Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সত্যালোকের সন্ধানে : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কবর দেশে জীবিত আছেন

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ, কে, এম, ফজলুর রহমান 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আত্মা নষ্ট না হওয়ার প্রমাণ : আল্লাহতায়ালা বলেছেন : ‘ওয়ালা তাহসাবান্নাল্লাযীনা কুতিলূ, ফী সাবীলিল্লাহি আমওয়াতান্ বাল আহইয়াউন ইন্দা রাব্বিহিম ইউরাযাকুন’ অর্থাৎ যারা আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করে তাদেরকে মৃত মনে কর না; বরং তারা তাদের প্রভুর নিকট জীবিত, তাদেরকে জীবিকা দেয়া হয়।
যখন বদরে কুরায়েশদের নেতৃবৃন্দ নিহত হলো, হুজুরে পাক (সা.) তাদের সম্বোধন করে বললেন, হে অমুক! আমার প্রভু আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন, তা আমি সত্য পেয়েছি। তোমাদের প্রভু যা ওয়াদা করেছিল তা কি তোমরা সত্য পেয়েছে? হুজুরে পাক (সা.)-এর নিকট আরজ করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি কি মৃত ব্যক্তিদের সম্বোধন করছেন? তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তারা নিশ্চয়ই আমার এ কথা শুনছে, কিন্তু তারা এর উত্তর দিতে পারছে না। দুর্ভাগ্যশীল আত্মার দায়িত্ব ও জ্ঞান সম্বন্ধে এটাই শরিয়তের প্রমাণ। আর শহীদের আত্মা সম্বন্ধে কোরআনেপাকে উল্লিখিত আয়াতই প্রমাণ। কোনো মৃত ব্যক্তিই সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য থেকে মুক্ত নয়। হুজুরে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, কবর দোজখের একটি গর্ত অথবা বেহেশতের একটি উদ্যান। এটাই শরিয়তের প্রকাশ্য প্রমাণ যে, মৃত্যুর অর্থ শুধু অবস্থার পরিবর্তন এবং মৃত ব্যক্তির দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যে প্রবেশকরণ। মৃত্যুর সময় তা বিলম্ব না করে হঠাৎ চলে আসা। কোনো কোনো প্রকার শাস্তি ও পুরস্কার কিছু বিলম্বে আসে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুরে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, মৃত্যু একটি কিয়ামত। যে ব্যক্তির মৃত্যু হয় তার কিয়ামত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয় তার স্থান সকাল ও সন্ধ্যায় তার নিকট উপস্থিত করা হয়। যদি সে বেহেশতী হয়, বেহশতবাসীদের অন্তর্গত হয়। আর যদি সে দোজখী হয়, দোযখবাসীদের অন্তর্গত হয়। তাকে বলা হয়, এই-ই তোমার স্থান যে পর্যন্ত তোমাকে রোজ কেয়ামতে উত্থান না করা হবে। এই দুই স্থান দেখলে শাস্তি ও সুখ তার নিকট গুপ্ত থাকে না।
হযরত আবু কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা আলকামার সঙ্গে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, লক্ষ্য কর। তার কিয়ামত হয়ে গেছে। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বেহেশতবাসী কি দোযখবাসী তা তার না জানা পর্যন্ত দুনিয়া থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুরে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সফরে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তার কবরের শাস্তি ক্ষমা করা হয় এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তার জীবিকা বেহেশত থেকে আসে। হযরত মাছরুক (রহ.) বলেছেন, যে মুমিন ব্যক্তি সংসারের দুঃখ-কষ্ট থেকে কবরে গিয়ে মুক্তি পায় এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ হয় তার চেয়ে অধিক কাউকে আমি ঈর্ষা করি না।
