আর পানি দিয়েই জীবনযাত্রা করতেন। হযরত আইশা সিদ্দিকা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি উরওয়াকে বললেন, হে আমার বোনের ছেলে! দুইমাসে তিন চাঁদের উদয় আমরা দেখেছি, কিন্তু মুহাম্মাদের বাসগৃহে আগুন জ্বালানো হয় নাই। উরওয়া জিগ্যেস করলেন, তখন কি জিনিস আপনাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতো? তিনি বললেন, খেজুর ও পানি। অবশ্য কোনো কোনো সময় প্রতিবেশী আনসারদের দুগ্ধদানকারী উটনী ছিল এবং তারা আল্লাহর রাসূলের জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাতো। আমরা সেই দুধ পান করতাম।( বুখারী-মুসলিম) ।
সুখ-তৃপ্তির জীবন গড়তে লজ্জাবোধ করতেন। নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন। নিজের কাপড়ে নিজেই তালি লাগাতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।