পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ১৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় জেলার পুলিশ সুপারকে উচ্চ আদালত তলব করে। গত সোমবার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় আদালত মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, দেশকে পুলিশি রাষ্ট্র বানাবেন না। কে কোন মতাদর্শের, কোন দলের সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। সর্বস্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না, আদালত পুলিশ সুপারের অসৌজন্যমূলক আচরণকে উপলক্ষ করে পুরো পুলিশ বাহিনীর প্রতিই এই উপদেশমূলক মন্তব্য করেছেন। একশ্রেণীর পুলিশের অপকর্ম ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে যে পুরো বাহিনীর বদনাম হয়, তাই আদালতের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুলিশ বিভাগ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সব মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে দেশে দেশে পুলিশের কর্ম পরিধি ও দায়-দায়িত্বও বেড়ে চলেছে। করোনা মহামারীর সময়ে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যকে নিরলস, অকুতোভয় জনদরদী ভূমিকায় দেখা গেছে। পুলিশের এমন ভূমিকা জনসাধারণের মাঝে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। মূলত: পুলিশের ভূমিকা এটাই হওয়ার কথা। মানুষের সেবক হয়ে পাশে থাকা। তবে এ বাহিনীরই কিছু অসাধু সদস্যের অপকর্ম ও অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার কারণে এ বাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। অথচ আইজিপি এ বাহিনীর ভাবমর্যাদা রক্ষা এবং পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এজন্য শুদ্ধি অভিযানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে, একজন পুলিশ সুপারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক।
জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য ধনী-গরিব সব মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পুলিশের বেতন হয়। তাদের কাজই হচ্ছে, জনগণের সেবা করা। বন্ধুর মতো পাশে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেখা যাচ্ছে, এক শ্রেণীর পুলিশ অফিসার শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। নিজেদেরকে দেশের রাজা ভেবে সাধারণ মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ যেমন করছে, তেমনি নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতি বছর অসংখ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠতে দেখা যায়। যাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে বিভাগীয় শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। যারা বিভাগীয় শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই গুরুপাপে লঘু দন্ডে পার পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই পুলিশ বিভাগের অপরাধ প্রবণ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন দেশের নাগরিক সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কুষ্টিয়ার এসপি তানভির আরাফাত একজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য আদালতে তলবের সম্মুখীন হয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ না করলে তাকে হয়তো এ ধরণের ক্ষমা প্রার্থনা বা জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো না। অথচ উচিৎ ছিল এ ঘটনার সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসপি তানভির আরাফাতের মত আরো অনেক অপেশাদার মনোভাবাপন্ন পুলিশ অফিসার রয়েছেন, তাদেরকে সতর্ক ও সংশোধন করার দায়িত্বও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।
একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের বেপরোয়া ও অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং দুর্নীতির কারণে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারা পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যা খুশি তা করে বেড়ায়। অথচ তারা এটা ভাবে না, তারা ‘জনগণের চাকর’। জনসেবাই তাদের মূল কাজ। এই কথা ভুলে এই শ্রেণীটি নিজেদের সর্বেসর্বা ভেবে নান অপকর্ম করে চলেছে। বর্তমান আইজিপি পুলিশকে একটি জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত করার জন্য নানা সংস্কারমূলক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ পুলিশের কেউ কেউ আমলে না নিয়েই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে মানুষ কার কাছে প্রতিকার চাইবে? আমরা মনে করি, পুলিশকে পুলিশের আচরণবিধি এবং শৃঙ্খলা মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। পুলিশের মধ্যে ধৈর্য্য, সহনশীলতা এবং মানুষের সেবার নীতি-নৈতিকতার মনোভাব আরো জোরালো করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। উচ্চ আদালত যে মন্তব্য করছে, পুলিশ বাহিনীকে তা উপলব্ধি করতে হবে। এ মন্তব্য যথোপযুক্ত এবং সব সময়ের জন্যই প্রযোজ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।