হযরত ইয়ালা ইবনে অলীদ (রা.) বলেছেন, একদা আমি হযরত আবু দারদা (রা.)-এর সঙ্গে ভ্রমণ করতেছিলাম। আমি তাকে বললাম, আপনি যে ব্যক্তিকে ভালোবাসেন তার জন্য আপনি কি বস্তু পছন্দ করেন? তিনি বললেন, তার জন্য আমি মৃত্যু পছন্দ করি। আমি বললাম, যদি তার মৃত্যু না হয়? তিনি বললেন, তাহলে যেন তার ধন ও সন্তান কম হয়, তা-ই পছন্দ করি। তবে আমি নিশ্চয়ই মৃত্যুকে ভালোবাসি। কেননা মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত কেউই মৃত্যুকে ভালোবাসে না। মৃত্যু কারাগার থেকে মুমিনকে মুক্তি দেয়। আমি স্বল্প ধন ও সন্তানকে ভালোবাসি, কেননা তারা পরীক্ষাস্বরূপ এবং সংসারাসক্তির কারণ। যে বস্তুকে ত্যাগ করতে হবে তাকে ভালোবাসাই চরম দুর্ভাগ্যের হেতু। আল্লাহ-ভিন্ন অন্য বস্তুকে স্মরণ এবং তার সঙ্গে প্রীতি ও ভালোবাসা করলে মৃত্যুর সময় তা নিশ্চয়ই বিচ্ছিন্ন হতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:)-ও এরূপই বলেছেন। মুমিনের আত্মা বা প্রাণ যখন বের হয়ে যায়, তা ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে কারাগারে রাত যাপন করে তা থেকে বের হয়ে যায় এবং সারা দুনিয়ায় ভ্রমণ ও ঘোরাফেরা করে। এই অবস্থা তিনি ওই ব্যক্তি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন, যে দুনিয়ায় থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং আল্লাহতায়ালার স্মরণ ব্যতীত তার আর কোনো ভালোবাসার বস্তু ছিল না। সাংসারিক কাজকর্ম তাকে তার প্রিয় থেকে আবদ্ধ করে রাখে এবং লোভের অভিলাষ তাকে কষ্ট দিতে থাকে; সুতরাং সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মৃত্যুই তাকে মুক্তি দেয় এবং তার প্রিয়জনের সঙ্গে নির্জনে মিলিয়ে দেয়, যার সঙ্গে তার প্রেম ও প্রীতি ছিল। সুখ-সম্পদের শেষ সীমায় মৃত্যু তাকে পৌঁছে দেয়।
শহীদের জন্য পূর্ণ সুখ ও আনন্দ : যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হন, তার জন্য সুখ ও আনন্দের সীমা নেই। কেননা সে দুনিয়ার সকল সম্বন্ধ কর্তন করে এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে তার সন্তুষ্টিকল্পে শাহাদাতের সম্মুখীন হয়ে জিহাদের জন্য অগ্রসর হয়েছে। যদি সে দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য করে সে তার আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়া ক্রয় করে লয়। বিক্রেতার বিক্রিত বস্তুর দিকে দৃষ্টি থাকে না। যদি সে আখেরাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে, সে তা খরিদ করে লয় এবং তার প্রতি তার আসক্তি জন্মে! যা সে খরিদ করে তা দেখে সে কত আনন্দিত হয় এবং যা সে বিক্রি করে তার দিকে তার লক্ষ্য কত কম থাকে, যখন সে তা থেকে পৃথক হয়। শুধু আল্লাহ প্রেমে মন নিমগ্ন থাকা কোনো কোনো অবস্থায় স্বভাবতই হয়ে থাকে কিন্তু তার ওপর তাকে আক্রমণ করে না এবং তাতে কোনো পরিবর্তন হয় না। যুদ্ধই মৃত্যুর কারণ। এ অবস্থার ন্যায় হলে তা মৃত্যুকে বরণ করার কারণ হয়ে থাকে। এ জন্যই সুখ ও আনন্দ অধিক হয়ে থাকে, কেননা সুখ ও সম্পদের অর্থ মানুষ যা চায় তা পাওয়া।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়াল্লাহুম মা ইয়াশতাহূন’ অর্থাৎ তারা যা আকাক্সক্ষা করে তারা তা-ই পাবে। এই আয়াতের মধ্যে সমস্ত সুখের ব্যাখ্যা রয়েছে। মানুষ যা চায় তা তাকে না দেয়াই সর্বাপেক্ষা বড় শাস্তি। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ওয়াহীলা বাইনাহুম ওয়াবাইনা মা ইয়াশতাহূন’ অর্থাৎ তারা যা আকাক্সক্ষা করে তাদের ও তার মধ্যে এটা প্রতিবন্ধক হয়। দোযখীদের শাস্তি সম্বন্ধে এই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা বিদ্যমান আছে।
শহীদের পুরস্কার : এই সুখ ও সম্পদ শহীদ ব্যক্তি পেয়ে থাকে, কেননা বিলম্ব না করে সে তার নিজ প্রাণকে উৎসর্গ করে দেয়। নিশ্চিত বিশ্বাসের সাহায্যে কলবে-অন্তরে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিকট এই ব্যাপার প্রকাশ হয়ে পড়ে। যদি শ্রুত সাক্ষ্য এর সমর্থনে মেনে নাও তাহলে শহীদের সব হাদিস থেকেই তা জানা যায়। প্রত্যেক হাদিসেই শহীদগণের জন্য এই অসীম সুখ-সম্পদের কথা অন্য শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত জাবেরের পিতা ওহুদে শহীদ হলেন। হজুরে পাক (সা.) হযরত জাবের (রা.)