২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সুচিবাই বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি, খুব বেশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বা অনেক সময় নিয়ে গোছল করা। কিন্তু সুচিবাইয়ের আরো কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। যেমন- একটি বিষয় নিয়ে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা হতে থাকা এবং কোনভাবেই সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এজন্য সে অতিরিক্ত কিছু কাজ করে থাকে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে থাকে এবং খেয়াল করে দেখে যে পরিস্কার হলো কিনা। একই জিনিস বারবার গণনা করা। এ সব কাজকে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বুঝতে পারলেও সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তি নিজেকে বিরত রাখতে পারেন না।
সুচিবাই বা “অবসেশিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার” (ওসিডি) রোগে মানুষ একটা অপ্রয়োজনীয় কিছু নিয়ে অযথাই চিন্তা করে এবং তার রিএকশন দেখায় কাজের মাধ্যমে। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল এই সুচিবাই রোগ। আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছেন। এ রোগে তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সারাবিশ্বে গড়ে ২% মানুষের এই রোগ আছে অর্থাৎ পৃথিবীতে ১৭ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। বাংলাদেশের ১৮.৪ শতাংশ শিশু বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে ১.৩ শতাংশ হলো ওসিডি। সাধারণত এই সমস্যা ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই শুরু হয়। অনেকের ক্ষেত্রে শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবনের শুরুতেও সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।
এই রোগের দুটো কম্পোনেন্ট। যথা: ১) অবসেশন ও ২) কম্পালশন।
অবসেশন : একই চিন্তা, প্রতিচ্ছবি বা আবেগ যা নাকি অযৌক্তিক বা অবাস্তব তা বারবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মনে আসাকে অবসেশন বলে। রোগী তা মন থেকে তাড়াবার চেষ্টা করেও তাড়াতে পারেন না। সর্বদা মনোকষ্টে ভোগেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধু অবসেশন থাকে, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধু কম্পালশন; তবে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অবসেসন এবং কম্পালশন দুটোই দেখা যায়।
কম্পালশন : অযৌক্তিক অপ্রয়োজনীয় কাজ বারবার বাধ্যতামূলকভাবে করতে থাকাকে কম্পালশন বলে। এই কাজটা না করলে রোগীর মনে টেনশন, অ্যাংজাইটি, রেস্টলেসনেস, রাগ, বিরক্তি হয়- করলে সাময়িক স্বস্থি হয়, পরক্ষণেই আবার চিন্তা ফিরে এসে টেনশন বাড়লে আবার একই কাজ করতে হয়।
আমাদের দেশে এই সমস্যার আরো কিছু লক্ষণ দেখা যায়। অনেকেই অতিরিক্ত সাবান দিয়ে কাপড় কাচেন। কেউ কেউ লেখালেখির ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হন, যেমন- এক লাইন লেখার পর তার কাছে মনে হয়, লাইনটি ঠিক হয়নি। তখন তিনি ঐ লাইন পুরো মুছে আবার প্রথম থেকে শুরু করেন। এমনকি কম্পিউটারে কম্পোজ করার সময়ও এটা করে থাকেন। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ হয় না।
ধর্মকর্ম পালনের ক্ষেত্রে একজন ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যা অনেক সময় আরো প্রকট হয়। পাক পবিত্রতা ঠিকঠাক অর্জন হচ্ছে না মনে করে বারবার অজু করতে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, অজু করতে গিয়ে তিনি ঐ নামাজের ওয়াক্তই পার করে দিচ্ছেন। অনেকে আবার নামাজে ভুল হচ্ছে ভেবে একই নামাজ বেশ কয়েকবার পড়েন। এরপরও তিনি মনে করেন যে, তার নামাজ ভুল হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, পরিবারের লোকজন ঐ ব্যক্তির সমস্যাকে শয়তানের অসওয়াসা মনে করে তা এড়িয়ে যান।
এই রোগের সিম্পটম গুলো খুবই আজিব প্রকৃতির। যেমন বারে বারে নিজের হাত পরিস্কার করা (কারন হাতে ময়লা আছে এমন অবসেশন বার বার কাজ করে), বারে বারে নিজের পকেটে, নিজের ঘরে বা সিন্দুকের টাকা গণনা করা (কারন টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে এমন ভাবনা কাজ করে), বিছানা পরিস্কার করা, কাউকে অকারনে বার বার সন্দেহ করা , বার বার পকেট চেক করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
মজার বিষয় হলো- এই রোগী নিজেও বুঝতে পারে যে সে বার বার যেই কাজটা করছে সেটা ঠিক না। তাই সে এটাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে । কিন্তু ব্রেইন ইম্পালস তো নিজে দূর করতে পারবে না।
এই রোগের কারণ : সুনির্দিষ্ট কারণ না পাওয়া গেলেও সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যে সমস্ত তথ্য ভাবা হচ্ছে তা হলো- জন্মের সময় ব্রেনে আঘাত, হেড ইনজুরি, এনকেফেলাইটিস এবং মৃগী রোগীদের ওসিডি বেশি হয়। অনেক সময় বংশগত কারণও থাকে। সাইকোডায়নামিক থিওরি অনুযায়ী অবচেতন মনে উদ্বেগ কমানোর জন্য কতগুলো প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয় যাদের বলে ডিফেন্স মেকানিজম। নিউরোটিক ও সাইকোটিক রোগের লক্ষণ হিসেবে এই ডিফেন্স মেকানিজম প্রকাশ পায়। এই রোগীর ক্ষেত্রে কিছু ডিফেন্স মেকানিজম কাজ করে।
হোমিও সমাধান : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. হানেমান মানুষের মনস্তত্তে¡র ওপর জোর দিয়েছেন বেশি। কারণ মন খারাপ হলেই শরীরে প্রভাব পড়ে বেশি। মনস্তত্ত¡কে বাদ দিয়ে হোমিওপ্যাথিতে মানসিক রোগীকে সর্বাঙ্গীণ সুস্থ করে তোলা কঠিন। রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগের লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন করে থাকে। তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সহসাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কল্যাণ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
ইমেইলঃ [email protected]
মোবাইলঃ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।