Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদ্যাভ্যাস-স্থূলতা ও ডায়াবেটিস

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সারা বিশে^ ডায়াবেটিস এখন একটি বড় সমস্যা। ডায়াবেটিস হলে ওষুধের পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে শরীরের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো শরীরের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে। এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো প্রতিদিন খাওয়া প্রাকৃতিকভাবেই ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক অন্যতম। পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিক আক্রান্ত লোক মারা যায় এবং প্রতি ১০ সেকেন্ডে দুইজন ডায়াবেটিক রোগী সনাক্ত করা হয়। তাই ডায়াবেটিকসের ভয়াবহতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়ামসহ নানাভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর সেটিও হতে হবে পরিমাণমতো। তাই টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় খাদ্যাভ্যাস জীবনযাত্রার পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ওজন কামানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো। ৭০-৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অকালমৃত্যু রুখে দিতে পারেন। আমরা ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।

মাত্রাতিরিক্ত ওজন শুধু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না করোনারি হার্ট ডিজিজ (হৃদরোগের) ঝুঁকিও বাড়ায় । প্রাপ্তবয়সে ওজন বৃদ্ধি, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অন্য দিকে মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তের শর্করা ও চর্বির মাত্রা কমানো এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা আছে। পাশাপাশি ওজন কমানো, ধূমপান নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক ব্যায়াম খুবই জরুরি। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, স্থূলতা, ডায়াবেটিস-২ ও উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বির উচ্চ মাত্রাসম্পন্ন রোগীদের ওজন ১০ শতাংশের কাছাকাছি কামানো হলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আসে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা অনাক্রান্ত উভয়য়েই ওজন কমানোর সুফল পাবেন। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, মাত্রারিক্ত ওজন হ্রাসের মাধ্যমে দীর্ঘ দিন সুস্থ থাকা যায়। যাদের বিএমআই ২৬-এর ওপরে, তারা যারা হালকা-পাতলা ধরনের অর্থাৎ যাদের বিএমআই ২৬-এর নিচে তাদের থেকে স্থূলতা ও নানাবিধ অসুবিধায় ভুগছে। ওজন কমানোর মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি কমে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত একজন ব্যক্তির ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে যে, তার ওজন হ্রাস কি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত। একজন ডায়াবেটিস ও স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তির ওজন কমতে শুরু করলেই উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। আগে বুঝতে হবে যে ওজন হ্রাস কি অনিচ্ছাকৃত না ইচ্ছাকৃত। ইচ্ছাকৃত ওজন হ্রাসে রোগী উপকৃত হবেন। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস ইঙ্গিত করে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের। ইনসুলিন ও মালপোনিল ইউরিয়েসও ওজন বৃদ্ধি করে। ওয়েট সাইক্লিং অর্থাৎ ওজন বৃদ্ধি ও ওজন হ্রাসের চক্র করোনারি হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। স্থূলকায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাঝারি মাত্রার ওজন হ্রাসই টার্গেট করা উচিত। বিশেষত যেখানে উচ্চমাত্রার ওজন হ্রাস করা এবং একে ধরে রাখা কঠিন।

যেহেতু একজন মানুষের দেহের ওজন নির্ভর করে তার ক্যালরি গ্রহণ ও সেই খাদ্যের কতটুকু সে দৈনিক শারীরিক কার্যক্রমে ব্যবহার করে তার ওপর। কাজেই একজন স্থূলকায় ব্যক্তি তার ওজন কমাতে চাইলে তার ২৪ ঘণ্টার ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে এবং এটা করা যায় খাদ্য গ্রহণ কমানোর মাধ্যমে অথবা শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে ২৫০-৫০০ ক্যালরি কমালে ইনসুলিনের কার্যকরিতা বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু দ্রুত ওজন কামানো হলে চর্বি কমার পরিবর্তে মাংসপেশি ধংসপ্রাপ্ত হয়। এজন্যই সপ্তাহে দুই কেজির অতিরিক্ত ওজন কামানো উচিত নয়। খাদ্যে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে ওজন কমানো একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। যা হোক দীর্ঘমেয়াদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, শুধু খাদ্যে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে সন্তোষজনকভাবে সাধারণ লোকের ওজন কামানো সম্ভব হয়নি।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস-২ রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য অল্প ক্যালোরিযুক্ত নিয়ন্ত্রিত খাদ্যে শর্করা ও চর্বির ভূমিকা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। মি. লো এবং তার সহযোগীরা ১৭ জন স্থূলকায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ওপর গবেষণা চালান। তাদের দুইভাগে বিভক্ত করে এক গ্রুপকে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট (৭০%) খাবার ও অন্য গ্রুপকে উচ্চমাত্রার মনো-আনস্যাটুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার দেয়া হয়। কিন্তু তাদের খাদ্যের সর্বমোট ক্যালোরির পরিমাণ ৫০ শতাংশ কামানো হয়। এ ধরনের খাবারে তাদের ছয় সপ্তাহ রাখা হয়। ছয় সপ্তাহ পরে দেখা যায়, উভয় গ্রুপেই সমপরিমাণ ওজন কমেছে এবং যারা অতিরিক্তি মনো আনস্যাটুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়েছেন তাদের রক্তের সুগার যারা খালি পেটে উচ্চমাত্রায় শর্করাযুক্ত খাবার খেয়েছেন তাদের চেয়ে বেশি কমেছে। অপর একটি গবেষণায় দেহের ওজনের ওপর খাদ্যের বিভিন্ন উপদানের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। এই গবেষণায় স্থূলকায় ব্যক্তিদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের খাদ্য উপাদানে ভিন্ন ভিন্ন করা হয় এবং দেখা যায় যে প্রকৃতপক্ষে কম ক্যালোরি গ্রহণেই ওজন কমে। রক্তে শর্করার মাত্রাও কমে। তাই পরিমিত ও নিয়মিত আহার, শারীরিক ব্যায়াম, বিশ্রাম, নিদ্রা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->