-কে বলেছিলেন, হে জাবের! আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, হাঁ সুসংবাদ দিন। তখন হুজুরে পাক (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাকে মঙ্গলের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি আরও বললেন, আল্লাহ তোমার পিতাকে জীবিত করেছেন এবং তাঁর সম্মুখে তাকে বসিয়ে রেখে বলেছেন, হে আমার বান্দা! যা ইচ্ছা তা চাও, আমি তাই তোমাকে দেব। তিনি বললেন, হে প্রভু! আমি তোমার উপযুক্ত ইবাদত করতে পারিনি; অতএব আমি তোমার নিকট এই আশা করি যে, তুমি আমাকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও এবং আমি তোমার নবীর সঙ্গে মিলে আবার যুদ্ধ করি এবং তোমার সন্তুষ্টিকল্পে আমি আবার শহীদ হই। তার কথা শুনে আল্লাহ তাকে বললেন, ওহে বান্দা! আমার বিধান এই যে, তুমি দুনিয়ায় আর ফিরে যতে পারবে না। হযরত কা’ব (রা.) বলেছেন, বেহেশতের মধ্যে এক ব্যক্তিকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখা যাবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কেন ক্রন্দন করছ? তুমি তো বেহেশতের মধ্যে রয়েছ? তিনি বলবেন, আমার ক্রন্দনের কারণ এই যে, আমি আল্লাহর পথে শুধুমাত্র একবার শহীদ হয়েছি। আমার মনের আকাক্সক্ষা এই যে, দুনিয়ায় বারবার গিয়ে আমি বারবার শহীদ হয়ে আসি।
জেনে রাখ যে, মানুষের মৃত্যু হলেই মুমিনের নিকট আল্লাহর অনন্ত গৌরব যা প্রকাশ পায় তার সামনে দুনিয়া একটি সংকীর্ণ কারাগারের ন্যায় বোধ হয় এবং তার একটি অন্ধকার গৃহে আবদ্ধ থাকার ন্যায় মনে হয়। তার একটি দরজা এমন এবং বিস্তৃত উদ্যানের দিকে। উন্মুক্ত করা হবে যে, চক্ষু তার দূরত্ব ধরতে পারবে না। তার মধ্যে থাকবে নানাবিধ বৃক্ষ, ফল-ফুল এবং পক্ষীকুল। সে তখন অন্ধকারপূর্ণ কারাগারে ফিরে আসতে ইচ্ছে করবে না। হজুরে পাক (সা.) একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। যথাÑ একটি লোকের মৃত্যু হলে তিনি তাকে বললেন, এই ব্যক্তি দুনিয়া থেকে চলে গেছে এবং পরিবারবর্গ রেখে গেছে। যদি সে তথায় গিয়ে সন্তুষ্ট হয় আর সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না, যেরূপ তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি তার মাতৃগর্ভে ফিরে যেতে চায় না। এতে তুমি বুঝতে পারবে যে, পরকালের প্রশস্ততার তুলনায় দুনিয়ার বিশালত্ব সংকীর্ণ মাতৃগর্ভের ন্যায়।
হুজুরে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ায় মু’মিন ব্যক্তি মাতৃগর্ভের ভ্রুণের ন্যায় থাকে। যখন সেই ভ্রুণ তার মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়, সে তখনই ক্রন্দন করতে থাকে। এমনকি যখন সে আলো দেখতে পায় তখন আর সে তার পূর্বস্থানে যেতে চায় না, তদ্রƒপ মুমিনদের অবস্থা। যখন তার মৃত্যু হয় এবং সে তার প্রভুর নিকট চলে যায় তখন আর সে দুনিয়ায় আসতে চায় না, যেরূপ শিশু তার মাতৃগর্ভে ফিরে যেতে চায় না। হজুরে পাক (সা.)-কে বলা হলো, অমুক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি বললেন, সে মুক্তি পেয়েছে অথবা তার নিকট থেকে লোকগণ মুক্তি পেয়েছে। প্রথম অবস্থায় তিনি মুমিনের কথা বলেছেন এবং দ্বিতীয় অবস্থায় তিনি পাপীর কথা বলেছেন, কেননা দুনিয়াবাসী তা থেকে মুক্তি পায়। হযরত আবু আমর (রা.) বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও আমরা কয়েকজন একটি কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করাকালে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর একটি কবরের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন যে, কবরটির এক পার্শ্ব উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি তা এক ব্যক্তিকে বললেন সে তার ওপর মাটি ফেলে দিল। তারপর তিনি বললেন যে, এই মাটির আঘাত তার কোনোই অনিষ্ট করবে না। কেননা আত্মাই কিয়ামত পর্যন্ত শান্তি ও পুরস্কার ভোগ করবে।
