২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মাইগ্রেন হলে তীব্র মাথাব্যথা হয় যা সাধারনত মাথার একদিকে বা পিছনের দিকে অনুভূত হয়। তবে চোখের চারপাশে হতে পারে। সাধারণভাবে এটিকে আমরা আধকপালি মাথা ব্যথাও বলি।
মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়, তবে পুরুষেরও হতে পারে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে এ রোগ শুরু হয়। মাইগ্রেন মাথা ব্যথা হলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এটি একদিকে শুরু হয়ে সারা মাথা ছড়িয়ে পড়ে। নারী ও পুরুষের এই অনুপাত ৫:১।
মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের অসহণীর মাথাব্যথা। এটি গ্রীক শব্দ ‘হেমোক্রেনিয়া’ হতে এসেছে যার অর্থ অর্ধ মাথার খুলি বা করোটি। এটি অর্ধ মাথার হয় বলে বিখ্যাত। শুরু হয় অর্ধমাথা এরপরে সারা মাথা ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাথায় স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মাথার বহিরাবরণে যে ধমনি গুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়। যাদেরা মাইগ্রেন হওয়ার প্রবনতা বেশি তাদের শব্দ, আলো ও গন্ধ সবই অসহ্য লাগে । মাথাব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে। কখনো কখনো চোখে ঝাপসাও দেখা যায়।
কেন ও কাদের বেশি হয ?
মাথার ভিতরে রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারনে মাইগ্রেন মাথা ব্যথা হয়। রক্ত চলাচল কমে গেলে চোখে অন্ধকার দেখায় তারপর হঠাৎ রক্ত চলাচল বেড়ে গেলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা অনুভূত হয়। মাইগ্রেন কেন হয় তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি । অনেক কারণেই মাইগ্রেন হতে পারে। যেমন:
১) বংশগত বা জেনেটিক
২) অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা
৩) পরিবেশের প্রভাব
৪) জন্মনিয়ন্ত্রন ঔষধ ও হরমোন
এছাড়াও আরো কিছু কারণেও হতে পারে। যেমনÑ
১. মদ্যপান, ধুমপান। ২. পনির। ৩. চকোলেট, কফি। ৪. কোমলপানীয়। ৫. প্রচন্ড শীত, অতিরিক্ত গরম। ৬. কম বা অতিরিক্ত আলোতে কাজ করা। ৭. বেশী সময় কম্পিউটার মনিটর ও টিভির সামনে থাকা। ৮. মাসিকের সময়। ৯. হঠাৎ বিপজ্জনক খবর বা আবেগ প্রবণ হলে। ১০. মোবাইলে কথা বলা বা বেশি কথা বলা। ১১. অতিরিক্ত ভ্রমন, ব্যায়াম।
আবার মাইগ্রেন রোগী কিন্তু পাশাপাশি সাইনাস প্রদাহে ভুগছে বা সর্দি কাশি বা ঠান্ডার ভূগছেন তাদের ব্যথা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবার শীতকালে কুয়াশা পরিবেষ্টিত অবস্থায় মাইগ্রেন মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।
প্রকারভেদ ও লক্ষনাবলী ঃ
মাইগ্রেন কে বেশ কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে সাধারণ ক্ল্যাসিক্যাল, ব্যাসিলার আর্টারি, অপথেলমোপ্লেজিক, হেমিপ্লেজিক ও ফেমিওপ্লেজিক মাইগ্রেন ইত্যাদি। এদের মধ্যে কমন ও ক্ল্যাসিক্যাল মাইগ্রেনই বেশী দেখা যায়।
সাধারণ মাইগ্রেন
সাধারণ মাইগ্রেনই বেশী দেখা যায়। এই ব্যথা ৪Ñ৭২ ঘন্টা ব্যাপী হয়। সাধারণ মাইগ্রেণে নি¤œলিখিত লক্ষণাবলী লক্ষণীয় হতে পারেÑ
১. অর্ধেক মাথায় ব্যথা
২. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
৩. দপদপ বা চিনচিন করে মাথা ব্যথা।
৪. শব্দ ও আলো ভীতি।
৫. এ ধরণের মাথা ব্যাথায় কানের উপরে চাপ দিলে, কপাল টিপলে ও মাথার চুল টানলে আরাম বোধ হয়।
ক্ল্যাসিক্যাল মাইগ্রেন
এটিও বেশী দেখা যায়। প্রথম পর্যায়ে চোখের সামনে আলো ঝলকানী ও চোখ ঝাপসা হতে পারে। হাত, পা ও মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে ব্যথা অনুভূতিসহ শরীরের একপাশে দূর্বলতা ও অবশ হতে পারে এরপর প্রচন্ড ভাবে মাথা ব্যথা শুরু হয়। প্রথমে এক পাশ হতে শুরু হয়ে মাথায় সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর দপদপে মাথাব্যথা, শরীরে প্রচুর ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার সাথে সাথে শরীর অত্যন্ত দূর্বল করে ফেলে।
কখনো কখনো চোখের দৃষ্টির সমস্যা নিয়ে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তখন অবশ্য মাথা ব্যথা নাও থাকতে পারে।
লক্ষ করতে হবে দৃষ্টির সময় ১ ঘন্টার বেশী স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয় ব্রেইন বা চোখের অন্যাান্য সমস্যা হতে পারে।
ব্যাসিলার আর্টারি মাইগ্রেন
এ ধরণের মাথা ব্যথা মাথার পেছন দিক হতে শুরু হয়। এতে মাথাঘোরা ভাবও থাকতে পারে।
অপথেলমোপ্লেজিক মাইগ্রেন
এ ধরণের মাথা ব্যথায় চোখের উপরিভাগ হতে শুরু করে মাথার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ঝাপসা দেখে। আলোর প্রতি তাকাতে পারে না ফলে অন্ধকার ঘরেই থাকতে ভালবাসে।
হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন
এ মাথা ব্যথায় শরীর অবশ হয়ে যায়। এ ধরণের ব্যথা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার পূর্বের লক্ষণাবলী
মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা পূর্ব হতে কয়েক দিন পূর্বে ও অবস্থাতে হতে পারে। এ সময় মানসিক ও ¯œায়বিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে। এ সময় রোগী খিটখিটে, অতি উৎসাহী, শান্ত ধীরগতি, বিষন্ন, উল্লসিত, ঝিমুনি, অতি সচেতন ভাব হতে পারে। অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এ লক্ষণ গুলি আমরা হয়ত এড়িয়ে চলি। তবে এগুলো শনাক্ত করে অতিদ্রুত চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
মাইগ্রেন মাথা ব্যথার পরে লক্ষণাবলী
মাথা ব্যথা শেষ হওয়ায় পর রোগী অত্যন্ত ক্লান্ত ও দূর্বলতা বোধ করে। ক্ষুধামান্দা ও মনোরোগের সমস্যা হতে পারে।
কিভাবে হয়
বিশেষজ্ঞরা এই মাথা ব্যথার জন্য একটি হরমোনকে দায়ী করেছেন, সেটি হলো সেরোটোনিন। মেকানিক্যাল কারণে বহিঃমস্তিষ্কের ধমনীগুলোর প্রসারণ ঘটে। তবে সেরোটোনিন ও মেকানিক্যাল কারণে যখন কোষ গুলোর উদ্দীপিত হতে থাকে, তখনই ব্যথা অনুভূত হয়।
রোগ শনাক্তকরণ
এ রোগে সাধারণত রোগীর দেওয়া উপসর্গ ভিত্তিতেই শনাক্ত করা যায়। তবে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাইনাসের প্রয়োজনীয় এক্স-রে, চোখ পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করা যেতে পারে।
কি ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন?
চা, কফি, কোমলপানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, দুধ, দই, মাখন খাবেন না।
টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না।
গম জাতীয় খাবার যেমনÑ রুটি, পাস্তা ও ব্রেড ইত্যাদি এড়িয়ে চলবেন।
আপেল, কলা ও চিনাবাদাম খাবেন না।
পেঁয়াজ খাবেন না।
ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা হতে পারে। তাই যে খাবার খেলে সমস্যা হচ্ছে সেটি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
কোন কোন খাবার খাবেন
১. সবুজ, হলুদ ও কমলা রংয়ের শাকসব্জী, ফলমূল খাবেন।
২. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
৩. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
৪. গ্রিন টি, আদার রস খাবেন।
৫. খেজুর ও ডুমুর জাতীয় খাবার খাবেন।
মাইগ্রেন হতে মুক্তি পেতে কি করবেন
১. দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা যাবে না।
২. রোগীকে প্রত্যহ অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যাবশ্যকীয়।
৩. মদ, ধুমপান পরিহার করতে হবে।
৪. জন্ম বিরতিকরণ পিল ব্যবহার না করে অন্য কোন উপযোগী পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
৫. অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. তীব্র ঠান্ডা ও কড়া রোদ দুটোই এড়িয়ে চলতে হবে।
৭. কোলাহলপূর্ণ এলাকা, উচ্চশব্দ এড়িয়ে চলতে হবে।
৮. দীর্ঘ ভ্রমণ, মানসিক চাপ ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে।
৯. দীর্ঘক্ষণ টিভি ও কম্পিউটারের সামনে না থাকা। বেশী পরিমাণ পান পান করা।
নিজে নিজে ব্যথা কমাতে যা করবেন
বমি বমি ভাব কাটাতে ১ টুকরা আদা মুখে দিন ব্যথা অনেকটা লাঘর হবে।
মাথা ব্যথা বেশী হলে বরফের টুকরা একটা আইসব্যাগে নিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে দিয়ে রাখুন তাতেও ব্যথা কমে যাবে।
গ্রীন টি এর সাথে আদা কুঁচি ও লেবু দেওয়া হলে ব্যথার প্রকোপ অনেকটাই কমে আসবে।
অতিরিক্ত আলোময় স্থানে না থেকে ঘর অন্ধকার করে ঘুমিয়ে নিন। এতে ব্যথা অনেকটাই কমে আসবে।
আরামদায়ক ভাবে বসে বা শুয়ে নাক দিয়ে বড় করে শ্বাস নিন, আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে ছাড়–ন। এভাবে ৫ থেকে ১০ বার গভীর শ্বাস নিলে শরীর হালকা হয়ে যাবে। রেহাই পাবেন মাইগ্রেনের মতো তীব্র যন্ত্রণা থেকে।
চিকিৎসা
চিকিৎসা মানেই ঔষধ নয়। দরকার নিয়ম মেনে চলা ও সচেতন হওয়া। মনে রাখা উচিত সব মাথা ব্যথাই কিন্তু মাইগ্রেন নয়। মাথার টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ দৃষ্টি স্বল্পতার কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। হোমিওপ্যাথিক লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই সঠিক লক্ষণের প্রতি মনোযোগ দিলেই ভালো চিকিৎসা করা সম্ভব। হোমিও মতে লক্ষনভেদে বিভিন্ন ঔষধ প্রয়োগ করে মাইগ্রেন এর মতো তীব্র যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওযা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগের আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালটেন্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, সিটি করপোরেশন মার্কেট, নিমতলী, চাঁনখারপুর, ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৯৭২৮৯৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।