হযরত আমর ইবনে দীনার (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তার মৃত্যুর পর তার পরিবারবর্গের কী অবস্থা হয়, তা সে জানে। যখন তারা তাকে গোসল করায় এবং তাকে কাফন পরায়, সে তা লক্ষ্য করতে থাকে। হযরত মালেক ইবনে আনাস বলেছেন যে, আমি শুনেছি যে, মুমিনদের আত্মা যথায় ইচ্ছা তথায় বিচরণ করে। হযরত নোমান ইবনে বশীর (রা.) বলেছেন যে, আমি হুজুুরে পাক (সা.)-কে মিম্বরে উঠে বলতে শুনেছি, সতর্ক হও, মক্ষিকার শূন্যে বিচরণের ন্যায় ব্যতীত দুনিয়ায় আর কিছুই বাকি থাকবে না। কবরে তোমাদের মৃত ভ্রাতাদের জন্য আল্লাহকে ভয় কর, কেননা তোমাদের আমল তাদের নিকট উপস্থিত করা হবে। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেছেন, তোমাদের মন্দকার্য দ্বারা তোমাদের মৃত ব্যক্তিগণকে অপমান কর না, কেননা তা তোমাদের মন্দকার্য আপনজনদের নিকট উপস্থিত করা হয়। হযরত আবু দারদা (রা.) বলেছেন, হে মাবুদ! আমার কার্যের দরুন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা যেন অপদস্থ না হন, তা থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই। তিনি তাঁর মাতুল ছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
হযরত ইবনে আমেরকে মুমিনদের আত্মা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তারা যখন মৃত্যুবরণ করে, তাদের আত্মা কোথায় থাকে? তিনি বললেন, আল্লাহর আরশের নি¤েœ একটি শ্বেত বর্ণের পাখির উদরের মধ্যে। আর কাফিরদের আত্মা তাদের মৃত্যুর পর জমিনের সপ্ত স্তরের নি¤েœ থাকে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন, আমি হজুরে পাক (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করায়, কে বহন করে, কে তাকে কবরে স্থাপন করে, তা’সবই সে দেখতে পায়। হযরত ছালেহ মারী (রহ.) বলেছেন, আমি শুনেছি যে, মৃত্যুর সময়ে আত্মাসমূহ পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। মৃত ব্যক্তিদের আত্মা ওই আত্মাকে বলে, যে সদ্য তাদের নিকট উপস্থিত হয়, তোমার স্থান কোথায়, পবিত্র শরীর, না অপবিত্র শরীরের মধ্যে? হযরত ওবায়েদ ইবনে আমীর বলেছেন, কবরবাসীগণ সংবাদের প্রতীক্ষায় থাকে, যখন তাদের নিকট কোনো মৃত ব্যক্তি আসে, তারা বলে অমুক ব্যক্তি কী কাজ করেছে? সে বলে, আমি তোমাদের নিকট সৎকর্ম নিয়ে আসিনি। তারা বলে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং তারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। সে আমাদের পথে আসেনি।
হযরত জাফর ইবনে সাঈদ (রহ.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তার সন্তানগণ তাকে অভ্যর্থনা করার জন্য আসে যেরূপ কোনো লোক প্রবাস থেকে ফিরে এলে তাকে অভ্যর্থনা করা হয়। হযরত মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তির সন্তান ধার্মিক তার সন্তানের ধার্মিকতার সংবাদ তাকে কবরে পৌঁছানো হয়।
হযরত আইয়ুব আনছারী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুরে পাক (সা.) বলেছেন, যখন মুমিনের আত্মা বের হয়ে যায়, তা আল্লাহর নিকটবর্তী অধিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, যেরূপ দুনিয়ায় সুসংবাদদাতা কারও নিকট এসে সাক্ষাৎ করে। তারা বলে, তোমাদের ভ্রাতার দিকে লক্ষ্য কর, সে শান্তিতে আছে। এই ব্যক্তি খুবই কষ্টের মধ্যে ছিল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, অমুক ব্যক্তি কী কাজ করেছে? অমুক স্ত্রীলোক কী কাজ করেছে? অমুক রমণীর বিবাহ হয়েছে? তখন তারা তাকে এ ব্যক্তির কথা জিজ্ঞেস করে, যে তাদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছে। সে বলে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং তারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। তার আমল তাকে দোযখে নিয়ে গেছে। (অসমাপ্ত)

 



 

Show all comments
  • Md. Bellal Hosen ২০ মার্চ, ২০১৬, ৬:২৮ এএম says : 0
    মহানবী (সাঃ) এর উক্তি দেয়া হয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স দেয়া হয়নি। আর ইসলামের কোন সিদ্ধান্ত নিতে কোন (রহঃ) এর রেফারেন্স দেয়া উচিত নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সত্যালোকের সন্ধানে : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কবর দেশে জীবিত আছেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